গোবিন্দ রায়: ভাইফোঁটার (Bhai Phota) দিন ভাইয়ের জন্য অধীর আগ্রহে বসেছিলেন দিদি। কিন্তু ভাই আর ফিরল না ঘরে। যমের দুয়ারে কাঁটাও পড়ল না আর। ভাইফোঁটার সকালে মর্মান্তিক পথদুর্ঘটনার বলি হল বছর পঁচিশের যুবক। সাতসকালে বাঘাযতীন উড়ালপুলে (Baghajatin Flyover) বাসের ধাক্কায় নিউ গড়িয়ার সাহাপাড়ার বাসিন্দা শুভজিত সুরের মৃত্যু এক লহমায় মুছে দিয়েছে পরিবারের সমস্ত আশা। পুরুষশূন্য পরিবার এখন কীভাবে বেঁচে থাকবেন, সেই চিন্তায় আকুল।
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, শুভজিৎ সবেমাত্র সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং (Civil Engineer) পাশ করেছিলেন। চাকরির চেষ্টা একের পর এক ইন্টারভিউতে বসছিলেন। অপেক্ষা করছিলেন, কবে একটা চাকরি পেয়ে পরিবারের যোগ্য ভরসার পাত্র হয়ে উঠতে পারেন। শুভজিতের জেঠু অসুস্থ হয়ে কলকাতারই একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। শনিবার সকালে তাঁকে দেখতে হাসপাতালে যাচ্ছিলেন শুভজিত। পথেই তাঁকে পিষে দিয়ে চলে গেল বাস। ঝরে পড়ল তরতাজা একটি প্রাণ।
এদিন হাসপাতালে বসে একনাগাড়ে কাঁদছিলেন শুভজিতের দিদি। তাঁদের বাবার মৃত্যু হয়েছিল অনেক বছর আগে। বাবার পেনশনের টাকায় সংসার চলত। বছর দেড়েক আগে শুভজিতের দিদির বিয়ে হয়। শুভজিত সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করার পর পরিবার কিছুটা আশার আলো দেখছিল। ভাই বিভিন্ন ক্যাম্পাসিংয়ে অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল, চাকরির জন্য আপ্রাণ চেষ্টা ছিল, এমনই জানাচ্ছেন দিদি। এসবের মাঝেই এমন বিপর্যয় নেমে আসবে ভাবতে পারেননি কেউই।
[আরও পডুন: চিংড়িঘাটায় মর্মান্তিক দুর্ঘটনা, পরপর ছয় পথচারীকে পিষল বেপরোয়া গাড়ি, মৃত এক]
ভাইফোঁটার দিনই ভাইকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ শুভজিতের দিদি। কথা বলার মতোও পরিস্থিতি নেই তিনি। শুধু একটাই কথা বলছে, “আমরা ভেসে গেলাম। বাবা চলে যাওয়ার পর ছোটো ভাইটার মুখের দিকে তাকিয়েই মা বেঁচে ছিল। মায়ের কী হবে? মাকে কী বলব?” শুধু এই ভাইফোঁটা কেন, আর কোনওদিন কোনও ভাইফোঁটাতেই ভাই আর আসবে না। একথা বিশ্বাস করতেই পারছেন না দিদি। পুলিশ জানিয়েছে, দুর্ঘটনার সঠিক কারণ জানতে ঘাতক বাসটির ব্রেক এবং অন্যান্য যন্ত্রাংশ পরীক্ষা করে দেখা হবে। পাশাপাশি, ঘটনায় সত্যতা যাচাইয়ে পূর্ব যাদবপুর ট্রাফিক (Traffic) গার্ডের আধিকারিকরা ওই এলাকার সব সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখছেন।