আকাশ মিশ্র: ট্রেন্ড বলছে, বক্স অফিসে এখন একটাই জিনিস চলছে, হরর-কমেডি। হিসেব কষলে দেখা যায়, 'স্ত্রী', 'স্ত্রী ২', 'ভেড়িয়া', 'মুঞ্জা' একের পর এক বক্স অফিসে টাকা গোটাতে একেবারে সফল। ঠিক সেই সময় দাঁড়িয়েই 'ভুলভুলাইয়া ৩'-র আগমন। এমনিতেই 'ভুলভুলাইয়া' বলিউডের ল্যান্ডমার্ক ছবি। তার উপর দুবছর আগে এই ছবির দ্বিতীয়ভাগের রেকর্ড ব্যবসা। সুতরাং 'ভুলভুলাইয়া ৩'(Bhool Bhulaiyaa 3) ছবির ঘাড়ে যে অত্যাধিক দায়িত্ব পড়েছিল, তা ছবির শুটিংয়ের সময় থেকেই স্পষ্ট ছিল এবং দিওয়ালি রিলিজ নিয়ে সিনেমা হলে বসে থাকা দর্শকরাও যে অত্যাধিক আশা করেছিলেন, তাও পরিষ্কার। কিন্তু আখেরে কি সেই আশা মিটল? দুভাগ পেরিয়ে তৃতীয়ভাগে কি নতুন কিছু দিতে পারল 'ভুলভুলাইয়া ৩'?
ঠিক ১৭ বছর আগে মুক্তি পায় 'ভুলভুলাইয়া'। যা কিনা সাইকোলজিক্যাল থ্রিলারের ঘরানাকে মেনেই তৈরি করেছিলেন পরিচালক প্রিয়দর্শন। হঠাৎ করেই ২ বছর আগে পরিচালক অনীশ বাজমি 'ভুলভুলাইয়া'কে করে তুললেন হরর-কমেডি। প্রথম ছবি থেকে ধার করলেন আইকনিক 'মঞ্জুলিকা' এবং 'আমি যে তোমার'। আর বাদ বাকিটা সাজালেন একেবারে নিজের কায়দায়। যে কায়দা 'নো এন্ট্রি', 'সিং ইজ কিং' ও 'ওয়েলকাম' ছবিতে দেখতে পাওয়া যায়। 'ভুলভুলাইয়া ৩'-এর ক্ষেত্রেও মোটামুটি সেই ফর্মুলাই রাখলেন পরিচালক অনীশ। বলা ভালো 'ভুলভুলাইয়া ৩'- ছবির প্রথম দেড় ঘণ্টায় পরিচালক গুরুত্ব দিলেন কমেডিকেই। মঞ্জুলিকা এল, কিন্তু চিত্রনাট্য়ের কারণে নড়বড়ে ভাবে।
'ভুলভুলাইয়া ৩'র গল্প, দুই বোন মঞ্জুলিকা-অঞ্জুলিকা, ভাই দেবেন্দ্রকুমার এবং রাজ সিংহাসন দখলের। মঞ্জুলিকা-অঞ্জুলিকা একাধারে যোদ্ধা ও দুরন্ত নৃত্যশিল্পী। কিন্তু তবুও রাজ সিংহাসন জোটে রাজকুমার দেবেন্দ্রর কপালে। ব্যস, হিংসার আগুন। বদলা। ক্ষমতার লড়াই। আর সঙ্গে পরিচালক টেনে আনেন, ভয়ের ছবির পুরনো ফর্মুলা পুর্নজন্মকে। যেখানে মঞ্জুলিকা-অঞ্জুলিকা হয়ে ওঠেন মন্দিরা (মাধুরী দীক্ষিত) এবং মলিকা (বিদ্যা বালান)। ভাবছেন আসল গপ্পোটাই ফাঁস করে দিলাম? নাহ, 'ভুলভুলাইয়া ৩'-এ আর বড় টুইস্ট রয়েছে। যে টুইস্টই 'ভুলভুলাইয়া ৩' ছবির আসল মারপ্যাঁচ। এই টুইস্টই 'ভুলভুলাইয়া ৩'-র প্রথমভাগের একঘেয়ে চিত্রনাট্যকে ভুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছে। আবার এই টুইস্টই এই ছবির বড় দুর্বলতাও বটে।
