রঞ্জন মহাপাত্র, কাঁথি: গিফট জাতের তেলাপিয়া মাছের চাষে মোটা টাকা আয়ের হাতছানি রয়েছে৷ কিন্তু চাষ করতে হবে নিয়ম মেনে। নইলে গোটা পরিশ্রমই পণ্ডশ্রমে পরিণত হবে।
পুকুর নির্বাচন ও প্রস্তুতি: মাসে চার থেকে ছ’মাস জল থাকে এমন পুকুর নির্বাচন করা যেতে পারে। নার্সারি পুকুর ১৫ থেকে ২০ ডেসিমেল আয়তনের ও লালন পুকুর ২০ থেকে ১০০ ডেসিমেল আয়তন হলে ভাল। তবে এর থেকে কিছুটা ছোট বড় হলেও চলবে। পুকুরের পাড় মেরামত করতে হবে ও পাড়ে গাছ-পালা থাকলে তার ডালপালা কেটে দিতে হবে। পুকুরে জল শুকিয়ে যেতে দেখলে অবাঞ্ছিত মাছ ও অন্যান্য প্রাণী সরিয়ে দিতে হবে। পুকুরের তলার অতিরিক্ত কাদা তুলে দিতে হবে। এর পর প্রতি ডেসিমেলে এক কিলোগ্রাম হারে চুন দিতে হবে। চুন প্রয়োগের তিন-চারদিন পর জলাশয়ে নতুন জল ভরতে হবে। চুন প্রয়োগের সাতদিন পর ডেসিমেলে ছ’কিলোগ্রাম গোবর অন্তত তিনদিন পচিয়ে রেখে দিতে হবে। তারপর ১০০ গ্রাম ইউরিয়া ৭০ গ্রাম সিঙ্গল সুপার ফসফেট দিতে হবে। সার প্রয়োগের দু-তিনদিন পর পুকুরের জল হাল্কা সবুজাভ-বাদামী রঙের হলে মাছ ছাড়তে হবে।
[ আরও পড়ুন: আগামী জুনে বিদেশযাত্রা মালদহের আমের, খুশি কৃষকরা]
পুকুরে পোনা মজুত: আঁতুড় পুকুরে ২০ থেকে ২৫ গ্রাম ওজনের মাছ প্রতি ডেসিমেলে দেড় থেকে দু’হাজারটি পোনা মজুত করা যায়। পোনা ১০-১৫ গ্রাম ওজনের হলে লালন পুকুরে ২৫০টি সুস্থ-সবল পোনা মজুত করা যাবে। সুতরাং, আধা নিবিড় পদ্ধতিতে একক চাষ করলে ২০০- ৩০০টি গিফট তেলাপিয়ার পোনা এবং অন্যন্য মাছের মাছের সঙ্গে মিশ্র চাষ করলে তেলাপিয়া ১০০-১৫০টি মজুত করা যায়।
মাছের খাদ্য: পুকুরে মাছ চাষের সময় মাছের সম্পূরক খাদ্য প্রয়োগ করতে হবে। পুকুরে পোনা ছাড়ার একদিন পর থেকে প্রতিদিন পুকুরে মজুত মাছের ওজনের ৪-৬ ভাগ হারে চালের কুড়া দিতে হবে। পুকুরের মাছ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে মাছের খাদ্য হিসেবে পরিচিত যে কোনও ধরনের খাবারই দেওয়া যেতে পারে। সাধারণত আঁতুড় পুকুর থেকে মজুত পুকুরে চাষের ক্ষেত্রে এক কেজিতে পাঁচ হাজার, চার হাজার, তিন হাজার, দুই হাজার, এক হাজার, আটশো, পাঁচশো, তিনশো, একশো, আশি, ষাট, পঞ্চাশ, চল্লিশ, তিরিশ, কুড়ি, দশ, পাঁচ ও দুই গ্রাম ওজন মাছের চারা থাকলে মাছের গড় দেহ ওজনের যথাক্রমে ১০০% , ৭৫%, ৫০%, ৪০%,৩৫%, ৩০%, ২৫%, ২০%, ১৫%, ১০%, ৮%, ৭%, ৬%, ৫%, ৪%, ৩%, ২.৫%, ২% হারে কৃত্রিম খাবার দিনে চারবার থেকে কমে কমে দু’বার করে প্রয়োগ করতে হবে। নার্সিং এ ৪-৫ সপ্তাহ এবং পরে লালন কালে ২৫-৩০% প্রোটিন সমৃদ্ধ ভাসমান খাবার প্রয়োগ করতে হয় এতে ফলন আরও ভাল হয়।
