বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য: টানা বৃষ্টির জেরে বিপর্যস্ত সিকিম। এমনাবস্থায় খারাপ আবহাওয়ার ফলে সিকিমে তিন দিনের জন্য বন্ধ করা হল বিমান পরিষেবা। আগেই উত্তরবঙ্গের সঙ্গে যোগাযোগকারী ১০ নম্বর জাতীয় সড়কে ধস নেমে সড়ক পথে যোগাযোগ বন্ধ। ঘুরপথে বিকল্প রাস্তাও বন্ধ রয়েছে। এদিকে দক্ষিণ সিকিমের জোরথাং-এ ফুড কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়ার (এফসিআই) মজুতেও টান পড়তে শুরু করেছে বলে জানা গিয়েছে। সব মিলিয়ে ত্রিফলায় বিদ্ধ সিকিম।
শনিবার জানানো হয়েছে ঘন কুয়াশা, বর্ষণমুখর আবহাওয়ার জন্য তিনদিনের জন্য বিমানবন্দর এবং হেলিকপ্টার পরিষেবা বন্ধ রাখা হচ্ছে। এদিকে প্রায় ১৪ দিন ধরে অবরুদ্ধ শিলিগুড়ি-সিকিম যোগাযোগের 'লাইফ লাইন' ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক। ঘুরপথের গাড়ি চলাচলকারী আলগারা-লাভা রাস্তাও ১৪ তারিখ পর্যন্ত বন্ধ রয়েছে। এবার বন্ধ করা হল বিমান পরিষেবা। ফলে দেশের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে সিকিমের যোগাযোগ ছিন্ন। কার্যত বিছিন্ন দ্বীপে পরিণত হয়েছে সিকিম।
[আরও পড়ুন: খাস কলকাতায় মাটি খুঁড়ে উদ্ধার মহিলার দেহ, চাঞ্চল্য কাশী বোস লেনে]
এই পরিস্থিতিতে সিকিমের ব্যবসা-বাণিজ্য, নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর আমদানি প্রায় বন্ধ। ইতিমধ্যেই সিকিম প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরুদ্ধ থাকায় প্রতিদিন ১০০ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে। লোকসানের অঙ্ক আগামী দিনে বাড়বে বলেই মনে করা হচ্ছে। পাশাপাশি প্রভাব পড়ছে পর্যটন শিল্পেও। উত্তর সিকিমের বিধ্বস্ত অবস্থার জন্য ট্যুর অপারেটররা পুজোর বুকিং নিতে অস্বীকার করছেন। সব মিলিয়ে পর্যটন নির্ভর সিকিমের অর্থনীতিতে বিরাট ধাক্কার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
শুধু কি লোকসান? নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর ভাড়ারেও টান পড়েছে। জানা গিয়েছে, দক্ষিণ সিকিমের জোরথাংয়ে ফুড কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া (FCI) গুদামে মজুত খাদ্যশস্যে টান পড়তে শুরু করেছে। উদ্বেগজনক সমস্যার স্থায়ী সমাধানের দাবিতে ইতিমধ্যেই সরব হয়েছেন সিকিমের মুখ্যমন্ত্রী প্রেম সিং গোলে। তিনি প্রধানমন্ত্রী, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, সড়ক যোগাযোগ মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে কেন্দ্রীয় সরকারের হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন।
এই দুর্যোগের কিছুটা প্রভাব পড়েছে উত্তরবঙ্গেও (North Bengal)। অন্ত্যত পনেরো দিন ধরে অতিভারী বৃষ্টি চলছে সিকিম ও উত্তরের সমতলের পাঁচ জেলায়। টানা বৃষ্টির জেরে ফুঁসছে তিস্তার জল। কালিঝোরা, গেইলখোলা, বিরিকদাড়া, ২৯ মাইল, লোহাপুলে রাস্তার অনেকাংশ গিলে নিয়েছে ভয়ংকর তিস্তা। কালিঝোরা থেকে মেল্লি পর্যন্ত ২৬ কিলোমিটার রাস্তার হাল বেহাল। এখানে রবিঝোরা, লিকুবির, ২৯ মাইল, গেইলখোলায় অবিরাম ধস নেমে চলেছে। প্লাবিত হয়েছে তিস্তা বাজার এলাকাও। বৃষ্টি যদি না থামে বড় বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন স্থানীয় বাসিন্দা ও প্রশাসন। যদিও পরিস্থিতি মোকাবেলায় তৈরি রয়েছে প্রশাসন।