বিভিন্ন দেশে ঝিনুকের খাবার জনপ্রিয়। খুবই দামি খাবার। জনপ্রিয় টেবিল ফুড। প্রচণ্ড চাহিদা। তার কারণ, ঝিনুকের মাংসের উৎকৃষ্ট খাদ্যগুণ। সারা পৃথিবীতে ঝিনুকের ব্যাপক চাহিদা। তার ফলে ঝিনুক চাষে ভালো আয়ের সুযোগ। লিখেছেন বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক অন্তরা মহাপাত্র এবং বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন বরিষ্ঠ গবেষক ড. পরিতোষ বিশ্বাস। পড়ুন শেষ পর্ব।
ঝিনুক চাষের চারটি পদ্ধতি
১) র্যাকে চাষ
২) লম্বা দড়িতে চাষ
৩) ঝুলানো ট্রে-তে চাষ
৪) জলের তলদেশে (Bottom) চাষ।
ঝিনুকের চাষে ছয় প্রজাতির ব্যবহার আছে। তবে সব চাইতে উৎকৃষ্ট প্রজাতি হল 'Crassos trea madrasensis (Preston)। এই প্রজাতির ঝিনুক সমুদ্রের জলের তলায় ১৭ মিটার গভীরতা পর্যন্ত ফলন দিতে পারে। ভারতবর্ষে ঝিনুক চাষে অগ্রণী রাজ্যগুলি হল কেরল, তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলেঙ্গানা, কর্নাটক, ওড়িশা ও পশ্চিমবঙ্গ। কেরলের গ্রাম্য মহিলারা স্বনির্ভর প্রকল্পে ঝিনুক চাষে অনেক এগিয়ে। এই চাষ করে তাঁদের সংসারে স্বচ্ছলতা আনতে সক্ষম হয়েছেন।
[আরও পড়ুন: রুক্ষ মাটিতে ড্রাগন ফলের চাষ! বিকল্প আয়ের দিশা দেখাচ্ছেন জঙ্গলমহলের যুবক]
উপকারিতা:
১) ঝিনুকের চাষের জন্য সমুদ্র উপকূলের বা খাঁড়ি অঞ্চলের জলের বা স্থলের জৈবিক পরিবেশ খুবই উন্নত হয়। ফলে ওই এলাকার অন্যান্য গাছ বা প্রাণীরা প্রভূত লাভবান হয় এবং মানুষেরও উপকার হয়।
২) ঝিনুক শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়ার সময় তার আশেপাশের সমুদ্রের জলকে ফিল্টার করে বা পরিষ্কার করে।
৩) ঝিনুক পুড়িয়ে চূর্ণ (ক্যালসিয়াম অক্সাইড) তৈরি করা হয়।
৪) ঝিনুকের পাহাড়ের (Reef) আড়ালে বহু প্রাণী, (যেমন: কাঁকড়া, কচ্ছপ, রঙিন মাছ, হেরিং মাছ, ইত্যাদি) আত্মগোপন করে বড় মাংসাশী প্রাণীদের আক্রমণ থেকে প্রাণ বাঁচায়।
৫) ঝিনুক জল থেকে বাতাসের দ্রবীভূত নাইট্রোজেন শুষে নিয়ে বাড়ে। তাদের পায়খানার মাধ্যমে জলের ফাইটো- প্লাঙ্কটন, জু প্লাঙ্কটন ও অন্যান্যদেরও বাড়তে সাহায্য করে। মাছেদের খাদ্যের যোগান দেয়।
৬) জলে দ্রবীভূত বিষাক্ত কার্বন-ডাই অক্সাইড, ঝিনুক খেয়ে নিয়ে শরীরে সঞ্চয় করে এবং বর্জ্য, সেডিমেন্ট হিসাবে জলে জমায়। এই বর্জ্য, বহু প্রাণীদের খেয়ে জীবনধারণ করতে সাহায্য করে।
৭) ঝিনুকের শক্ত দেহের আবরণীর উপর বহু সামুদ্রিক মাছের ডিম পাড়ার প্রিয় জায়গা।
৮) ঝিনুকের মাংস সারা পৃথিবীতেই দামী খাবার। ফলে ব্যাপক হারে চাষ বাড়ছে। খুব লাভজনক ব্যবসা। অনেক বেকার লোকের কর্মসংস্থান হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গও পিছিয়ে নেই।