সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: উনিশ বছর বয়স। কিন্তু চল্লিশের মগজ!
প্যারিসের শহরতলির ক্লাব এএস বন্ডিতে যদি কেউ যান, কিলিয়ান এমবাপে নিয়ে ঠিক এই কথাটাই শুনতে পাবেন। এএস বন্ডি এমবাপের শৈশবের ক্লাব। এমবাপের বাবা উইলফ্রেড এএস বন্ডিতে স্পোর্টিং ডিরেক্টর ছিলেন। অনূর্ধ্ব পর্যায়ের টিমগুলোকেও দেখতেন। আর দু’বছরের ছোট্ট এমবাপে ক্লাবের খেলাটেলা থাকলে ঘুরঘুর করতেন। টিম মিটিংয়ে কে কী বলছে শুনতেন। “ম্যাচের আগে সবচেয়ে বেশি টিম টক বোধহয় কিলিয়ানই শুনেছে আজ পর্যন্ত,” বলছিলেন আমানে অ্যারোসে। এএস বন্ডি ক্লাবের প্রেসিডেন্ট। “ঐশ্বরিক প্রতিভা বলতে যা বোঝায়, ছোট থেকে এমবাপে ছিল তাই। বাকিরা যা করত, তার চেয়ে অনেক অনেক বেটার। দারুণ ড্রিবল করতে পারত। বাকিদের চেয়ে গতি ভাল ছিল। পরে যোগ হল, মাথা। অত কম বয়স। মাত্র উনিশ। কিন্তু কথা বললে মনে হত, চল্লিশ বছরের কারও সঙ্গে কথা বলছি,” বলে দেন এএস বন্ডি ক্লাব প্রেসিডেন্ট।
[ফুটবলের জোড়া রূপকথার অপমৃত্যু, উরুগুয়ের কাছে হেরে বিদায় রোনান্ডোরও]
এমবাপের গতি কতটা মারাত্মক, শনিবারের কাজানের পর এই বিশ্বে সবচেয়ে ভাল জানে লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনা। তাঁর ডিফেন্স ফালা-ফালা করে দেওয়া দৌড়, শুধু যে এমবাপেকে বিশ্বকাপের দ্বিতীয় রাউন্ডে দু’টো গোল দিল, তা নয়, তাঁকে পেলের কীর্তির পাশেও একই সঙ্গে বসিয়ে দিল। টিনএজার হিসেবে বিশ্বকাপে একটি ম্যাচে একাধিক গোল করার রেকর্ড এতদিন ছিল পেলের। এমবাপে এদিন সেই কীর্তি ছুঁয়ে ফেললেন।
আর্জেন্টিনা বধের পর এমবাপেকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, পেলের কীর্তি ছোঁয়া নিয়ে। জবাবেই বুঝিয়ে দিলেন কেন তাঁর উনিশ বছরেই চল্লিশ বছরের মগজ বলা হয়। “পেলের সঙ্গে একই কীর্তি ভাগাভাগি করাটা বিশাল ব্যাপার। কিন্তু আপনারা ভেবে দেখুন, কী বলছেন। পেলে কোথায়, আর আমি কোথায়? উনি সম্পূর্ণ অন্য লেভেলের ফুটবলার,” বলে দেন এমবাপে। কিন্তু নিজের পারফরম্যান্স? সেটা নিয়েও কিছু বলার নেই? এবার এমবাপে বলে দেন, “আমি বরাবর বিশ্বাস করে এসেছি, বিশ্বকাপই নিজেকে চেনানোর সেরা জায়গা। বিশ্বকাপই দেখানোর মঞ্চ তুমি কীরকম ফুটবলার।” অথচ এমবাপেকে এখনও অনায়াসে ফরাসি ফুটবলের ওয়ান্ডার কিড বলে চালানো যায়। মাত্র তিন বছর আগে ফ্রান্সের হাইস্কুল পরীক্ষা পাশ করেছেন। কিন্তু তাতে কী? তিন বছরেই দু’বার লিগ ওয়ান জিতে ফ্রান্সের জাতীয় দলের নিয়মিত ফুটবলার। এএস বন্ডি ক্লাবের ডিরেক্টর, ছোটবেলায় এমবাপের সতীর্থরা তাতে আশ্চর্যের কিছু দেখছেন না।
[অধরা সোনার পরী, বিশ্বকাপের ট্র্যাজিক নায়কই থেকে গেলেন মেসি]
শুধু আক্ষেপ একটাই। ছোট থেকেই ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর বিশাল ভক্ত ছিলেন এমবাপে। সিআর সেভেনের বিশাল পোস্টার, তাঁর বাড়ি জুড়ে। স্বপ্ন দেখতেন, রোনাল্ডোর মতো একদিন ফুটবলটা খেলবেন। শনিবার সন্ধেয় আর্জেন্টিনাকে হারানোর পর কোয়ার্টার ফাইনালে সেই ‘গুরু’ রোনাল্ডোর মুখোমুখি পড়ারই একটা সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছিল। রাতে রোনাল্ডোর পর্তুগাল উরুগুয়েকে হারিয়ে দিলেই সে স্বপ্ন বাস্তবায়িত হত। কিন্তু তা আর হল না। তবে বিশ্ব মঞ্চে নিজের ‘গুরু’র রেকর্ডও এদিন চুরমার করে দিয়েছেন প্যারিজ সাঁ জাঁ তারকা। এক সুইজিশ টিভি চ্যানেলের দাবি অনুযায়ী, চলতি বিশ্বকাপে রোনাল্ডোর গতিকে টপকে গিয়েছেন তিনি।
এমনকী তুলনা টানতে আনতে হয়েছে থান্ডার বোল্টের নাম। বিশ্বের দ্রুততম উসেইন বোল্ট ঘণ্টায় ৪৪.৭২ কিমি বেগে দৌড়ান। শনিবার কাজান এরিনায় বল পায়ে ঘণ্টায় ৩৯ কিমি বেগে দৌড়েছিলেন এমবাপে। সেই গতি রুখতে বক্সে ফাউল করা হয়েছিল তাঁকে। তারপরও জোড়া গোল করে নায়ক হয়ে উঠতে সফল ফরাসি তরুণ তুর্কি।
The post মেসির ব্যর্থতার দিন জন্ম নয়া তারকার, পেলের কীর্তি ছুঁয়েও তুলনায় আপত্তি এমবাপের appeared first on Sangbad Pratidin.