নির্মল ধর: কয়েক বছর আগেও দক্ষিণী ছবির নকল করে অন্তত খান তিরিশেক ছবির প্রযোজক-পরিচালক বাংলা সিনেমাকে ভাল ব্যবসা দিয়েছিলেন। কপি-পেস্টের তকমা নিয়েও তাঁরা আরামদায়ক গদিতে বেশ নিশ্চিন্ত ছিলেন! কপি মাস্টার হিসেবে দু-চারজন পরিচালক জামার কলার তুলে ঘুরতেন। তাঁদের বাজারি সাফল্য এখনও ঈর্ষণীয়। কিন্তু শুক্রবার ‘ফ্লাইওভার’ (Flyover) নামের যে বাংলা ছবিটা দেখলাম তার মূল দক্ষিণী সংস্করণটি বছর খানেক আগেই দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। ছবিটির বিষয় খুবই সাধারণ, এতটুকু জটিলতা নেই, অতি তুচ্ছ একটি ঘটনাকে নিয়ে দুর্দান্ত একটি থ্রিলার বানিয়েছিলেন কন্নড় পরিচালক পবন কুমার (Pawan Kumar)। আশ্চর্য ঘটনা হল, এই একই কাহিনি নিয়ে মালয়ালম, তামিল, তেলুগু, এমনকী ফিলিপিনো ভাষাতেও ছবি হয়েছে এই চার বছরের মধ্যে। বাংলায় হল প্রথম, নাম দেওয়া হয়েছে ‘ফ্লাইওভার’।
বেঙ্গালুরুর লোকেশনকে এখানে কলকাতার লেক ফ্লাইওভারে বদলে দেওয়া হয়েছে। বাকি গল্পকে অপরিবর্তিত রেখেই চিত্রনাট্যে কিছুটা বাঙালিয়ানা ঢুকিয়ে তৈরি বাংলা ছবিটি। মূল ছবিতেও অপরাধী চিহ্নিত করার পাশাপাশি দুর্ঘটনায় মৃত স্ত্রীর প্রেতাত্মা নিয়ে আসার বিষয়টি বড়ই অস্বস্তিকর এবং যুক্তিগ্রাহ্য নয়। বাংলার দর্শক খুনের সঙ্গে অশরীরীর ক্রিয়াকলাপ মেনে নিতে পারবে না। ঘটনা অতি তুচ্ছ। রাস্তা শর্টকাট করার জন্য কিছু বাইক আরোহী মাঝে মাঝে রাস্তার মাঝখানের ডিভাইডার গুলো সরিয়ে উলটো পথে চলে যান। সরানো ডিভাইডার পরে থাকে মাঝখানে। আর দূর্ঘটনা ঘটে সেখানেই। এটুকু পর্যন্ত বিশ্বাস্য থাকে ঘটনা। কিন্তু যখন এই দুষ্কৃতকারী আরোহী একের পর এক খুন হতে থাকে, তখনই ময়দানে উপস্থিত হন তরুণী সাংবাদিক বিদিশা (কোয়েল মল্লিক) এবং তাঁর সতীর্থ বন্ধু। অনুসন্ধানে জড়িয়ে পড়েন এক তরুণ পুলিশ অফিসারও। রহস্যের জট ছাড়ালে যে সত্য বেরিয়ে আসে, সেটা আজগুবি, ভিত্তিহীন, অবৈজ্ঞানিক ছাড়া কিছু নয়।
[আরও পড়ুন: ‘মোদি দশ লাখি সুটই পরেন না, মানুষকেও ১৫ লক্ষ টাকার টুপিও পরান’, খোঁচা তৃণমূল প্রার্থী লাভলির]
পরিচালক অভিমন্যু মুখোপাধ্যায় (Abhimanyu Mukherjee) মূল চিত্রনাট্যের বাঁধুনি থেকে খুব একটা সরে থাকেননি। তবে এমন মূলানুসারি হওয়ার ফলে ছবিটি বেশ টানটান উত্তেজনার, রহস্য ধরে রাখতে পেরেছেন প্রায় শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত। এই কৃতিত্ব পরিচালক অভিমন্যু পাবেন না, পাবেন মূল চিত্রনাট্যকার পবন কুমার। শুধু ঝরঝরে করে পরিবেশনার দায়টুকু পেতে পারেন অভিমন্যু। অনুপম রায়ের (Anupam Roy) আবহ চলতি থ্রিলারের বাইরে বলেই ভাল লাগে। একটি গানকেই তিনি টুকরো টুকরো ভাবে সুন্দর ব্যবহার করেছেন। গানটি না থাকলেও কোনো ক্ষতি হত না। কোয়েল (Koel Mullick) হয়েছেন সাংবাদিক বিদিশা। বেশ ঝলমলে লাগল তাঁকে। খুবই স্বাভাবিক ও স্বতস্ফূর্ত। দু-একটি জায়গায় একটু বেশিই! তবুও তাঁর চটপটে ভাবটার জন্যই বিদিশা অনেকাংশে বিশ্বাস্য হয়ে ওঠে। ছোটপর্দার পরিচিত মুখ কৌশিক (Kaushik Roy) সুযোগ পেয়েছেন কম, তাঁর যেটুকু করার করেছেন। শান্তিলাল (Shantilal Mukherjee) একইরকম পুলিশ অফিসার, সহকারী গৌরব চক্রবর্তীও (Gaurav Chakrabarty) বসের অনুসারী। তবে তিনি মাঝে মধ্যে বিদিশার প্রতি অনুরাগের চাহনিটা না দিলেই পারতেন। তবুও বলব, থ্রিলার, রহস্য, গোয়েন্দা ঘরানার ছবির বাইরে ‘ফ্লাইওভার’ একটু অন্যরকম। একবার দেখা যেতেই পারে, হ্যাঁ, কোভিডের ভয়কে সঙ্গে নিয়েও।