shono
Advertisement
Lady's Finger

দেশের বাইরে বিদেশেও ব্যাপক চাহিদা ঢ্যাঁড়শের, কীভাবে করবেন চাষ?

প্রোটিন, ভিটামিন, আঁশ ও বিভিন্ন ধরনের খনিজ থাকার কারণে ঢ্যাঁড়শ অত্যন্ত উপকারী।
Published By: Sayani SenPosted: 02:30 PM May 22, 2024Updated: 02:30 PM May 22, 2024

উন্নত গুণমান সম্পন্ন উচ্চ ফলনশীল-শংকর বীজ, মাটি পরীক্ষা ভিত্তিতে সুষম সারের ব্যবহার ও সুসংহত রোগ-পোকা নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি অবলম্বনের মধ্যে দিয়ে ভেন্ডি চাষকে লাভজনক জায়গায় নিয়ে যেতে পারে। তাতে কৃষক বন্ধুরা উপকৃত হবেন। জৈব পদ্ধতি অবলম্বন করে চাষ করলে বিদেশের বাজারে জৈব ভেন্ডি রপ্তানি করার সুযোগ আছে। সুনিশ্চিত কৃষিকে সুদৃঢ় করার লক্ষ্যে ফসলের অবশিষ্টাংশ কৃষি বিষের পরিমাণ কমানো সম্ভব। অন্য দিকে জল ও মাটি দূষণ কিছুটা হলেও রোধ করা সম্ভব হতে পারে। লিখেছেন সোনামুখীর ডব্লুবিসিএডিসি কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রের বিষয়বস্তু বিশেষজ্ঞ (শস্য সুরক্ষা) ড. সুভাষ হাঁসদা।

Advertisement

দৈনদিন খাদ্য তালিকায় আমাদের পাতে বিভিন্ন ধরনের পদ থাকে। তার মধ্যে ভেন্ডি অন্যতম। কারণ এই সবজির প্রচুর ঔষধি গুণের সাথে সাথে পুষ্টিগুণ বিরাজমান। যা শরীর সুস্থ ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে সহায়তা করে। প্রোটিন, ভিটামিন, আঁশ ও বিভিন্ন ধরনের খনিজ থাকার কারণে গর্ভবতী মহিলাদের পথ্য হিসাবে ও পেটের বিভিন্ন রকম রোগ নিরাময়ে কাজে লাগে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের তথ্য অনুসারে এই সবজিতে প্রচুর পরিমাণে আঁশ থাকার কারণে কোলন ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়। শুকনো ফল ও ফলের ত্বক কাগজ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।

ভারতবর্ষে সবজি উৎপাদনে ভেন্ডি পঞ্চম স্থান দখল করে। ভারতের মধ্যে পশ্চিমবাংলা, বিহার, ওড়িশা ও উত্তর প্রদেশ রাজ্যে সব থেকে বেশি পরিমাণ ভেন্ডি উৎপাদন হয়। ক্রান্তীয় ও উপক্রান্তীয় অঞ্চলে শীতকাল বাদ দিয়ে গ্রীষ্ম ও বর্ষা ঋতুতে ব্যবসায়িক ভিত্তিক ভেন্ডি চাষ করা যায়। পশ্চিম বাংলায় প্রায় ৭২৬০০ হেক্টর জমিতে ভেন্ডি চাষ হয়ে থাক। যার হেক্টর প্রতি গড় উৎপাদন ১১.৫ মেট্রিক টন। সব রকম মাটিতেই এই ফসলের চাষ করা গেলেও উত্তম জৈব পদার্থ ও জল নিকাশি ব্যবস্থাযুক্ত বেলে দোঁয়াশ মাটি খুবই উপযোগী। ক্ষারীয় লবণাক্ত মাটি ও দীর্ঘদিন জল জমে থাকে এমন জমিতে ভেন্ডি না চাষ করাই ভাল। কারণ এই ফসল জল দাঁড়ানো সহ্য করতে পারে না।

