গৌতম ব্রহ্ম: বন্যার জলে ডুবে গিয়েছে বিঘের পর বিঘে ধানিজমি। তার উপরেই ভাসমান বাগান তৈরি করে চলছে সবজি চাষ। বেগুন, টম্যাটো, ঝিঙে, শসা, কখনও আবার মেথি, পেঁয়াজ, আদা। এই ভাসমান সবজি বাগানের মডেলকেই মান্যতা দিল রাষ্ট্রসংঘ। অসমের মাজুলি দ্বীপের মতো সুন্দরবনেও এবার স্থায়ীভাবে শুরু হচ্ছে এই বিকল্প কৃষি।
আমফান-যশের পর নোনাজল ঢুকে সুন্দরবনের কয়েকশো একর চাষের জমি নষ্ট করেছে। বহু জমিতে জল দাঁড়িয়ে গিয়েছিল। এই সময়ই বাদাবনের চাষিরা বিকল্প কৃষিপদ্ধতির হদিশ পান। বড় বড় ড্রামের সাহায্যে বাঁশের মাচা তৈরি করা হয় জমা জলের উপর। টব হিসাবে ব্যবহার করা হয় প্লাস্টিকের ‘গ্রো ব্যাগ’। আর কোকোপিট, কাঠের গুড়ো, ধানের তুস, হাড়ের গুড়োর সংমিশ্রন তৈরি করা হয় মাটি। সৌরশক্তির সাহায্যে নোনাজলকে মিষ্টি করে তা চাষের কাজে ব্যবহার করা হয়। তাতেই বাজিমাৎ।
[আরও পড়ুন: শান্তিনিকেতনে অশান্তি! নদীর পাড়ের মাটি কাটা ঘিরে দুই গোষ্ঠীর ব্যাপক সংঘর্ষ, গুলিতে জখম ৩]
এখনও পর্যন্ত প্রায় ১১ হাজার বর্গফুট ভাসমান বাগান তৈরি করা হয়েছে। ‘জাপান সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট’-এর টাকায় ২০১৯-এর সেপ্টেম্বরে কুমিরমাড়ি, আমতলি, পুঁইজালি, ছোট মোল্লাখালি এবং সন্দেশখালিতে শুরু হয়েছে এই পাইলট প্রকল্প। প্রকল্পের অন্যতম কর্নধার দীপায়ন দে জানিয়েছেন, ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট নেটওয়ার্কের সাহায্যে অসমের মাজুলি দ্বীপ, শিবসাগর, বিহারের সহরসা, সুপোলেও এই ভাসমান খামার মডেলে চাষ শুরু হয়েছে। সমস্ত কর্মযজ্ঞের তত্ত্বাবধানে ‘সাউথ এশিয়ান ফোরাম ফর এনভায়রনমেন্ট’। বাগান ভাসমান হওয়ায় বন্যার জল ঢুকলেও ফসল নষ্টের কোনও সম্ভাবনা নেই।
শুধু ফসল চাষই নয়, বন্যার জেরে মাছ চাষেরও ব্যাপক ক্ষতি হয় দ্বীপ অঞ্চলে। সমস্যার সমাধানে এখন খাঁচা ব্যবহার করছে সুন্দরবন। পুকুরের তিনটি স্তরে ডুবিয়ে তিনধরনের মাছ চাষ হচ্ছে। একই পদ্ধতিতে কাঁকড়া চাষ করেও লাভের মুখ দেখেছে সুন্দরবনের চাষিরা। দীপায়ন জানিয়েছেন, “পুকুরে নোনা জল ঢুকে গেলে মিষ্টি জলের মাছের দফারফা হতে পারে। এই পদ্ধতিতে খাঁচাগুলিকে দ্রুত নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নেওয়া যাবে।”