বাবুল হক, মালদহ: আজ পবিত্র ইদ-উল-ফিতর। ইদের কেনাকাটায় ফি বছরের ন্যায় এবারও ঠাঁই পায় নানান ব্র্যান্ডের সুগন্ধি আতর। কিন্তু এবার মার খেল এক নামী ব্র্যান্ড। বিভাজনের রাজনীতি মাথাচারা দিতেই এবার ইদের বাজার থেকে উধাও 'জয় শ্রীরাম'! কিন্তু মালদহের ইদের বাজারে এবার দেখাই মেলেনি 'জয় শ্রীরাম' আতরের। অথচ সেই আতরই ফি বছর বাজার দাপিয়েছে। কিন্তু এবার কেন উলটো চিত্র?
ইংলিশবাজার শহরের নেতাজি কমার্সিয়াল মার্কেটের এক আতর বিক্রেতা আহাদ খানের কথায়, "এবার রাজনীতির মধ্যে ধর্মকর্ম ঢুকিয়ে দিচ্ছে। হিন্দু-মুসলিম ভাগ করে দিয়ে গোলমাল বাঁধানোর চেষ্টা করছে। এজন্যই হয়তো নামটা শুনেই জয় শ্রী রাম' আতর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন।" আতরের মিষ্টি সুগন্ধ। খুস, গুলাব, জেসমিন, তাজমহল, গুলবাহার, জান্নাতুল ফিরদৌস। হরেক রকম আতর সহজলভ্য, বছরের ঠিক এই সময়ই। মালদহ শহরের বিভিন্ন বাজারে এই ইদ উৎসব উপলক্ষ্যে জেলার বিভিন্ন জায়গা থেকে এসে পসরা সাজান বিক্রেতারা। এবারও সুগন্ধের সম্ভার নিয়ে তাঁরা আসেন। কিন্তু 'জয় শ্রীরাম' আতর বাজার থেকে হারিয়ে যেতেই ফের স্বমহিমায় ইদের বাজার মাত করে জান্নাতুল ফিরদৌস, তাজমহল, গুলবাহারও।
উৎসবের আগের বিকেলে শহরের চিত্তরঞ্জন মার্কেটে সপরিবারে ইদের বাজার করতে এসে স্কুল শিক্ষক জামিল হোসেন বলেন, "বিভাজন বা মেরুকরণের রাজনীতি আমরা চাই না। তাই আতরের নাম শুনেই মানুষ মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। অথচ এই আতরের বরাবরই নামডাক ছিল। কিন্তু নামেই আপত্তি।" দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে আতর বিক্রি করেন আবদুল। ইদ এলেই রোজগার বেড়ে যায় তাঁর। বছরে দু'টি ইদে আতর বিক্রি করে সারা বছর সংসার চালান। হরেক রকম আতরের পসরা সাজিয়ে এবারও বসেছিলেন ইদের বাজারে। তিনি জানান, আতরের পাশাপাশি ডিও, ফগ, কোবরা, ম্যাগনামের মতো পারফিউম, সেন্ট এবং বডি স্প্রেও কিনেছেন উৎসবমুখর মানুষ। আতর বিক্রেতা ইন্তাজ আলি বলেন, "পারফিউম, বডি-স্প্রে অনেক ক্ষতিকারক। তবু এ যুগের উঠতি তরুন-তরুনীরা পারফিউম, বডি স্প্রে ব্যবহারে ঝুঁকেছেন। ইদের বাজারে সেটা ও উপলব্ধি করেছি।"
একটি বাক্সে আতরের পসরা সাজিয়ে গুল মহাম্মদ বলেন, "কোবরা বডি স্প্রের কাছে হেরে যাচ্ছে আমাদের জান্নাতুল ফিরদৌস। ধর্ম আর রাজনীতি যখন থেকে মাথাচারা দিয়েছে তখন থেকেই আমরা 'জয় শ্রী রাম' আতর বিক্রি করছি না। কেউ কিনতে চাইছেন না। এই ইদের মরশুমে আমরা প্রচুর পরিমাণে আতর ও পারফিউম বিক্রি করেছি।"