স্টাফ রিপোর্টার: এই ছিল পাঁচ। মুহূর্তে হয়ে গেল এগারো। রাজ্যে ক্রমশ বাড়ছে ওমিক্রন আক্রান্ত। শঙ্কিত চিকিৎসকরা। বড়দিনেও যা ছিল মাত্র ৫৫২। নতুন বছরের শুরুতেই তা ছাড়িয়ে যেতে পারে হাজারের গণ্ডি।
বাংলায় কার্ল লুইসের গতিতে ছুটছে করোনা সংক্রমণ (Coronavirus)। এমন একটা সময় সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী, আর উৎসবের মেজাজে গোটা বাংলা। বড়দিন পেরিয়ে নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। চিকিৎসকরা বলছেন, আর হুড়োহুড়ি নয়। রাজ্যের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ প্রবীণ চিকিৎসক ডা. সুকুমার মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, বড়দিনে পার্ক স্ট্রিটের যে ছবি সামনে এসেছে তা মর্মান্তিক। বর্ষশেষের রাতে সমস্ত পার্টি, সেলিব্রেশন মুলতুবি রাখার আবেদন জানিয়েছেন তিনি।
করোনা দ্রুত শনাক্ত হলেও ওমিক্রনের (Omicron) হদিশ পেতে সময় লাগছে। আরটি-পিসিআর (RT-PCR) রিপোর্ট পজিটিভ আসার পর লালারস জেনোম সিকোয়েন্সিংয়ের জন্য পাঠাতে হচ্ছে। রিপোর্ট আসতে লেগে যাচ্ছে ৭২ ঘণ্টা। তার মধ্যেই আক্রান্ত ব্যক্তির থেকে অনেকের মধ্যে অসুখ ছড়াচ্ছে। নতুন ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টে ৩২ বার স্পাইক প্রোটিনের জিনগত কাঠামোয় বদল হয়েছে। জিনের প্রোটিন মধ্যস্থ অ্যামাইনো অ্যাসিডের স্থান বদল হয়েছে ৩২ বার। ফিউরিন (একটি প্রোটিয়েজ উৎসেচক) ক্লিভেজ সাইটেও মিউটেশন হয়েছে তিনবার। অর্থাৎ ব্যাপক চরিত্র বদলেছে ভাইরাস।
[আরও পড়ুন: কো-মর্বিডিটি থাকায় করোনা আক্রান্ত সৌরভের চিকিৎসায় ককটেল অ্যান্টিবডি, কী এই পদ্ধতি?]
এখনও অনেকেই গায়ে হাওয়া লাগিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। ভাবছেন, বাড়ুক না আক্রান্তের সংখ্যা। মৃত্যু তো হবে না। আমজনতার এমন চিন্তাতেই আশঙ্কার কালো মেঘ দেখছেন চিকিৎসকরা। ডা. সুকুমার মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, “প্রচুর মানুষের কো-মর্বিডিটি রয়েছে। রাজ্যে শ্বাসকষ্টের রোগীর সংখ্যাটা নেহাত কম নয়। আমাদের মাথায় রাখতে হবে অক্সিজেনের জোগান কিন্তু অফুরন্ত নয়। প্রতিটি হাসপাতালের বেড যেদিন ভরতি হয়ে যাবে, স্বাভাবিক নিয়মেই বিপদ ঘনাবে।”
ভাইরাসের যে অংশটি প্রথম মানুষের দেহকোষের সঙ্গে সংযোগ ঘটায়, তার নাম রিসেপ্টার বাইন্ডিং ডোমেন। ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট সেই রিসেপ্টার বাইন্ডিং ডোমেনে মিউটেশন ঘটিয়েছে দশবার। সেই তুলনায় করোনার ডেল্টা (Delta) ভ্যারিয়েন্টে এই পরিবর্তন হয়েছিল মাত্র দু’বার। এখনও যাঁরা টিকা নেননি, তাঁদের কথা ভেবে চিন্তায় এসএসকেএম হাসপাতালের সার্জন ডা. দীপ্তেন্দ্র সরকার জানিয়েছেন, এখুনি সতর্ক না হলে মুশকিল। এই শীতই হতে পারে অন্তিম। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (CM Mamata Banerjee) ইঙ্গিত দিয়েছেন, ফের সংক্রমণ মাথাচাড়া দিলে স্কুল-কলেজ বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া উপায় নেই। এমনকী বেসরকারি অফিসে প্রয়োজনে ফের ৫০ শতাংশ উপস্থিতি চালু করতে হবে। এ বিষয়ে একমত চিকিৎসকরা। ডা. দীপ্তেন্দ্র সরকারের বক্তব্য, ভিড় এড়িয়ে চলুন। মানতে হবে শারীরিক দূরত্ব। নয়তো আগামীতে মারাত্মক বিপদ।