দুলাল দে, দোহা: রোনাল্ডো (Cristiano Ronaldo) রয়েছেন দোহার একদম দক্ষিণে। আর মেসি (Lionel Messi) ঠিক উত্তরে। কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে। মূলত গবেষণাধর্মী কাজের জন্যই বিখ্যাত কাতারের এই একমাত্র সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ের সুউচ্চ প্রাচীরের ভিতরেই এই মুহূর্তে বিশ্বকাপের প্রস্তুতির জন্য মেসিদের গবেষণাগার। যে গবেষণাগারে নীরবে পুরো দলটাকে তৈরি করছেন স্কালোনি। কিন্তু আঁটসাঁট মোড়া নিরাপত্তায় সুউচ্চ প্রাচীরের ওপারের গবেষণাগারে রীতিমতো জল্পনা তৈরি হয়েছে লিওনেল মেসিকে ঘিরে। যিনি আর চারটে ম্যাচ খেললেই ছুঁয়ে ফেলবেন ১০০০ ম্যাচ খেলার অনন্য মাইলস্টোন।
দোহা আসা ইস্তক নিজেকে এতটাই রহস্যের মধ্যে রেখেছেন যে, মেসিকে ঘিরে প্রতি মুহূর্তে তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন জল্পনা। প্রথমদিন সংবাদমাধ্যমের সামনে দলের অন্যান্যদের সঙ্গে প্র্যাকটিসেই এলেন না। অনেকে ভাবলেন, প্রথম দিন বলেই হয়তো মেসিকে বিশ্রাম দিয়েছেন কোচ স্কালোনি। কিন্তু দ্বিতীয় দিন? সংবাদমাধ্যম ফের হাজির প্র্যাকটিসে। কিন্তু মেসি কোথায়? এবারও দেখা নেই তাঁর। নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরও যখন দেখা মিলল না, হাল ছেড়ে দিয়ে বেরিয়ে এল সংবাদমাধ্যম। আর ঠিক তখনই প্র্যাকটিসে হাজির মেসি!
[আরও পড়ুন: ইকুয়েডর অধিনায়কের জোড়া গোল, বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচে হার কাতারের]
তবে একা নন। সঙ্গী দলের দু’জন থেরাপিস্ট লিসান্দ্রো মার্তিনেজ ও পালাসিও। আর তাতেই সন্দেহটা আরও বেশ জোরদার হয়, তাহলে কি চোটের জন্য প্রথম ম্যাচে সৌদি আরবের বিরুদ্ধে খেলতে পারবেন না মেসি? কারণ, পেশির চোটের এই মাসেই একটা ম্যাচে মাঠের বাইরে ছিলেন তিনি। তাই মেসিকে প্র্যাকটিসে না দেখে চিন্তাটা বেড়েছিল সমর্থকদের। এদিন প্র্যাকটিসে আর ঢুকতেই দেওয়া হয়নি সংবাদমাধ্যমকে। মেসির প্র্যাকটিস দেখে ফের কিছু জল্পনা ডানা মেলুক, চাননি কোচ স্কালোনি। তবে বিশ্বজুড়ে নীল-সাদা সমর্থকদের জন্য এদিন ভাল খবর এল আর্জেন্টিনা শিবির থেকে।
মঙ্গলবার প্রথম ম্যাচে সৌদি আরবের বিরুদ্ধে শুরু থেকেই মাঠে নামবেন মেসি। স্কালোনি এদিন সংবাদমাধ্যমকে বলেন, “মেসিকে কী পরিমাণ চাপ নিয়ে মাঠে নামতে হয় শুধু আমরা জানি। ও প্র্যাকটিস করলে খবর। না করলে খবর। জোরে দৌড়লে খবর। আস্তে দৌড়লে খবর। এরকম চাপ নিয়েও ভীষণ ঠান্ডা মাথায় সব কিছু ম্যানেজ করে। আমাদের দলে সবার প্রিয়। আদর্শ নেতা।” শেষ ৩৬টা ম্যাচে অপরাজিত থাকার পর পুরো দলটার সঙ্গে স্কালোনির এতটাই সম্পর্কের গভীরতা তৈরি হয়েছে, তাতে অনেক আর্জেন্টিনার সাংবাদিককে দেখলাম, আর্জেন্টিনার দলকে ডাকছেন, ‘স্কালোনেতা’ বলে।
[আরও পড়ুন: ‘এই প্রেমহীন সময়ে বলছি তোমায় ভালবাসি,’ সব্যসাচী-ঐন্দ্রিলার রূপকথার সাক্ষী সমাজ]
কতদিন পর এরকম একটা শক্তিশালী দল নিয়ে আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপ খেলতে এসেছে, অনেকেই মনে করতে পারছেন না। আক্রমণে দি মারিয়া, লটারো মার্টিনেজ আর মেসিকে ছেড়ে দিন। গোলে রয়েছেন এমিলিয়ানো মার্টিনেজের মতো ফুটবলার। ডিফেন্সে রোমেরোর সঙ্গে অভিজ্ঞ ওটামেন্ডি। স্কালোনি তাই বলছেন, ‘‘ভাববেন না, বিশ্বকাপ জেতার জন্য আমাদের দল শুধুই মেসি-নির্ভর। দলের প্রতিটি পজিশনে ফুটবলার তৈরি রয়েছে।’’
এদিন দলের সঙ্গে মেসির পুরো প্র্যাকটিসের খবর শিবিরের বাইরে আসতেই আর্জেন্টিনার সাংবাদিকরা বলছেন, “স্কালোনির কোচিংয়ে মেসি সত্যিই খুশি রয়েছেন। সাবেয়া, কিংবা সাম্পাওলি দলের স্ট্র্যাটেজি ঠিক করতেন, মেসিকে মাথায় রেখে। আর স্কালোনির কোচিংয়ে মেসি তাঁর স্ট্র্যাটেজির একটা ভাগ মাত্র। এতে মেসির উপর থেকে চাপ অনেকটা কমে গিয়েছে। মন দিয়ে নিজের খেলাটা খেলতে পারছে।” বিশ্বকাপ জেতার জন্য এটাই শেষ সুযোগ মেসির। এবার না পারলে বিশ্বকাপ জেতার সুযোগ পরেও পাবে আর্জেন্টিনা। কিন্তু মেসি আর পাবেন না। ৩৫ বছরের মেসির এটাই শেষ সুযোগ। আর তাই দলের সেরা তারকাকে একদম তুলোয় মুড়ে রাখছেন স্কালোনি।