বীজের অঙ্কুরোদ্গম, গাছের ও ফুল ফলের বৃদ্ধির জন্য ২০ ডিগ্রি থেকে ৩০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রা, তার সাথে প্রায় ১১০০ মিলিলিটার বার্ষিক বৃষ্টিপাতের প্রয়োজন। ফসল তোলার আদর্শ তাপমাত্রা হল ২৫- ৩৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড। বাতাসের তাপমাত্রা ২০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের নিচে থাকলে বীজের অঙ্কুরোদ্গম হলেও বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। ৪২ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের অধিক তাপমাত্রা হলে গাছের ফুল ঝরে যায়।

বিঘা প্রতি ২.৫ মেট্রিক টন গোবর সার, নিম খোল ৩০ কেজি, ইউরিয়া ২৫ কেজি, সিঙ্গেল সুপার ফসফেট ৭৫ কেজি, মিউরিয়েট অফ পটাশ ১০ কেজি অথবা ১০:২৬:২৬ সার ২৫ কেজি, ইউরিয়া ২২ কেজি ও সিঙ্গেল সুপার ফসফটে ৩৫ কেজি শেষ চাষের আগে জমিতে ছড়িয়ে দিয়ে কর্ষণ করে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। তার পরবর্তীতে চাপান সার হিসাবে বীজ রোপণ করার তিন সপ্তাহ ও ৬ সপ্তাহের মাথায় ইউরিয়া ১৫ কেজি ও পটাশ সার ৫ কেজি ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে মনে রাখা জরুরি স্থান ভেদে, মাটির উর্বরতার তারতম্যের কারণে রাসায়নিক সারের সুপারিশমাত্রার পার্থক্য হতে পারে। মাটি পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে সারের সুষম ব্যবহার একান্তই জরুরি। প্রাথমিক অবস্থায় রোগের হাত থেকে ফসলকে রক্ষা করার জন্য জৈব ছত্রাকনাশক ট্রাইকোডার্মা ভিরিডি বিঘা প্রতি ৬০০ গ্রাম হারে মাটিতে প্রয়োগ করা যেতে পারে। তার সাথে বীজ শোধন খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

[আরও পড়ুন: পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে স্ট্রবেরি গার্ডেন, কার্শিয়াংয়ে স্বনির্ভরতার নয়া দিশা]

ভেন্ডির জাত ও ঋতুভেদে বিঘা প্রতি গড়ে ১.৫-২ কেজি বীজ লাগে। উচ্চ ফলনশীল জাতের মধ্যে আজাদ ক্রান্তি, পুসা মখমলি, পার্বনি ক্রান্তি। তার মধ্যে অর্ক অভয় ও অর্ক অনামিকা সাহেব রোগ সহনশীল। গ্রীষ্মকালীন ফসলে F1 শংকর জাত যেমন নামধারী-৮৬২, কলস-গুঞ্জন, সি ও-১৪১৮, রাধিকা ও ওকরা-৫৯৭ ইত্যাদির ব্যবহার দেখা যায়।

বীজ শোধনের জন্য কার্বেন্ডাজিম ১২% ম্যাঙ্কোজেব ৬৩% ডাব্লুপি @ ২.৫ গ্রাম প্রতি কেজি বীজের সাথে মিশিয়ে ছায়াতে ৩০ মিনিট শুকিয়ে নিয়ে মূল জমিতে গ্রীষ্মকালে ভেলির কিনারায় আর বর্ষাকালে ভেলির উপরে মোটামুটি ২ সেমি গভীরতায় উপযুক্ত আর্দ্রতায় ২০ সেমি × ৪৫ সেমি আর ৩০ সেমি × ৬০ সেমি গাছ ও সারির দূরত্ব রাখলে ভাল ফলন পাওয়া যায়।

