shono
Advertisement

Breaking News

উত্তরবঙ্গ থেকে হারানো ১৬ প্রজাতির নদীয়ালি মাছ ফেরানোর উদ্যোগ, কী পদক্ষেপ মৎস্য দপ্তরের ?

কোন পদ্ধতিতে ফেরানো হবে মাছ?
Posted: 02:42 PM Apr 20, 2022Updated: 02:42 PM Apr 20, 2022

বোরোলি স্বাদ হারিয়েছে অনেক আগেই। বর্তমানে উত্তরের নদীগুলো থেকে ষোলোটি প্রজাতির মাছ একেবারে উধাও! কেন এমন দশা? তিস্তা, তোর্সা, জলঢাকা, মানসাই, সঙ্কোশ, আত্রেয়ী নদীতে ওই সব মাছ ফিরিয়ে আনতে কি ব্যবস্থা নিচ্ছেন মৎস্য গবেষকরা, কোন পদ্ধতি অবলম্বন করছেন তাঁরা? তার খোঁজখবরে বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য।

Advertisement

দ্বিতীয় পর্ব (পড়ে নিন প্রথম পর্ব)

তিন দশকে উত্তরের নদীগুলোর নাব্যতা কমেছে উদ্বেগজনক হারে। নেমেছে জলস্তর। অন্যদিকে বেড়ে চলা দূষণের কামড়ে প্রতিটি নদীর বাস্তুতন্ত্র ভেঙে চুরমার হওয়ার পথে। উচ্ছন্নে যেতে বসেছে নদীয়ালি মাছের ঘর সংসার। মহানন্দা, পাঙ্গা, জরদা, কুমলাইর মতো কিছু নদী এখন সাক্ষাৎ বিষকন্যা। সেখানে উধাও হয়েছে মাছ ও জলজ উদ্ভিদ। পরিস্থিতি সামাল দিতে সচেতনতা অভিযান, গবেষণা, প্রযুক্তির ব্যবহার চলছে। যদিও মৎস্য দপ্তরের আধিকারিক ও গবেষকদের একাংশ নদীতে মাছ শিকার ও বর্জ্য ভাসিয়ে দেওয়ার উপরে কড়া বিধি নিষেধ আরোপের পক্ষে সওয়াল করছেন।

যেমন, কালিম্পং জেলা মৎস্য আধিকারিক পার্থসারথি দাস বলেন, “নদীয়ালি মাছের বিভিন্ন প্রজাতি রক্ষার প্রয়োজনে নদী চিহ্নিত করে মাছ ধরা ও বর্জ্য নিক্ষেপে কড়া আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি হয়ে পড়েছে।” একমত পশ্চিমবঙ্গ প্রাণী ও মৎস্য বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন জলপাইগুড়ি কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রের মৎস্য গবেষক ইন্দ্রনীল ঘোষও। তিনি নিজস্ব পদ্ধতিতে তৈরি বাঁশের খাঁচা নদীর জলে বসিয়ে যথেচ্ছ মাছ শিকারে রাশ টানার পথও খুঁজছেন। গবেষকের কথায়, “খাঁচাগুলো মৎস্যজীবীদের দেওয়া হবে। ওঁরা জলে পাতবেন। সেখানে মাছ ঢুকে বসবাস শুরু করলে নদীতে যেখানে সেখানে মাছ ধরা বন্ধ হবে।”

[আরও পড়ুন: আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে চাষ করলে বাড়বে আয়, খুঁটিনাটি জানালেন বিশেষজ্ঞরা]

মৎস্য দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, নদীর উপরে চাপ কমাতে বিকল্প রোজগারের পথ দেখাতে মৎস্যজীবীদের সাইকেল, মাছ বহনের বাক্স দেওয়া হচ্ছে। তারা যেন নদীতে না নেমে পুকুরের মাছ কিনে ফেরি করেন। কিন্তু ওই পদক্ষেপে খুব একটা যে সুফল মিলছে না মৎস্য দপ্তরের আধিকারিকদের বক্তব্যে স্পষ্ট। কোচবিহার জেলা মৎস্য আধিকারিক সম্পদ মাঝি বলেন, “নদীতে বেশি মাছ ধরলে সমস্যা বাড়ে। সেটাই হচ্ছে। আমরা সব দিক থেকে চেষ্টা করছি। কিন্তু মানুষ সচেতন নয়।” মানুষের সচেতনতার অভাবেই যে নদীতে বাড়ছে দূষণ, তা মানছেন গবেষকরাও। পশ্চিমবঙ্গ প্রাণী ও মৎস্য বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন জলপাইগুড়ি কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রের মৎস্য গবেষক ইন্দ্রনীলবাবু জানান, পয়েন্ট সোর্স এবং নন পয়েন্ট সোর্স দু’দিক থেকে নদী দূষণ বেড়েছে। পয়েন্ট সোর্সের মধ্যে রয়েছে শহরের নিকাশিনালার জল শোধন না করে নদীতে ফেলে দেওয়া। হাসপাতাল, শিল্পের বর্জ্য নদীতে ভাসানো। ওই কারণে জলে মিশছে সালফার ডাই অক্সাইড, মার্কারির মতো মারাত্মক রাসায়নিক। নন পয়েন্ট সোর্সের মধ্যে আছে প্লাস্টিক, থার্মোকল দূষণ। এর পরে রয়েছে ইলেকট্রো ফিসিং।

ইন্দ্রনীলবাবু বলেন, “একে নদীগুলোর নাব্যতা কমেছে। তার উপর দূষণের জেরে নদীর জল বিষাক্ত হচ্ছে। যে কারণে মাছ টিকতে পারছে না।” যেমন, শিলিগুড়ির ‘লাইফলাইন’ মহানন্দা এখন রাজ্যের অন্যতম দূষিত নদী হিসেবে চিহ্নিত। সেখানে বেড়েছে জলের অম্লতা। অক্সিজেনের পরিমাণ ক্রমশ কমছে। পরিণতিতে ভেঙে চুরমার হয়েছে নদীর বাস্তুতন্ত্র। গ্রিন ট্রাইবুনালের নির্দেশে সম্প্রতি মহান্দাকে বাঁচাতে পদক্ষেপ করেছে রাজ্য। নদীয়ালি মাছ ও পাখি সমীক্ষার কাজ করছে হিমালয়ান নেচার অ্যান্ড অ্যাডভেঞ্চার ফাউন্ডেশন। সংস্থার মুখপাত্র অনিমেষ বসু বলেন, “মহানন্দা অভয়ারণ্য থেকে বের হয়ে শিলিগুড়ি শহরের পেট চিরে প্রায় ১৫ কিলোমিটার বয়ে গিয়েছে মহানন্দা নদী। দু’মাস ধরে সেখানে মাছ সমীক্ষা চলছে। দূষণের জেরে ফুলবাড়ির আগে নদীর দীর্ঘ পথে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ সহ জলজ উদ্ভিদ প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়েছে।” তবে সমীক্ষা হলে আরও কিছু নদীতে একই ছবি মিলবে বলে দাবি গবেষকদের।

[আরও পড়ুন: উত্তরবঙ্গে উধাও ১৬ প্রজাতির নদীয়ালি মাছ! গবেষণায় উঠে এল চাঞ্চল্যকর তথ্য]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement