কেকেআরের এবার অন্যতম ভরসা হতে চলেছেন তিনি। মাস কয়েক আগে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতের বিরুদ্ধে যে ইনিংসটা খেলেছিলেন, সেটা বহুদিন মনে রেখে দেবেন ক্রিকেটপ্রেমীরা। বেগুনি জার্সিতেও তাঁর একইরকম বিধ্বংসী ইনিংস দেখতে চাইছে নাইট-ভক্তরা। কেকেআরে যোগ দেওয়ার আগে বাংলাদেশ থেকে সংবাদ প্রতিদিনকে একান্ত সাক্ষাৎকার দিলেন লিটন দাস। শুনলেন রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায়।
প্রশ্ন: লিটন, এবারই আপনার প্রথম আইপিএল। আর প্রথমেই কেকেআর, ইডেন গার্ডেন্স আপনার হোম গ্রাউন্ড। ভাবলে উত্তেজিত লাগছে?
লিটন: নিঃসন্দেহে এটা আমার কাছে একটা বিশাল সুযোগ। একজন বাঙালি হিসেবে কলকাতায় খেলব, এর চেয়ে ভাল আর কী হতে পারে বলুন?
প্রশ্ন: নিলামের মুহূর্তটা মনে পড়ে? কেকেআর যখন আপনাকে নিল?
লিটন: খুবই ভাল লাগছিল। দেখুন, আইপিএলে ডাক পাচ্ছি, এটাই অনেক বড় ব্যাপার। তার উপর কলকাতার মতো টিম। কলকাতা যেতে আমার বরাবর ভাল লাগে। আমি বাংলায় কথা বলি। কলকাতার মানুষও বাংলায় কথা বলেন।
প্রশ্ন: একটা কথা বলুন। আপনার কোথাও গিয়ে মনে হয় যে, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতের বিরুদ্ধে খেলা বিস্ফোরক ইনিংসের প্রভাব পড়েছিল নিলামে? টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শেষের এক মাসের মধ্যে আইপিএল নিলাম ছিল।
লিটন: নিশ্চিত করে বলতে পারব না, ওই একটা ইনিংসের জন্যই হয়েছে কি না? কিন্তু ফ্র্যাঞ্চাইজি ও ভাবে ভাবলে, হতেও পারে। আসলে মঞ্চটা ছিল বিশ্বকাপ। ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ। তবে আমার চেয়েও বেটার বলতে পারবে কেকেআর, যারা আমাকে নিয়েছে।
প্রশ্ন: আপনার টিমে সাকিব-আল-হাসান আছেন। আন্দ্রে রাসেল, সুনীল নারিন আছেন। সাকিবের সঙ্গে জাতীয় দলে খেলেন আপনি। কতটা সুবিধে হবে? দ্বিতীয়ত, এ বছরই বছর শেষে ভারতের মাটিতে ওয়ান ডে বিশ্বকাপ আছে। আবার সামনের বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। আইপিএল সুবিধে করে দেবে তো?
লিটন: সাকিব আমার জাতীয় দলের সতীর্থ। আর আন্দ্রে রাসেল বা সুনীল নারিন, ওদের সঙ্গেও আমি খেলেছি বহু দিন। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে আমি যে ফ্র্যাঞ্চাইজিতে খেলি, রাসেল-নারিনও খেলে। আমাদের মধ্যে ভাল একটা বন্ডিং আছে। একাত্মতা আছে। আর আইপিএলের মতো মঞ্চে খেলতে পারলে, তাতে আমার ভবিষ্যতেও লাভ প্রচুর। দ্বিতীয়ত, বিশ্বকাপ ভারত খেলা যখন, তাই আইপিএলের পুরোটা যদি খেলতে পারি আমি, মাঠগুলো সম্পর্কে একটা সম্যক ধারণা হয়ে যাবে। পিচ সম্পর্কে ধারণা পেয়ে যাব।
[আরও পড়ুন: নতুন জার্সি উন্মোচনের দিনই নাইট শিবিরে ফের ধাক্কা, এবার অনিশ্চিত এই তারকা পেসার]
প্রশ্ন: একটা কথা বলুন। শ্রেয়স আইয়ারকে কেকেআর পাবে কি না, এখনও নিশ্চিত নয়। আপনার দায়িত্ব তো তাতে আরও বাড়বে। টপ অর্ডার সামলাতে হবে।
লিটন: শ্রেয়স নিয়ে বিশেষ কিছু জানি না। আমি এই মুহূর্তে বাংলাদেশে। জাতীয় দলের হয়ে খেলছি। আইপিএল নিয়ে চিন্তিত নই। কারণ, দেশের হয়ে খেলা সব সময় আগে। এটুকু বলতে পারি, সুযোগ পেলে একশো শতাংশ দেওয়ার চেষ্টা করব।
প্রশ্ন: কিন্তু টুর্নামেন্ট শুরুর সাত দিন আগেও অধিনায়ক নির্বাচন করা যাচ্ছে না, এই অস্থিরতায় তো লাভ কিছু হবে না।
লিটন: বললাম তো, আমি এখন বাংলাদেশে। কেকেআরে যোগ দিইনি। তাই এটা নিয়ে মন্তব্য করতে চাই না।
প্রশ্ন: লিটন, গতবার উইকেটকিপিং প্রবল ভুগিয়েছে কেকেআরকে। একজন কিপারকে বোলার্স ক্যাপ্টেনও বলা হয়। প্লাস, টপ অর্ডারে আপনি গেলে রান প্রত্যাশা করবে লোকে। এ হেন একাধিক চাপ কী ভাবে সামলাবেন, ভেবেছেন?
লিটন: আমি নতুন তো ক্রিকেট খেলছি না। দেশের হয়ে যখন খেলি, একই তো কাজ করি। সুযোগ পেলে যা অভিজ্ঞতা আছে আমার, তা দিয়ে সাহায্য করব টিমকে।
প্রশ্ন: নিজের ব্যাটিং নিয়ে একটু বলুন। আপনাকে তো থামানোই যাচ্ছে না। সেরা ফর্ম চলছে লিটন দাসের? ইংল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড–সমস্ত প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে তো রান করছেন। আপনার কি পার্পল প্যাচ চলছে না?
লিটন: কোনও প্লেয়ার কি বলতে পারে যে, তার পার্পল প্যাচ চলছে? তার মানে কী, রান করা? দু’দিন আগেও তো আমার খারাপ গিয়েছে। এ সমস্ত নিয়ে ভাবি না আমি। পার্পল প্যাচ-ট্যাচ নিয়ে ভাবি না। প্রতিটা দিন আমার কাছে নতুন দিন, নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ।
প্রশ্ন: বুঝলাম। শেষ প্রশ্ন। শ্রেয়স নিয়ে সংশয় থাকলেও কেকেআরের টিম এবার বেশ ভাল। আপনি, লকি, সাকিব, গুরবাজ, শার্দূলরা এসেছেন। ন’বছর চ্যাম্পিয়ন হয়নি টিমটা। এবার জেতার সম্ভাবনা আছে?
লিটন: কেকেআরে এবারই আমার প্রথম। প্রথম লক্ষ্য, টিমটাকে প্লে অফে নিয়ে যাওয়া। আমাদের প্রত্যেকের তাই ভাবনা যে কী ভাবে পরের পর্বে যাওয়া যায়। দেখুন, চ্যাম্পিয়ন কে হবে, কেউ বলতে পারে না। তাই আগে প্লে অফ যেতে হবে আমাদের।