ফসল লাগানোর ২০ দিন ও ৪০ দিনের মাথায় গাছের গোড়ায় মাটি তোলার সময় আগাছা থাকলে হাত দিয়ে তুলে নষ্ট করে দিতে হবে অথবা বীজ বপনের ১২ দিন আগে প্রাক উত্থান রাসায়নিক আগাছা নাশক যেমন- Fluchoralin 48% EC বিঘা প্রতি @ ৩৩০ মিলি বা Pendimethalin 30% EC @ ৫০০ মিলি প্রয়োগ করা যেতে পারে।মাটির আর্দ্রতার উপর নির্ভর করে জলসেচের তারতম্য ঘটে। যেমন বীজ বপনের পূর্বে জমিতে জো কম থাকলে অবশই সেচ দিতে হবে নইলে বীজের অঙ্কুরোদগমে ব্যাঘাত ঘটতে পারে। গ্রীষ্ম কালে ৪-৫ দিন ব্যবধানে ও বর্ষাকালে ১০-১৫ দিন ব্যবধানে প্রয়োজন অনুযায়ী সেচের ব্যবস্থা করতে হবে। ফুল ও ফল ধরার সময় জমিতে যথেষ্ট পরিমাণ আর্দ্রতা বজায় রাখতে হবে। তা না হলে ফলন কমে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।

রোগ-পোকার দ্বারা ফসল আক্রান্ত হলে উৎপাদনে ব্যাঘাত ঘটে। যে সমস্ত রোগ ভেন্ডির জমিতে দেখা যায় সেগুলি হল ছত্রাক জনিত পাউডার রোগ, পাতার কালো দাগ, কুড়ি পচা, সাদা মাছি বাহিত সাহেব রোগ ও মাটির কৃমি দ্বারা আক্রান্ত শিকড় ফোলা রোগ আর পোকার মধ্যে রস চোষক পোকা-সাদা মাছি, জ্যাসিড, দয়ে পোকা, জাব পোকা, পাতা- ফল খাওয়া পোকা, কাণ্ড ও ফল ছিদ্রকরি পোকা, পাতামোড়া পোকা ও ম্যাপ পোকা ইত্যাদি। জমি তৈরি থেকে শুরু করে ফসল তোলা পর্যন্ত আক্রমণের তীব্রতা অর্থনৈতিক ক্ষতির সীমার মধ্যে বা নিচে রাখতে সুসংহত পদ্ধতি অবলম্বন করা জরুরি।

গ্রীষ্মকালীন গভীর লাঙ্গল দিয়ে জমিতে রোদ খাওয়াতে হবে তাতে করে মাটিতে থাকা পোকার পুত্তলি, ডিম ইত্যাদি নষ্ট হয়ে যায় বা পাখিতে খেয়ে নিলে মূল ফসলে রোগ-পোকার প্রাদুর্ভাব কমানো সম্ভব।
রোগ-পোকা সহনশীল জাতের চাষ যেমন অর্ক অনামিকা ও অর্ক অভয় সাহেব রোগ সহনশীল। জৈব ছত্রাক নাশক ট্রাইকোডার্মা ভিরিডি দিয়ে মাটি ও বীজ শোধন করতে হবে।

