সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: মেয়েকে হাসপাতালে শুয়ে যন্ত্রণায় কাতরাতে দেখেছেন। সেই কষ্টের মাঝেই একদিন সব শেষ। চোখের সামনে মৃত্যু দেখেছেন সন্তানের। সেই থেকে শুরু মানসিক লড়াই। সঙ্গে পাশবিক অত্যাচারীদের বিরুদ্ধে চলেছে আইনি লড়াই। সুবিচারের আশায় বারবার এ আদালত থেকে সে আদালতে দৌড়ে গিয়েছেন। কখনও মনে হয়েছে এবার বুঝি অপরাধীরা শাস্তি পাবে। তো আবার পরক্ষণেই এজলাসে দাঁড়িয়ে শুনতে হয়েছে দোষীদের আইনজীবীর কড়া শাসানি। ‘কিছুতেই ফাঁসি হবে না চার দোষীর’, ধর্ষকদের আইনজীবীর মুখ থেকে একথা শুনে মনে হয়েছিল বোধহয় পায়ের তলার মাটি সরে গেল। নির্ভয়ার মা আশাদেবী কান্নায় ভেঙে পড়েছেন একাধিকবার। যতবার ভিতরে ভিতরে ভেঙেছেন, ততই যেন ভেজা চোখ শক্তি জুগিয়েছে তাঁকে। লড়াই চালিয়ে গিয়েছেন নির্ভয়ার বাবা-মা। সাত বছর তিন মাস পর অবশেষে মিলল সুবিচার। দেরিতে হলেও সুবিচার পেয়ে বেজায় খুশি সন্তানহারা বাবা-মা।
২০১২ সালের ১৬ ডিসেম্বর শেষবার সুস্থ মেয়ের সঙ্গে কথা হয় নির্ভয়ার মায়ের। রাতের দিল্লিতে বাসে চড়ে বাড়ি ফেরার পথে গণধর্ষণের শিকার হন প্যারামেডিক্যালের ছাত্রী। চলন্ত বাসে গণধর্ষণের পর তরুণীর যৌনাঙ্গে ঢুকিয়ে দেওয়া হয় রড। রক্তাক্ত অবস্থায় বাস থেকে ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া হয় নির্ভয়াকে। বাধা দিতে গিয়ে আক্রান্ত হন নির্ভয়ার বন্ধুও। গুরুতর জখম অবস্থায় হাসপাতালে ভরতি করা হয় তাঁদের। কিন্তু ১৩ দিনের দীর্ঘ যমে-মানুষের লড়াইয়ে হার মানেন নির্ভয়া। ২৯ ডিসেম্বর মৃত্যু হয় তাঁর। নির্মম ঘটনার ৭ বছর ৩ মাস পর শুক্রবার কাকভোরে তিহাড় জেলে ফাঁসিকাঠে ঝুলল চার ধর্ষক। এত বছর পর সুবিচার পাওয়ার দিন হাসিমুখে দেখতে পাওয়া যায় নির্ভয়ার মাকে।
[আরও পড়ুন: করোনা রুখতে নয়া উদ্যোগ, রবিবার জনতা কারফিউ জারির আহ্বান মোদির]
তিনি বলেন, “আমি মেয়েকে বাঁচাতে পারিনি। তবে সুবিচার দিতে পারলাম। এই দিনটার জন্য অপেক্ষায় ছিলাম। দেরিতে হলেও সুবিচার পেয়েছি। আইনে কিছু বদল আনার প্রয়োজন। আজকের দিন নির্ভয়ার। মেয়ের জন্য গর্বিত। ওর জন্য আমাকে সকলে আজ নির্ভয়ার মা বলে চেনেন। সকলের কাছে অনুরোধ অন্যায় দেখলে এগিয়ে আসুন। সমাজের প্রত্যেক মেয়ের জন্য লড়ে যাব।”
মেয়ের ধর্ষকদের ফাঁসির দিনে স্বস্তিতে নির্ভয়ার বাবাও। তিনি বলেন, “মেয়ে নেই। তবে আমার মেয়ে নিশ্চয়ই বুঝতে পারছে আজ আমরা কতটা খুশি। আমাদের খুশি হতে দেখলে ও খুব খুশি হবে। আজ নির্ভয়ার দিন।” ন্যায়দিবস হিসাবে আজকের দিনটিকে পালনের দাবি জানিয়েছেন তিনি। সন্তানকে হারিয়ে নিঃসঙ্গ বাবা-মা। সাত বছরে মেনে নিয়েছেন কঠিন সত্যি। তাঁরা জানেন আর কোনওদিন আগের মতো কাছে ফিরে পাওয়া যাবে না মেয়েকে। তবে সন্তান হারানোর যন্ত্রণার মাঝে সুবিচারই যেন নির্ভয়ার বাবা-মায়ের ক্ষতে মলমের মতো কাজ করছে।
The post ‘মেয়েকে বাঁচাতে পারিনি, সুবিচার দিতে পারলাম’, ৪ ধর্ষকের ফাঁসিতে নির্ভয়ার মায়ের মুখে জয়ের হাসি appeared first on Sangbad Pratidin.