দুলাল দে: তাঁর হাত ধরে দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটেছে। সঞ্জয় সেনের কোচিংয়ে ফুটবলে ফের ভারতসেরা হয়েছে বাংলা। সন্তোষ ট্রফির ফাইনালে কেরলকে ১-০ গোলে হারান রবি হাঁসদারা। এতদিন ধরে যে খরা চলছিল বঙ্গ ফুটবলে, সেই ছবিটা যেন ম্যাজিকের মতো বদলে দিলেন সঞ্জয় সেন। আর তারপরই সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটালকে ঝাঁঝালো একান্ত সাক্ষাৎকার দিলেন তিনি।
২০১৪-১৫ সালে তাঁর কোচিংয়ে আই লিগ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল মোহনবাগান। সেবার লিগের সেরা কোচের সম্মানও পেয়েছিলেন। এছাড়াও ডুরান্ড কাপ, আইএফএ শিল্ড জিতেছেন তিনি। অথচ বাংলার দায়িত্ব পেতে লেগে গেল এতগুলো বছর। প্রসঙ্গ উঠতেই সটান উত্তর দিলেন সঞ্জয় সেন। তাঁর স্পষ্ট বক্তব্য, "২৭ বছর পর আইএফএ-র মনে পড়েছে সঞ্জয় সেন বাংলার কোচ হতে পারে।"
আর কোচ হলে তিনি কী করতে পারেন, তা দেখিয়ে দিয়েছেন। এতদিন ধরে সন্তোষ ট্রফিতে যে বাংলা ধুঁকছিল, তার চেহারা আমূল বদলে দিয়েছেন তিনি। বিপক্ষে কেরল হোক বা সার্ভিসেস, কোনও দলই পাত্তা পায়নি তাঁর হাল না ছাড়া মনোভাবের কাছে। তারপরেও আইএসএলের গ্রহে উপেক্ষিত থাকতে হয় সঞ্জয় সেনকে। সেখানে তো শুধুই বিদেশি কোচের রমরমা। ভারতীয় কোচেরা আছেন ঠিকই, তবে প্রধানত সহকারী হিসেবে। তাতে প্রবল আপত্তি সঞ্জয় সেনের। পরিষ্কার জানিয়ে দিলেন, "আইএসএলে কোনও বিদেশির সহকারী হয়ে পুতুল হয়ে থাকব না।"
কেন থাকবেন? যাঁর দখলে এত শিরোপা, তিনি তো সত্যিই দাবিদার আইএসএলে যে কোনও দলের কোচ হতে। তবু দলগুলো তাকিয়ে থাকে বিদেশি কোচেদের দিকেই। অথচ সমস্ত যোগ্যতাই রয়েছে সঞ্জয় সেনের। উদাহরণ হিসেবে উঠে এল ইস্টবেঙ্গলের বর্তমান কোচ অস্কার ব্রুজোর কথা। ২০১২ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত স্পোর্টিং ক্লাব ডে গোয়ায় ছিলেন ব্রুজো। আর আজ তিনি ইস্টবেঙ্গলের দায়িত্বে। অকপট উত্তর দেন সঞ্জয় সেন, "অস্কার ব্রুজো আর আমার এক সঙ্গে প্রো লাইসেন্স করার কথা ছিল। ও স্পোর্টিংয়ে ছিল, আমি মোহনবাগান।"
তাহলে পার্থক্য কোথায় হয়ে গেল? বাংলাকে ভারতসেরা করা কোচ বলছেন, "ও স্পেনে জন্মে বড় কোচ হয়ে গেল। আমি চাকরি ছাড়া রইলাম।" এই দৃষ্টিভঙ্গি নিয়েই চলছে ভারতীয় ফুটবল। আর সঞ্জয় সেন সেখানে উদাহরণ হয়ে বারবার চোখে আঙুল দিয়ে অনেক কিছু দেখিয়ে দেন। বাংলাকে সন্তোষ ট্রফি চ্যাম্পিয়ন করার পরও কি সেটা চোখে পড়বে না ভারতীয় ফুটবলের?