মাটি শোধনের জন্য বিঘা প্রতি ৬০০ গ্রাম হারে ১০০ কেজি রসালো গোবর সারের সাথে মিশিয়ে এক সপ্তাহ ছায়াতে রেখে মূল জমি তৈরি করার সময় বিকালের দিকে বা স্বল্প রোদে মূল জমিতে ছড়িয়ে দিতে হবে। বীজ শোধনের জন্য ৪ গ্রাম প্রতি কেজি বীজ। এতে করে ছত্রাক জনিত রোগের আক্রমণের হাত থেকে ফসলকে রক্ষা করা যায়। ইমিডাক্লোরপিড ৭০% ডাব্লুএস @ ৫ গ্রাম প্রতি কেজি বীজের সাথে মিশিয়ে বীজ শোধন করতে হবে। এতে সাহেব রোগের সম্ভাবনা কম থাকে। মাটির কৃমি ও রস চোষক পোকার আক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য নিম খোল বিঘা প্রতি কম করে ৩০ কেজি ও কার্বোফুরান ৩ জি @ ৪ কেজি শেষ চাষের সময় মাটির সাথে মিশিয়ে বীজ বপন করতে হবে।মূল জমিতে ছত্রাক জনিত রোগ নিয়ন্ত্রণের জন্য কার্বেন্ডাজিম ১২% ম্যাঙ্কোজেব ৬৩% ডাব্লুপি @ ২.৫ গ্রাম বা কৃসোক্সিম মিথাইল ১৫% ক্লোরোথালনীল ৩৫% @ ২.৫ গ্রাম বা Azoxystrobin 11% + Tebuconazole 18.3% SC @ ১.৫ মিলি প্রতি লিটার জলের সাথে মিশিয়ে যে কোনও একটি বা দুইটি রাসায়নিক ছত্রাকনাশক ঘুরিয়ে ফিরিয়ে স্প্রে করলে সুফল পাওয়া যায়।
প্রতিদিন সকালে খেত পরিদর্শনের সময় গাছের পাতার নিচে রস চোষক পোকা দেখা গেলে প্রথমের দিকে নিমতেল ১০০০০ পিপিএম ৩ মিলি শ্যাম্পু সহযোগে জলের সাথে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।

পরবর্তী পর্যায়ে খুব প্রয়োজন হলে রাসায়নিক কীটনাশক চোষি পোকার জন্য (Pyriproxyfen 8% + Dinotefuran + Diafenthiuron) 18% SC @ ১.৫ মিলি বা (আসিফেট ৫০% + ইমিডাক্লোরপিড) ১.৮% এসপি @ ২.৫ গ্রাম বা থায়ামিথস্যাম ২৫% ডাব্লুজি @ ১ গ্রাম/৫ লিটার জলে বা ডিনোটেফুরান ২০% এসজি @ ৬.৫ গ্রাম/১৫ লিটার জলে মিশিয়ে স্প্রে করলে সুফল পাওয়া যায়। পাতা মোড়া, পাতা খাওয়া ও ফলছিদ্রকারী পোকা নিয়ন্ত্রণের জন্য আমামেক্টিন বেনজোয়েট ৫% এসজি @ ০.৫ গ্রাম বা (নোভালুরন ৫.২৫% + আমামেক্টিন বেনজোয়েট ০.৯%) @ ২ মিলি প্রতি লিটার জলের সাথে মিশিয়ে স্প্রে করলে সুফল পাওয়া যায়। উন্নত জাতের ক্ষেত্রে বিঘা প্রতি ২০ কুইন্টাল ও শংকর জাতের ক্ষেত্রে গড় ৩৬ কুইন্টাল ফলন হয়। শংকর জাতের চাষের ক্ষেত্রে বিঘা প্রতি মোট খরচ ৩০০০০ টাকা এবং মোট আয় ৭২০০০ টাকা। তাহলে ভেন্ডি চাষে বিঘা প্রতি নিট লাভ প্রায় ৪২০০০ টাকা।

[আরও পড়ুন: রোগ সারালেই পটল চাষে বিপুল আয়, জেনে নিন প্রতিকার]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • প্রোটিন, ভিটামিন, আঁশ ও বিভিন্ন ধরনের খনিজ থাকার কারণে গর্ভবতী মহিলাদের পথ্য হিসাবে ও পেটের বিভিন্ন রকম রোগ নিরাময়ে কাজে লাগে।
  • চিকিৎসা বিজ্ঞানের তথ্য অনুসারে, এই সবজিতে প্রচুর পরিমাণে আঁশ থাকার কারণে কোলন ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়।
  • দেশের বাইরে বিদেশেও ব্যাপক চাহিদা ঢ্যাঁড়শের।
Advertisement