সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: এখনও বৈশাখ আসেনি। কিন্তু শেষ চৈত্রেই পুরুলিয়ায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড ছাড়িয়ে গেল। বর্তমানে পুরুলিয়ার আবহাওয়ার নানান বিষয় পরিমাপ করে কৃষি দপ্তর। পুরুলিয়া জেলা কৃষি দপ্তরের হাতোয়াড়া ফার্মের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সোমবার এই জেলার সর্বোচ্চ ছিল ৪২.২ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড। চৈত্র শেষেই এই জেলার সর্বোচ্চ ৪২ ছাড়িয়ে যাওয়ায় বসন্তে এমন উদাহরণ কবে রয়েছে তা খুঁজতে এখন রীতিমতো তথ্য হাতড়াচ্ছে কৃষি দপ্তর। পুরুলিয়া জেলা কৃষি দপ্তরের যুগ্ম কৃষি অধিকর্তা (পার্সোনাল-ইনফরমেশন) সুশান্ত দত্ত বলেন, “এবার চৈত্র মাসেই পুরুলিয়ার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি ছাপিয়ে গেল। এই অবস্থায় চাষাবাদে যাতে কোনও সমস্যা না হয়, সেই বিষয়ে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।”
মার্চের একেবারে শেষ থেকেই এবার চোখ রাঙাচ্ছে জেলার দাবদাহ। সেই সময় ৪০-এ না পৌঁছলেও গত ৩১ মার্চ এই জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৯.৫ ডিগ্রি। তবে ২ এপ্রিল তা ৪০- এ পৌঁছে যায়। তারপর ধাপে ধাপে ৪০ পার হয়ে ৪১ থেকে এবার ৪২ পার হয়ে গেল।
[আরও পড়ুন: কাকদ্বীপে বধূকে গণধর্ষণ, পরে কেরোসিন ঢেলে পুড়িয়ে মারার চেষ্টা]
সর্বোচ্চ তাপমাত্রা যেমন লাফিয়ে বাড়ছে, তেমনি বইছে লু। গরম হাওয়ায় চোখ মুখ জ্বালা করছে। কাপড়ে মুখ ঢেকে, মাথায় ছাতা, চোখে রোদ চশমা দিলেও অস্বস্তি কাটছে না। গতবছর এপ্রিলে এমন দাবদাহ ছিল না এই জেলায়। এবার ৪২ ছাড়িয়ে যাওয়ায় পুরুলিয়ার একাধিক গ্রামে শুরু হয়েছে জলকষ্ট। ৩০ ফুট নিচে জলস্তর নেমে যাওয়ায় শুকিয়ে গিয়েছে কুয়ো। নলকূপ থেকে পর্যাপ্ত জল মিলছে না। পানীয় জলের সবচেয়ে বেশি সংকট দেখা দিয়েছে বাঘমুন্ডি ব্লকে। তবে ঝালদা এক, জয়পুরেও পরিস্থিতি প্রায় একইরকম। কাঁসাই নদী একেবারে শুকিয়ে কাঠ। যেন সরু ফিতের মতো বইছে।
৪২ ডিগ্রি তাপমাত্রা পেরিয়ে যাওয়ায় উদ্যানপালন দপ্তর জেলার কৃষকদের নানা পরামর্শ দিচ্ছে। পুরুলিয়া জেলা উদ্যানপালন দপ্তরের আধিকারিক সমরেন্দ্রনাথ খাড়া বলেন, “এখন চাষিদের আমরা জলসেচ বাড়ানোর কথা বলছি। যখন সূর্য থাকবে না, তখন অর্থাৎ সকালে ও সন্ধেয় জলসেচ দেওয়ার কথা বলছি। যাতে জল কম লাগবে। কলসি সেচ, ফোয়ারা সেচে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।” উদ্যানপালন বিভাগ থেকে পলি মালচিং দেওয়া হচ্ছে। অর্থাৎ গাছের গোড়ায় পলিথিন দিয়ে ঢেকে দেওয়ার জন্য কৃষকদের তা বিতরণ করছে উদ্যানপালন বিভাগ। এছাড়া ওই দপ্তর থেকে জানানো হয়েছে, গাছের গোড়ায় ধানের তুষ, কাঠের গুঁড়ো দেওয়ার জন্য। এছাড়া কচুরিপানাও গাছের গোড়ায় দেওয়া যেতে পারে। উদ্যানপালন বিভাগ কৃষি দপ্তরের সঙ্গে সমন্বয় সাধন করে ফোয়ারা সেচে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া আত্মা প্রকল্পে এই কাজ চলছে। সেই সঙ্গে শেডনেট হাউস, পলি হাউসের কথাও বলছে উদ্যানপালন দপ্তর।
[আরও পড়ুন: দেওঘর রোপওয়ে দুর্ঘটনা: ‘ভেবেছিলাম বাঁচব না’, বললেন ২০ ঘণ্টা পর উদ্ধার হওয়া যুবক]
এক নজরে পুরুলিয়ার সর্বোচ্চ তাপমাত্রার খতিয়ান।
তারিখ সর্বোচ্চ
১এপ্রিল ৩৯.৪
২এপ্রিল ৪০.০
৩এপ্রিল ৩৯.৬
৪এপ্রিল ৩৯.৬
৫ এপ্রিল ৪০.২
৬ এপ্রিল ৪০.০
৭ এপ্রিল ৩৯.৮
৮ এপ্রিল ৩৯.৮
৯ এপ্রিল ৪০.২
১০ এপ্রিল ৪১.০
১১ এপ্রিল ৪২.২
( তথ্য ও সূত্র : পুরুলিয়া জেলা কৃষি দপ্তর। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডে )