বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য, শিলিগুড়ি: উত্তরের সমতলে শীতের মরশুমে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি এবারও অধরা। বেলা গড়িয়ে সূর্যের দেখা মিললেও রোদের উত্তাপ নেই। উলটে বেলা বাড়তে হাড় কাপাচ্ছে উত্তুরে হিমেল হাওয়া। সঙ্গে চলছে কুয়াশার দাপট। আবহাওয়ার এমন পরিস্থিতি দেখে মাথায় হাত পড়েছে দশ হাজার চা চাষি এবং বড় চা বাগান কর্তৃপক্ষের। ছেটে দেওয়া গাছ ঠান্ডার জন্য থমকে দাঁড়িয়েছে। দুটি পাতার দেখা মিলছে না। স্বভাবতই লাভজনক ‘ফার্স্ট ফ্লাস’ নিয়ে অনিশ্চয়তা বাড়ছে চা বলয়ে। প্রশ্ন ঘুরছে, শীতের দাপটে এবারও কি পিছিয়ে যেতে চলেছে চা মরশুম!
টি রিসার্চ অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে জানা গিয়েছে, ডুয়ার্স ও তরাইয়ে প্রতি বছর ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হয়ে থাকে। এক বছর থেকে সেটা হচ্ছে না। গত বছর বৃষ্টির অভাবে প্রয়োজনীয় কাচা চা পাতা না মেলায় বেশিরভাগ বটলিফ কারখানার দরজা বন্ধ হয়ে যায়। আবহাওয়ার পরিবর্তন দেখে চা বলয়ে শঙ্কা জেগেছে এবারও কি একই পরিস্থিতি হতে চলেছে! চা বিশেষজ্ঞদের সূত্রে জানা গিয়েছ, প্রতি বছর ডিসেম্বর মাস থেকে চা গাছ ছেঁটে দেওয়ার কাজ চলে। এর পর বৃষ্টির ছোঁয়া মিলতে দুটি পাতার কুঁড়ি চলে আসে। এবার জানুয়ারি মাস শেষ হতে চললেও গত বছরের মতো বৃষ্টির দেখা মেলেনি। কৃত্রিমভাবে সেচের ব্যবস্থা করে গাছ বাঁচিয়ে রাখা গেলেও পাতা নেই।
চা চাষিরা জানান, ভালো চা পাতা উৎপাদনের জন্য কড়া রোদ, লম্বা দিন ভীষণ প্রয়োজন। এবারও সেটা মিলছে না। তাপমাত্রা ৮ ডিগ্রি থেকে ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ঘোরাফেরা করছে। রোদের তাপ নেই। কুয়াশাচ্ছন্ন দিনরাত। এই আবহাওয়া চা শিল্পের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এর পর তাপমাত্রা বাড়লে রেড স্পাইডার, লুপার, লাল পোকা, গ্রিন ফ্লাই অর্থাৎ সবুজ মাছি, চা মশার উপদ্রব বাড়বে। চা পাতার গুণগত মান খারাপ হবে।
[আরও পড়ুন: জ্ঞানবাপী মসজিদের নিচে ছিল মন্দির! রিপোর্টে জানাল ASI]
কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান স্মল টি গ্রোয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বিজয়গোপাল চক্রবর্তী জানান, ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি থেকে চা পাতা তোলার কাজ শুরুর কথা। সেটাই ‘ফার্স্ট ফ্লাস’। অর্থাৎ মরশুমের প্রথম চা পাতা। দু’মাস পাতা তোলার কাজ চলে। কিন্তু এবার কি হবে কেউ বুঝতে পারছে না। কারণ, গাছের বৃদ্ধির জন্য যে রোদ ও বৃষ্টি প্রয়োজন সেটা মিলছে না। তিনি বলেন, “চা পাতা উৎপাদকরা ফার্স্ট ফ্লাসের দিকে তাকিয়ে থাকে। কারণ, এই সময় যে পাতা হয় সেটার কেজি প্রতি দাম ২০ টাকা থেকে ২৫ টাকা থাকে।”
চা শিল্পপতি পূরণজিৎ বক্সি গুপ্ত জানান, আবহাওয়ার এই পরিস্থিতি চললে পাতার উৎপাদন ৩০ শতাংশের বেশি কমতে পারে। সেটা হলে খুবই খারাপ পরিস্থিতি হবে। গতবছর শীতের মরশুমে আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনার জন্য কাঁচা চা পাতা উৎপাদন তেমন না হওয়ায় উত্তরে ২১৫টি বটলিফ কারখানার মধ্যে অর্ধেক খোলেনি। নর্থবেঙ্গল টি প্রোডিউসার ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের’ প্রাক্তন সভাপতি সতীশ মিত্রুকা জানান, কারখানা খুলে পাতার জন্য বসে থাকতে হয়েছে। এবার কি পরিস্থিতি দাঁড়াবে বোঝা যাচ্ছে না।