শুভময় মণ্ডল: এক, দুই নয়। একেবারে ৩০ ফুটের প্রতিমা। পেল্লায় সাইজের ঠাকুরের হাতে ৬ ফুটের খাঁড়া। ২২ কেজি ওজনের নিরেট রুপোর। আর আভরণ? জিভ থেকে শুরু করে করে কানের দুল, নাকের নথ সবই খাঁটি সোনা ও রুপোর। সবমিলিয়ে ঐতিহ্যে ও আভিজাত্যে আজও অমলিন উত্তর কলকাতার পাথুরিয়াঘাটা সর্বজনীন কালীপুজো। মহান বিপ্লবী বাঘাযতীনের হাত দিয়ে এই পুজোর শুরু। তারপর একে একে আরও মহান নাম যুক্ত হয়েছে পাথুরিয়াঘাটার ‘বড় কালী’র সঙ্গে। নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু, ভূপেন বোস, মহারাজা মণীন্দ্রচন্দ্র, মহারাজা শ্রীশচন্দ্রের মতো মহান ব্যক্তিত্বদের স্মৃতিধন্য এই কালীপুজো এবার ৯২তম বর্ষে পা রাখল। পাথুরিয়াঘাটা ব্যায়াম সমিতি পরিচালিত এই বারোয়ারি পুজো নামেই সর্বজনীন। বনেদি বাড়ির পুজোর মতোই এর রীতি-আচার। পুজোর শুরু থেকে শেষ, সবকিছুতেই অবাক করার মতো উপাদান রয়েছে।
[অমাবস্যা ছাড়া যে কোনওদিন আপনার হাতেও পুজো নেবেন এই ‘বড় মা’]
১৯২৮ সালে পুজোর শুরু করেন পাথুরিয়াঘাটা ব্যায়াম সমিতির প্রতিষ্ঠাতা বিপ্লবী বাঘাযতীন। ১৯৩০ সালে এই পুজোর সভাপতিত্ব করেন নেতাজি। কলকাতার সবচেয়ে প্রাচীন বারোয়ারি কালীপুজো এটি। মায়ের রুপোর খাঁড়া দান করেছিলেন নরেণ পোদ্দার। রীতি মেনে পুজোর দিন আড়াই ফুটের একটি রুপোর মঙ্গলঘটে করে গঙ্গা থেকে জল আনা হয়। বিসর্জনের দিন আরও আশ্চর্য জিনিস হয়। পুজোর পুরুষ সদস্যরা ধুতি-পাঞ্জাবি ও মহিলারা আটপৌড়ে লালপেড়ে সাদা শাড়ি পরে শোভাযাত্রায় অংশ নেন। এবং প্রত্যেকেই খালি পায়ে হাঁটেন। পুজোর পরের দিন দেখার মতো এদের অন্নকূট উৎসব। প্রায় তিন থেকে চার হাজার মানুষ পাতপেড়ে খান এখানে। মঙ্গলারতি দেখতে জড়ো হন প্রচুর মানুষ। মায়ের উদ্দেশে ৫৬ ভোগ নিবেদিত হয়।
[কলকাতার প্রাচীন কালীবাড়ি গুলির অজানা ইতিহাস, আজ শেষ পর্ব]
ইতিহাসসমৃদ্ধ এই কালীপুজো নিয়ে পাথুরিয়াঘাটা অঞ্চলে উৎসাহ-উদ্দীপনার শেষ নেই। বারোয়ারি হলেও স্থানীয়রা বেশ ভক্তি-শ্রদ্ধা করেন বড় কালীর। এত বড় প্রতিমা বিসর্জনের সময় কম ঝক্কি পোহাতে হয় না উদ্যোক্তাদের। তবে স্থানীয় মানুষ ও পুলিশ-প্রশাসনের সহযোগিতায় নির্বিঘ্নেই মেটে সব। জৌলুসে শহরের অন্যান্য পুজোগুলিকেও সমান টক্কর দেয় পাথুরিয়াঘাটা সর্বজনীন।
The post ঐতিহ্য ও আভিজাত্যে আজও অমলিন পাথুরিয়াঘাটা সর্বজনীনের কালীপুজো appeared first on Sangbad Pratidin.