সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ’৯৮ বিশ্বকাপজয়ী ফ্রান্স দলের অধিনায়ক তথা ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপজয়ী ফরাসি দলের কোচ দিদিয়ের দেঁশ বিশ্বকাপ ট্রফি নিয়ে উঠে এলেন দোহায় বিশ্বকাপ ড্র’য়ের মঞ্চে।
ড্র পরিচালনা করার জন্য ততক্ষণে মঞ্চে উঠে এসেছেন সামান্থা এবং জার্মেইন জেনাস। এরপর পট থেকে দেশগুলির নাম তুলে নেওয়ার জন্য এক এক করে ডেকে নেওয়া হল, ব্রাজিলের বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক কাফু, নাইজেরীয় তারকা জেজে ওকোচা, জার্মানির লোথার ম্যাথিউজ, ইরানের কিংবদন্তি আলি দাই, অস্ট্রেলিয়ার টিম কাহিল, কাতারের আদেল আহমেদ মালালা, আলেজেরিয়ার রাবাহ মাজের, আমেরিকার মহিলা বিশ্বকাপজয়ী ফুটবলার কার্লি লয়েড এবং সার্বিয়ান কিংবদন্তি কোচ বোরা মিলুটিনোভিচকেও।
শুরুতেই পট থেকে কাতারের নাম তুললেন কাফু। সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয়ে গেল কাতার বিশ্বকাপের আনুষ্ঠানিক ড্র। জেজে ওকোচা তুললেন গ্রুপের অবস্থান। তারপর এক এক করে কিংবদন্তিরা বিভিন্ন পট থেকে তুলে নিলেন এক একটি দেশের নাম। আর এভাবেই গ্রুপ ‘জি’তে ব্রাজিলের গ্রুপে পড়ল সার্বিয়া, সুইজারল্যান্ড আর ক্যামেরুন। গ্রুপ ‘সি’তে আর্জেন্টিনা, সৌদি আরব, মেক্সিকো এবং পোল্যান্ড। স্পেনের গ্রুপে জার্মানি আর জাপান। ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর পর্তুগালের গ্রুপে ঘানা, উরুগুয়ে আর কোরিয়া।
ড্র’ শুরুর আগের থেকেই সকলের নজর ছিল জার্মানি আর নেদারল্যান্ডসের দিকে। ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা কিংবা পর্তুগালের গ্রুপে পড়লে সেটাই হয়ে যেত ‘গ্রুপ অফ ডেথ’। কিন্তু ড্র শেষে দেখা যাচ্ছে, কাতার বিশ্বকাপে কোনও গ্রুপকেই আর ‘গ্রুপ অফ ডেথ’ বলা যাবে না। জার্মানি স্পেনের গ্রুপে পড়লেও নেদারল্যান্ডস পড়েছে কাতারের গ্রুপে। ফলে ড্রয়ের পর কোনও দলই নিজেদের গ্রুপ নিয়ে অহেতুক চাপে নেই।
গ্রুপ এ – কাতার, ইকুয়েডর, সেনেগাল, নেদারল্যান্ডস
গ্রুপ বি- ইংল্যান্ড, আইআর ইরান, ইউএসএ, ইউরো প্লে-অফ
গ্রুপ সি- আর্জেন্টিনা, সৌদি আরব, মেক্সিকো, পোল্যান্ড
গ্রুপ ডি- ফ্রান্স, আইসি প্লে-অফ, ডেনমার্ক, তিউনিশিয়া
গ্রুপ ই- স্পেন, আইসি প্লে-অফ ২, জার্মানি, জাপান
গ্রুপ এফ- বেলজিয়াম, কানাডা, মরক্কো, ক্রোয়েশিয়া
গ্রুপ জি- ব্রাজিল, সার্বিয়া, সুইজারল্যান্ড, ক্যামেরুন
গ্রুপ এইচ- পর্তুগাল, ঘানা, উরুগুয়ে, কোরিয়া রিপাবলিক
[আরও পড়ুন: হাসতে হাসতে জিতল রে…, উমেশের পেস ঝড় আর ‘মাসল’ রাসেলে কুপোকাত পাঞ্জাব]