[ আরও পড়ুন: বাজারে যাওয়ার বদলে বাড়িতেই করুন ক্যাপসিকাম চাষ, জেনে নিন পদ্ধতি]
অন্যান্য ব্যবস্থাপনা:
১) প্রতি সাত থেকে ১০ দিন পর পর জাল টেনে মাছের বৃদ্ধি পর্যবেক্ষণ করে খাবারের পরিমাণ নির্ধারণ করতে হবে। খাবার প্রয়োগের ১ ঘন্টা পর পুকুর পর্যবেক্ষণ করা উচিত। যদি পুকুরে খাবার পাওয়া যায় তাহলে বুঝতে হবে পুকুর অথবা মাছের কোনও সমস্যা হয়েছে অথবা খাবার বেশি দেওয়া হচ্ছে। একটানা মেঘলা আবহাওয়া কিংবা অতিরিক্ত বৃষ্টি হলে খাবারের পরিমাণ কমিয়ে দিতে হবে অথবা খাবার দেওয়া বন্ধ রাখতে হবে।
২) পোনা মজুতের এক মাস পর থেকে প্রতি ডেসিমেলে এক মিটার জলের গভীরতায় ১০০গ্রাম চুন প্রয়োগ করতে হবে । জলের পি এইচ দেখে পরিমাণ কম বেশি করতে হবে।
৩) জলজ পাখি এক পুকুর থেকে অন্য পুকুরে রোগ জীবাণু ছড়িয়ে দেয়। তাই, পুকুরে পাখির অনুপ্রবেশ বন্ধের জন্য সারা পুকুরের উপর আড়াআড়ি ভাবে রঙিন রশ্মি বেঁধে ঝুলিয়ে দেয়া যেতে পারে।
[ আরও পড়ুন: গ্রীষ্মের প্রখর তাপে লক্ষ্মীলাভের উৎস এই সবজিগুলি]
মাছ আহরণ ও উৎপাদন: আধা-নিবিড় পদ্ধতিতে চাষ করলে এক গ্রাম ওজনের গিফট তেলাপিয়া ১০০ দিনে ৩৫০-৪৫০ গ্রাম ওজন হবে। জাল টেনে ও পুকুর শুকিয়ে মাছ ধরতে হবে।
বিক্রি বা বাজার: বর্তমানে বাজারে তেলাপিয়া মাছের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। ১০০ গ্রাম ওজনের তেলাপিয়া কম করে হলেও পাইকারি হিসাবে পুকুর থেকেই ৮০ থেকে ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে পারবেন। তার বেশি ওজনের হলে আনুপাতিক হারে দামও বাড়বে। আর সরাসরি বাজারে খুচরো হিসাবে বিক্রি করলে কম করে ১৫০ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৩০০ টাকা কিলো দরে বিক্রি সম্ভব। এই মাছ যেহেতু খুব অল্প সময়ে বাড় তাই বছরে তিন থেকে চারবার মাছ তুলে বিক্রি করা সম্ভব। ফলে নিয়ম মেনে তেলাপিয়া মাছের চাষ করলে ভাল আয়ের সুযোগ রয়েছে।
The post তেলাপিয়া চাষে মোটা টাকা আয়ের হাতছানি, জেনে নিন পদ্ধতি appeared first on Sangbad Pratidin.