প্রসূন বিশ্বাস: তাঁকেই সন্তোষ ট্রফির ফাইনাল রাউন্ডে বাংলা দল থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিল। সন্তোষজয়ী বাংলার ফুটবলাররা কলকাতায় ফিরলে কেউ মনে রাখেনি বাংলার আরেক ফুটবলার তারক হেমব্রমকে। যে তারক কয়েক বছর আগে জাতীয় গেমসে সোনাজয়ী দলের বাংলা দলের সদস্য ছিলেন। সেই তারকই এবার আই লিগ দ্বিতীয় ডিভিশনে পাঁচ গোল করে সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়ার দৌড়ে রয়েছেন। বাংলা দল থেকে বাদ পড়াটাই জেদ বাড়িয়ে দিয়েছিল তারকের। শুধু পাঁচ গোল করে আই লিগ দ্বিতীয় ডিভিশনের সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়ার দৌড়ে থাকাই নয়, দুটি কেন্দ্রীয় সংস্থার ফুটবল ট্রায়ালে পাশ করে অপেক্ষা করছেন দুটি সরকারি চাকরির অফার লেটার পাওয়ার।
তারককে বাংলা দল থেকে বাদ দেওয়া নিয়ে কেউ কেউ বলেন, খেপ খেলার জন্য ফাইনাল রাউন্ডে সঞ্জয় সেন বাদ দিয়েছিলেন তাঁকে। অনেকেই আবার বলে থাকেন, ফাইনাল রাউন্ডে দীর্ঘাঙ্গী অ্যাটাকিং মিডিও নেওয়ার তাঁকেই সন্তোষ ট্রফির ফাইনাল রাউন্ডে বাংলা দল থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিল। তবে এটা ঠিক ফাইনাল রাউন্ডের আগে খেপ খেলতে গিয়েছিলেন তিনি। তবে, সেদিনের বাংলা দল থেকে বাদ পড়াটাই যেন বদলে দিয়েছিল তাঁর জীবন। বাংলা দল কলকাতায় ফেরার সঙ্গে সঙ্গেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেই চ্যাম্পিয়ন দলের সদস্যদের চাকরির ঘোষণা করেছিলেন। তখন তারকের একটু মন খারাপ হয়েছিল। কিন্তু থেমে থাকেননি তিনি। আই লিগ দ্বিতীয় ডিভিশন খেলতে খেলতেই আপাতত দুটি কেন্দ্রীয় সংস্থার ফুটবল দলের ট্রায়ালে পাশ করে বসে রয়েছেন তারক। ডকুমেন্টেশনের কাজ চলছে। সামনেই মেডিক্যাল। এই প্রক্রিয়া শেষ হলেই আপাতত এই দুই সংস্থা থেকেই চাকরির হতে পারে তাঁর। তখন তাঁকে বাছাই করতে হবে কোন চাকরিটি তিনি করবেন।
তারক এখন সর্বোচ্চ গোলদাতার দৌড়ে থাকলেও তাঁর দল ইউনাইটেড স্পোর্টস আই লিগ দ্বিতীয় ডিভিশনের লিগ টেবলের সপ্তম স্থানে রয়েছে। বাংলা দল থেকে বাদ পড়া নিয়ে বলতে গিয়ে তারক বলেন, "ভুল থেকেই শিক্ষা নিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছি। তবে সেদিন আমি একা নই। আরও কয়েকজন খেপ খেলেছিল। আর ওসব নিয়ে ভাবতে চাই না। ওরকম ভুল করতে চাই না।” সেদিন বাংলা দল থেকে বাদ পড়ার পর তারক যে ক্লাবের ফুটবলার, সেই ইউনাইটেড স্পোর্টসের কর্তা নবাব ভট্টাচার্য বলছেন, "ওকে বুঝিয়েছিলাম সেদিন। বড় কিছু করতে গেলে আত্মত্যাগ দরকার। ভেঙে পড়েছিল। তারপর থেকে নিজেকে ডুবিয়ে দিয়েছিল অনুশীলনে। আজ তার ফল পাচ্ছে। তবে আমি ব্যক্তিগত স্তরে সঞ্জয় সেনকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, কেন তারককে বাদ দেওয়া হয়েছিল? উনি আমাকে বলেছিলেন, মাঝমাঠে একটু বেশি উচ্চতার অ্যাটাকিং মিডিও উনি নিতে চান। তাই তারককে বাদ দিয়েছেন। আমাকে একবারও বলেননি খেপ খেলার জন্য বাদ দিয়েছেন।" তিনি আরও যোগ করেন, "সেদিন কথা শুনেছিল বলেই আজ একটা নয় দুটো চাকরি পাকা হওয়ার দোড়গোড়ায় দাঁড়িয়ে তারক। এবার ওকেই বাছতে হবে কোন চাকরিটা করবে।" এক দশকের বেশি সময় ধরে ইউনাইটেডে খেলছেন তারক। এখানে খেলতে খেলতেই সুযোগ পেয়েছেন অনূর্ধ্ব ১৫ জাতীয় দলে। তবে এবার আর অতীতের মতো ভুল করতে চান না মগরার বছর তেইশের বাঙালি ফুটবলার।