পরিচালক অনীশ বাজমি এবং চিত্রনাট্যকার আকাশ কৌশিক ছবির ক্লাইম্যাক্সে টেনে নিয়ে এসেছেন খুবই সংবেদশীল একটি বিষয়কে। তবে বিষয় সংবেদনশীল হলেও, অনীশের উপাস্থাপনা ততটা নয়। বলা ভালো অযত্নে বোনা। হরর-কমেডির মধ্য়ে দিয়ে যে বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন অনীশ, তা শুধুই ক্লাইম্যাক্সে। পরিবর্তে গোটা ছবির মধ্যেই তা ছড়িয়ে দিতে পারতেন। তাহলে হয়তো অনেক বেশি গুরুত্ব পেত। ঠিক যেমন 'স্ত্রী' এবং 'স্ত্রী ২'-র ক্ষেত্রে ঘটে। কিন্তু অনীশ 'ভুলভুলাইয়া ৩'-এ সেটা করলেন না। বরং এক সংবেদনশীল বিষয়কে ব্যবহার করলেন শুধুমাত্রই ছবির চমক হিসেবে ।
'ভুলভুলাইয়া ৩' ছবি হতে পারত বলিউডের আরেকটি ল্যান্ডমার্ক ছবি। কেননা, একফ্রেমে মাধুরী দীক্ষিত এবং বিদ্যা বালানকে পেয়ে অসাধারণ কিছু মুহূর্ত তৈরি করতে পারতেন অনীশ। কিন্তু পরিচালক অনীশ সেই ম্যাজিকটা রাখলেন শুধুই 'আমি যে তোমার' গানে। বাদ বাকি ছবিটায় বিদ্য়া যেন থেকে গেলেন সেই ১৭ বছর আগের মঞ্জুলিকা হয়ে (ভুলভুলাইয়া ছবির সঙ্গে অবশ্য কোনও যোগাযোগ নেই। ) আর মাধুরী, মঞ্জুলিকা হলেন বটে, কিন্তু মনে করালেন সেই 'দেবদাস'কে। দুজনের অভিনয়ের ধারকে ব্যবহারই করলেন না পরিচালক।
কার্তিক আরিয়ান তথৈবচ। ঠিক আগের ছবির মতোই। তৃপ্তি দিমরির তেমন কিছু করার ছিল না। কাঞ্চন মল্লিকের মুখে তেমন কোনও সংলাপ নেই। শুধুই হুইল চেয়ারে বসেই থাকলেন ছবি জুড়ে। রাজপাল যাদব, অশ্বিনী কালসেকর এবং সঞ্জয় মিশ্র চিত্রনাট্যের নিয়ম মেনে চলেছেন। দু-একটা দৃশ্যেই হাসাতে পেরেছেন তাঁরা।
'ভুলভুলাইয়া ৩' আসলে এমন একটা ছবি যা দেখতে ঝকঝকে হয়েও, অন্তঃসারশূন্য। বলা ভালো অধিক সন্ন্যাসীতে নষ্ট হয়েছে 'ভুলভুলাইয়া ৩'। একঝাঁক দুরন্ত অভিনেতাদের নিয়ে যে কামাল দেখাতে পারতেন অনীশ, সেখানেই যেন গণ্ডগোল করে ফেললেন। ছবির দৈর্ঘ্য আড়াই ঘণ্টার থেকে একটু বেশি হয়েও, এই ছবি না হাসাতে পারল, না পারল ভয় দেখাতে। এমনকী, ছবি শেষে 'বিশেষ' সামাজিক বার্তা দিতে গিয়েও দুর্বল হয়ে পড়ল 'ভুলভুলাইয়া ৩'।
ছবি: ভুলভুলাইয়া ৩
অভিনয়: বিদ্যা বালান, মাধুরী দীক্ষিত, কার্তিক আরিয়ান, তৃপ্তি দিমরি
পরিচালক: অনীশ বাজমি