শুভদীপ সাহা: মহাকবি লিখেছেন, 'খাই খাই করো কেন, এসো বসো আহারে!/ খাওয়াব আজব খাওয়া, ভোজ কয় যাহারে।' আপনি যাই বলুন মহাকবি, ভোজনরসিক বাঙালি ভোজের থেকেও যা পছন্দ করে তা হল ওই খাই খাই। আর এমন 'খাই খাই'-এর অব্যর্থ দাওয়াই যা বার বার খাওয়া যায়, তাই-ই। বারবার যা খাওয়া যায় তাই না খাবার! সেখানে, এমন বন্ধু আর কে আছে? তোমার মতো ফুচকা!
কিন্তু, সেখানেই গণ্ডগোল। আগে যা ছিল একে দশ, এখন তাই-ই দশে এক! যা ছিল ‘নিয়মহারা হিসাবহীন’, তারই অবস্থা এখন সঙ্গীন। আগে ছিল, খেয়ে যাও, ট্যাঁকের চিন্তা করিও না। ফলে, ফচকে ছোঁড়ার ফিচকেমি বা ফোকলা খুড়োর হ্যাংলামিতে, ফুচকা ছিল জিন্দাবাদ। হাঁ করতেই হাপিশ। এখন আব্বুলিশ। হাঁ করার আগেই ট্যাঁক ভ্যানিশ।
রাস্তায় বেরতেন, কাঁচের পাল্লা ঘেরা বাক্সে গোল-গোল বল, স্টিলের হাঁড়িতে ঘুগনিমাখা-আলু আর লালশালু মাটির হাঁড়িতে অমৃতসুধা অকারণেই ডাক দিত। সে ডাক সামলে এগিয়ে যাবে, এমন সাধ্যি কার? আপনিও দাঁড়িয়ে পড়তেন লাইনে, খাচ্ছেন তো খাচ্ছেনই, হিসেব নেই। এক ফুৎকারে উড়ে যেত সব! সত্যি বলতে পরিস্কার হাতে, হাইজিন মেনে হাই-হ্যালো হয়। ফুচকা হয়? মাথার ঘাম পায়ে না হোক, নিদেনপক্ষে আলুতে ফেললে তবেই না মহিমা !
সেই মহামহিম ইদানীং কাচে ঘেরা ঠান্ডা ঘরে সেজে আসেন। যদিও বা পুজোয় ইতিউতি ঘুরে আপনি দেখা পেলেন সেই মহার্ঘ্য বস্তুর, উদরপূর্তির আগেই আপনার বেকারস্ফূর্তি! আর...ফাউ চাইলেই ফাউল! অথচ ফুচকা বেশ নির্লিপ্ত, প্রচারবিমুখ। জুতো সেলাই থেকে মায় চণ্ডীপাঠ, সবাইকেই বিজ্ঞাপন দিতে হয়। কিন্তু কী আশ্চর্য ক্ষমতাবলে, বিজ্ঞাপনহীন ফুচকার স্টলে, নিজের থেকেই ভিড় করে প্রজাপতির দল। এই প্রজাপতির লোভেই ছেলেদের আজন্ম অ্যাম্বিশন ফুচকাওলা হওয়ার ! অথচ জীবনের কঠিনতম কাজ এটা। সুন্দরীদের ভিড়ে ফুচকার হিসেব রাখা– প্রজাপতি ব্রহ্মারও অসাধ্য।
ভেবে দেখলে ফুচকার আলাদা কোনও স্বাদ নেই। হনুমানের মতো বক্ষ বিদীর্ণ ক’রে সঞ্জীবনীসুধা গ্রহণ করে, গ্রহণ করায়। তবে সনাতনী ফুচকাকে অনুরোধ, অতি আধুনিক হ’তে গিয়ে, সব দিয়ে-টিয়ে দিও না, ফুচকায় ঝিলমিল লেগে যাবে! দুর্গাঠাকুরের অসুরের পর যার ডিমান্ড সবথেকে বেশি, সে ফুচকা। বিজয়া দশমীর চিট-চ্যাট-চাট থেকে সদ্য প্রেমে পড়া কিশোর কিশোরী, যাদের অল্প রেস্ত, রেস্তরাঁ নেই, তাদের জন্য আবহমান কাল ধরে গল্প লিখেছেন ফুচকা ঠাকুর।