নন্দিতা রায় ও দীপাঞ্জন মণ্ডল: ঝিমিয়ে পড়া অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে গত সেপ্টেম্বরেই ঘোষণা করেছিলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ। বুধবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে মন্ত্রিসভা তাতে আনুষ্ঠানিক সিলমোহর দিল। থেমে থাকা রিয়েল এস্টেট প্রকল্পের জন্য ২৫ হাজার কোটি টাকার তহবিল ঘোষণা করা হল। মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর সীতারমণ সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, সাশ্রয়ী এবং মধ্য আয়ের আবাসনগুলি, যেসব প্রকল্প মাঝপথে থমকে রয়েছে, সেগুলির চাবি ক্রেতাদের হাতে তুলে দিতে সাহায্য করবে এক ‘বিশেষ জানালা’। এই তহবিলে কেন্দ্র সরাসরি ১০ হাজার কোটি টাকা দেবে। বাকি ১৫ হাজার কোটি টাকার জোগান দেবে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক স্টেট ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া এবং রাষ্ট্রায়ত্ত বিমা সংস্থা ভারতীয় জীবনবিমা নিগম। এর ফলে মধ্যবিত্ত শ্রেণির ‘নিজগৃহ’-এর স্বপ্ন বাস্তব যেমন সহজ হবে, তেমনই নির্মাণ শিল্পের হাত ধরে সার্বিক অর্থনীতি চাঙ্গা হবে বলে মনে করছেন অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।
দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে আর্থিক সংস্কার সংক্রান্ত এই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে বলে মঙ্গলবারই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী। মন্ত্রিসভার সবুজ সংকেত পাওয়ার পর এদিন সেই ঘোষণাই করলেন তিনি। এর জন্য অলটারনেটিভ ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড (এআইএফ) বা বিকল্প বিনিয়োগ তহবিল নামে একটি তহবিল গঠন করা হবে। একদল দক্ষ আধিকারিক এটি পরিচালনার দায়িত্বে থাকবেন। তবে সেই কমিটি সরকারি হবে না। শুরুতে শুধুমাত্র এসবিআই এবং এলআইসি থাকলেও, পরে আরও অন্য সংস্থাকে যুক্ত করে তহবিল বাড়ানো হবে। এআইএফ-এ সার্বভৌম এবং পেনশন প্রকল্পও যোগ দিতে পারে। ফলে বাড়তে পারে তহবিলের পরিমাণ। এদিন সীতারমণ বলেন, “এই তহবিলের মাধ্যমে একটি অ্যাকাউন্টে অর্থ দিয়ে অসম্পূর্ণ প্রকল্পকে সুবিধা দেওয়া হবে। শুরুতে এই অ্যাকাউন্ট এসবিআই-এর হাতে থাকবে। যে সমস্ত অসম্পূর্ণ প্রকল্প রয়েছে সেগুলিকে পেশাদারি মনোভাবের সঙ্গে সহযোগিতা করা হবে। তাদের শেষ পর্যায় পর্যন্ত সাহায্য করা হবে। অর্থাৎ যদি ৩০ শতাংশ কাজ অসম্পূর্ণ থাকে, তাহলে তা যতদিন সম্পূর্ণ না হচ্ছে ততদিন সাহায্য করা হবে। যাতে ক্রেতারা দ্রুত ফ্ল্যাটের চাবি হাতে পান। যদি প্রকল্পটি এনপিএ-ও হয় সেক্ষেত্রেও সহায়তা পাবে।”
এই তহবিল দেশের ১,৬০০টি থেমে থাকা আবাসন প্রকল্পের ৪.৫৮ লক্ষ আবাসন ইউনিটকে সহায়তা করবে বলে জানান অর্থমন্ত্রী। এর বাজার মূল্য প্রায় সাড়ে চার লক্ষ কোটি টাকা। রিয়েল এস্টেট ক্ষেত্রকে চাঙ্গা করার পাশাপাশি কর্মসংস্থান তৈরিও এই উদ্যোগের উদ্দেশ্য। এছাড়াও রিয়েল এস্টেট সেক্টরকে চাঙ্গা করার পাশাপাশি এর ফলে সিমেন্ট, ইস্পাত শিল্পও চাঙ্গা হবে। স্বাভাবিকভাবে ভারতীয় অর্থনীতির অন্যান্য ক্ষেত্রগুলিও এর ফলে চাঙ্গা হবে। উল্লেখ্য, সম্প্রতি এক রিপোর্টে দাবি করা হয়, অর্থাভাবে বন্ধ হয়ে থাকা প্রকল্পের মধ্যে ৮৪ শতাংশ দিল্লি-এনসিআর এবং মুম্বইয়ে। কলকাতায় এই ধরনের কাজ আটকে থাকা প্রকল্পের সংখ্যা ১৩ হাজার। যার অর্থমূল্য ৭,৩০০ কোটি টাকা। আবাসন ক্ষেত্র বহুদিন ধরেই এমন কোনও সুযোগ দেওয়ার জন্য কেন্দ্রের কাছে দাবি জানিয়ে আসছিল।
সীতারমণ বলেন, ‘‘আমি আগেও বলেছিলাম যে আবাসন ক্রেতাদের সুবিধা দিতে তহবিল ঘোষণা করা হবে। বাড়ি কিনছেন, এমন বহু মানুষ আমাদের কাছে আবেদন করেছিলেন। তাঁরা বলেছিলেন, অগ্রিম দেওয়া সত্ত্বেও তাঁরা ফ্ল্যাট পাচ্ছেন না।” তিনি আরও বলেন, “গত দু’মাসে এই সমস্যায় ভুক্তভোগীরা ব্যাঙ্কের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। সেই বৈঠকে রিজার্ভ ব্যাংকের গভর্নরও হাজির ছিলেন। তিনি বাড়ি ক্রেতাদের মঙ্গলে রাস্তা খুঁজেছেন।” যে সংস্থার একটি প্রকল্প শুরু হয়েছে কিন্তু শেষ হয়নি তারা সাহায্য ও সুবিধা পাবে। কিন্তু সেই সংস্থার দ্বিতীয় প্রকল্প যা শুরু হয়নি তারা এই সুবিধা পাবে না। অগ্রাধিকারের ভিত্তিতেই দেওয়া হবে অর্থ। এর ব্যাখ্যা দিয়ে সীতারমণ বলেন, “যদি কোনও একটি প্রোজেক্টের তিনটি হাউসিং ইউনিট থাকে, তার মধে্য দেখা গেল একটির ৭০ শতাংশ হয়েছে, একটির ৫০ শতাংশ এবং একটির কাজ শুরুই হয়নি। সেক্ষেত্রে ৭০ শতাংশ যার কাজ হয়ে রয়েছে সেটিকে সম্পূর্ণ করার জন্য প্রথমে অর্থ দেওয়া হবে। তারপর ৫০ শতাংশ যে কাজ হয়েছে সেটির জন্য। কিন্তু যার কাজ শুরু হয়নি তার জন্য কোনও অর্থ সাহায্য দেওয়া হবে না।” এছাড়াও এদিন সীতারমণ স্পষ্ট করে দিয়েছেন, এই তহবিলের টাকা থেকে ব্যাংক ঋণ গ্রাহকদের বকেয়া অর্থ কাটতে পারবে না বা এই টাকা নির্মাণ সংস্থাগুলি খেয়ালখুশি মতো খরচ করতে পারবে না। সমস্ত কিছু হবে একটি নিয়ম মেনে।
The post অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে বন্ধ আবাসন প্রকল্পে ২৫ হাজার কোটি তহবিল কেন্দ্রের appeared first on Sangbad Pratidin.