সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ভাষা দিবসে চলে গেলেন বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের অন্যতম গবেষক অশ্রুকুমার শিকদার। মূলত রবীন্দ্র গবেষক হিসেবেই তিনি বাংলা সাহিত্যের জগতে বিখ্যাত। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচনার ওপর আজীবন চর্চা করে গিয়েছেন তিনি। এনিয়ে তাঁর অজস্র বই রয়েছে। পরবর্তী সময়ে অবশ্য নিজের লেখাও প্রকাশ করেন। রবীন্দ্র সাহিত্যের বিভিন্ন ধারাকে সাধারণ মানুষের আরও কাছে পৌঁছে দিতে অশ্রুকুমার শিকদারের লেখা এককথায় ছিল অনবদ্য। জীবনভর বাংলা সাহিত্য চর্চার সেসব অমূল্য সম্পদ রেখে ৮৭ বছর বয়সে চলে গেলেন তিনি।
[ভারত ও ইন্দোনেশিয়ার সনাতনী ঐতিহ্যের সংমিশ্রণ এবার তিলোত্তমায়]
পড়াশোনায় বরাবরের মেধাবী ব্যক্তি অনেক কম বয়সেই কবিগুরুর রচনার সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত করে নিয়েছিলেন। কলেজ পেরিয়েই লক্ষ্য স্থির করে ফেলেন, বাংলা সাহিত্য বিশেষত রবীন্দ্র সাহিত্যের ওপর গবেষণায় নিজেকে নিয়োজিত করবেন। সেইমতো রবীন্দ্র রচনার বিভিন্ন ধারা অর্থাৎ গদ্য, নাটক, প্রবন্ধ, কবিতা নিয়ে চর্চা শুরু করেন। একে একে লিখে ফেলেন বহু বই। অশ্রুকুমার শিকদারের লেখা বিখ্যাত এবং সর্বাধিক পঠিত বইগুলির মধ্যে অন্যতম – ‘বাক্যের সৃষ্টি: রবীন্দ্রনাথ’, ‘রবীন্দ্রনাট্যে রূপান্তর ও ঐক্য’, ‘ভাঙা বাংলা ও বাংলা সাহিত্য’। এসব বই বাংলা গবেষণার বিভিন্ন পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত। তাঁর লেখা ‘হাজার বছরের বাংলা কবিতা’য় বহু কবির রচনার সম্পর্কে তাঁর নিজের অনুভূতি, বোধকে মিলিয়েছেন। শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের সুবিখ্যাত এবং বহুচর্চিত ‘সে বড়ো সুখের সময় নয়, সে বড়ো আনন্দের সময় নয়’ কবিতায় ‘ফুটপাত বদল হয় মধ্যরাতে’ – এই অংশ তাঁর ব্যাখ্যায় নতুন মাত্রা পেয়েছে। বাঙালিকে কবিতামুখী করে তুলতে অশ্রুকুমার শিকদারের প্রয়াস সাহিত্যপ্রেমী মহল মনে রাখবে আজীবন। তাঁর লেখা ‘বাংলা ভাষা: কিছু ভাবনা’ এবং তিনটি খণ্ডে প্রকাশিত গদ্যসমূহ পাঠকমহলে বহুচর্চিত। বছর দুই-তিন আগেও বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় লিখতেন এই রবীন্দ্র গবেষক। এক প্রবন্ধে তিনি আক্ষেপ প্রকাশ করেছিলেন সময়ের বদলের সঙ্গে সঙ্গে ‘পড়শি’দের রকমফের নিয়ে। তাঁর মনে হয়েছিল, তাঁর পড়শি বলতে বই শুধু।
[প্রয়াত গায়ক প্রতীক চৌধুরি, শোকস্তব্ধ সংগীতজগত]
বছর তিন আগে ভাষা দিবসেই এক বিতর্কে জড়িয়েছিলেন। ওইদিন শিলিগুড়ির বাঘাযতীন পার্কে ভাষা শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত ছিলেন সাহিত্যিক-গবেষক অশ্রুকুমার শিকদার। তাঁকে সামনে রেখেই পুরসভার মেয়র অশোক ভট্টাচার্য বলেন, ভাষা আন্দোলনের স্মারক সৌধ তৈরির জন্য নাগরিকদের কাছ থেকে চাঁদা নেওয়া হবে। সমালোচক মহলের মতে, এভাবে একজন বড় মাপের সাহিত্যিককে মঞ্চে বসিয়ে চাঁদা তোলার বার্তা দেওয়া অনৈতিক কাজ। এরপরই তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দেন, কোনওরকম বিতর্কে তিনি থাকতে একেবারেই নারাজ। কোনও রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করতে তিনি একুশের মঞ্চে যাননি। মেয়র অশোক ভট্টাচার্য তাঁর অনেকদিনের বন্ধু। তাই বন্ধুর আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে গিয়েছিলেন। ভবিষ্যতে এনিয়ে বিতর্ক হলে, তিনি বন্ধুর ডাকে আর সাড়া দেবেন না বলেও সাফ জানিয়েছিলেন। সেসব বিতর্ক থেকে আজ অনেক দূরে চলে গেলেন অশ্রুকুমার সিকদার।
The post ভাষা দিবসে প্রয়াত প্রখ্যাত রবীন্দ্র গবেষক-সাহিত্যিক অশ্রুকুমার শিকদার appeared first on Sangbad Pratidin.