সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ১৯৭০ এশিয়ান গেমসে ভারতকে ব্রোঞ্জ জেতানো দলের সদস্য সুভাষ ভৌমিক পাড়ি দিলেন চিরঘুমের দেশে। ময়দানের ভোম্বলদা নেই, যেন বিশ্বাসই করতে পারছেন না তাঁর সতীর্থ ও শিষ্যরা। বারবার স্মৃতিতে ফিরে ফিরে আসছে ফুটবলার এবং কোচ হিসেবে তাঁর অবদান। কীভাবে ফুটবলার হিসেবে শত্রুর ডেরায় ঢুকে পড়তেন, আবার কীভাবে দুঃসময়ে আদর্শ গুরুর মতো শিষ্যদের কাঁধে হাত রেখে সান্ত্বনা দিতেন। ‘সব ঠিক হয়ে যাবে, চিন্তা করিস না’ বলার মানুষটা চলে গেলেন। শোকে যেন পাথর ময়দান।
দেশের জার্সিতে ৬৯টি ম্যাচ খেলেছেন সুভাষ ভৌমিক (Subhash Bhowmick)। দুই প্রধান ইস্টবেঙ্গল ও মোহনবাগানেও রাজত্ব করেছেন। ১৯৬৯ সালে ইস্টবেঙ্গলে যোগ দিয়েছিলেন। ১৯৭০ থেকে ১৯৭৩ আবার খেলেন সবুজ-মেরুন জার্সিতে। তিয়াত্তরের মরশুমে ফের ফেরেন লাল-হলুদে। ‘৭৯-এ ইস্টবেঙ্গল থেকেই অবসর নিয়েছিলেন। সবচেয়ে বেশি গোল রয়েছে সবুজ-মেরুন জার্সিতেই। সফল ফুটবলার তো বটেই, কোচ হিসেবেও যেন তাঁর জুড়ি মেলা ভার। তিন প্রধানেই কোচিং করেছেন। ইস্টবেঙ্গলকে দু’বার জাতীয় লিগ জিতিয়েছেন। চার্চিল ব্রাদার্সকেও আই লিগ চ্যাম্পিয়ন করেছেন। ২০০৩ সালে আসে সবচেয়ে বড় সাফল্য। তাঁর তত্ত্বাবধানেই আসিয়ান কাপ (Asian Cup) জেতে ইস্টবেঙ্গল। ময়দানের নানা স্মৃতি তাই আজ ভিড় জমিয়েছে প্রাক্তনীদের মনে।
[আরও পড়ুন: হে ভারত, আর কত ব্যর্থতা? রাহুল-পন্থের দুরন্ত ব্যাটিংয়েও হার, ওয়ানডে সিরিজ প্রোটিয়াদের]
প্রাক্তন ফুটবলার গৌতম সরকার বলছেন, শুধু মুখে বড়বড় কথা নয়, কাজের মধ্যে দিয়ে নিজেকে মেলে ধরায় বিশ্বাসী ছিলেন সুভাষ ভৌমিক। অসাধারণ একজন ফুটবলার ছিলেন। ময়দানের হিরো ছিলেন তিনি। সুব্রত ভট্টাচার্য তো বলে দিচ্ছেন, “সুভাষবাবু না থাকলে প্রতিষ্ঠা পেতাম না। ময়দানের অত্যতম স্তম্ভকে আজ হারালাম।” এশিয়ান গেমসে সুভাষের সতীর্থ শ্যাম থাপাও আর শোকাহত। কীভাবে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দেশের জন্য লড়াই করতেন, আজ যেন বড় বেশি করে মনে পড়ছে তাঁর। শুধু ভাল ফুটবলার নয়, ভাল মানুষও ছিলেন সুভাষ। বলছেন, শ্যাম থাপা।
তাঁর তত্ত্বাবধানে খেলা ফুটবলার প্রশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, “আমার খেলা সুভাষ ভৌমিকের দারুণ পছন্দ হয়েছিল। ভালবেসে আমায় একটা সাদা মোজা উপহার দিয়েছিলেন। ক্লাবকে বলেছিলেন, আমার দিকে যেন বেশি নজর রাখা হয়।” প্রাক্তন বাঙালি স্ট্রাইকার দীপেন্দু বিশ্বাসও যেন শোকে ভাষা হারিয়েছেন। বলছেন, “ইস্টবেঙ্গলে থাকাকালীন দেখেছি, ফুটবলারদের খারাপ সময়ে আত্মবিশ্বাস জোগাতেন। যে কোনও সময় যে কোনও প্রয়োজনে খেলোয়াড়দের পাশে থাকতেন।” সেই দাপুটে কোচের বিদায়ে ময়দানে আজ তৈরি হল বিরাট শূন্যতা।