বিশ্বকাপ ড্র শুরুর আগেই মঞ্চের পর্দায় ভেসে উঠল, চার প্রাক্তন কিংবদন্তির ছবি। মারাদোনা, গর্ডন ব্যাঙ্কস, পাওলো রোসি এবং গার্ড মুলার। প্রাক্তন এই চার কিংবদন্তি ফুটবলারের ভিডিও ক্লিপিংস মঞ্চের বড়পর্দায় ফুটে উঠতেই দোহা এক্সিবিশন অ্যান্ড কনভেনশন সেন্টারে উপস্থিত প্রাক্তন ফুটবলার, দেশ বিদেশের প্রতিনিধিদের চোখে জল। বিশেষ করে যখন প্রতিপক্ষ ফুটবলারদের ড্রিবল করে এগিয়ে যাওয়া মারাদোনার ভিডিও ক্লিপিংস দেখানো হল, সবাই যেন তখন শোকে বিহ্বল হয়ে পড়েছেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই দুই সঞ্চালক ইদ্রিস আলবা এবং রেশমিন চৌধুরি মঞ্চে চলে এলেন। উপস্থিত অভ্যাগতদের সামনে ঘোষণা করেলন, এই প্রথমবারের জন্য কাতার বিশ্বকাপের প্রথম অফিসিয়াল সং ‘হাইয়া হাইয়া’ জনসমক্ষে প্রচারিত হবে। ঘোষকের ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে মঞ্চে উঠে এলেন তিন শিল্পী। ত্রিনিদাদ কারদোনা, দাভিদো এবং আইশা। তারপর নাচের সঙ্গে বিশ্বকাপের অফিসিয়াল সং ‘হাইয়া হাইয়া’ গাইতে গাইতে তিন শিল্পী মাতিয়ে তুললেন পুরো কনভেনশন হল। বিশ্বকাপের অফিসিয়াল সং জনসমক্ষে প্রচারিত হওয়ার পরেই মঞ্চে উঠে এলেন ফিফা সভাপতি ইনফান্তিনো। রাশিয়া এবং ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধের আবহে, ফিফা ফুটবল থেকে বহু দূরে রেখে দিয়েছে রাশিয়াকে। আগেরদিন এই একই হলে অনুষ্ঠিত হওয়া ফিফা কংগ্রেসে, ফিফার কাছে যুদ্ধ বন্ধের জন্য ভারচুয়ালি আবেদন করেছিলেন ইউক্রেনের ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি। স্বাভাবিক ভাবেই শুক্রবার অফিসিয়াল সং প্রচারের পর ফিফা সভাপতি যখন বিশ্বকাপ ড্রয়ের মঞ্চে এলেন, তখন তাঁর দিকে তাকিয়ে পুরো বিশ্ব। কারণ, সবাই অপেক্ষা করছিলেন, ড্রয়ের মঞ্চ থেকে ইনফান্তিনো সারা বিশ্বকে কী বার্তা দেন, তা জানার জন্য। মঞ্চে উঠেই ইনফান্তিনো শুরুতে যুদ্ধ বন্ধের ডাক দেন। নিজের বক্তব্য শেষ করে মঞ্চে ডেকে নেন কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানিকে।
এরপরেই অনুষ্ঠানের সঞ্চালক ইদ্রিস আলবা মজা করে বলছিলেন, “বিশ্বকাপ জেতা তো খুব সহজ ব্যাপার। মাত্র সাতটা ম্যাচ জিততে পারলেই বিশ্বচ্যাম্পিয়ন! কিন্তু এই সাতটা ম্যাচ জেতার অতি সহজ কাজটা এখনও পর্যন্ত করতে পেরেছে মাত্র আটটা দল। আপনারা মনে করে দেখুন তো, এই আটটা দল কারা?’’ এরপরেই মঞ্চে এক এক করে আসেন বিশ্বফুটবলের মহানায়করা। শুরু হয় কাতার বিশ্বকাপের ড্র। যা হয়ে যাওয়ার পর মেসি, রোনাল্ডো, নেইমার সবাই নিশ্চিন্ত। বিশ্বকাপ শুরুর আগেই অন্তত গ্রুপের অন্ধকূপে পড়ে যেতে হয়নি।