সৌরাংশু এবং সৌভাগ্য চ্যাটার্জি: গ্রীষ্মকালে কাতারের তাপমাত্রা বেড়ে দাঁড়ায় ৪৫ থেকে ৫০ ডিগ্রি। তা সেই গরমে ডিম সিদ্ধ হতে পারে, কিন্তু ফুটবল! নৈব নৈব চ! অন্যদিকে টানা ফুটবল খেলে ক্লান্ত হয়েই মেগা টুর্নামেন্ট নামতে হবে ফুটবলারদের। সব মিলিয়ে প্রতিপক্ষের ট্যাকল ছাড়াও হাজারো চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে মেসি-রোনাল্ডোদের।
তাহলে উপায়? উপায় হল মরশুমের শেষে হওয়া বিশ্বকাপকে (Qatar World Cup) শীতকালে নিয়ে আসা হল। কিন্তু শীতকালে করলে ক্লাব ফুটবল? ইউরোপের ক্লাব ফুটবল তো টাকা দিয়ে তারকাদের পোষে, তারাই সংসারের বড়দা। তাদের চটালে চলবে? দেশ বনাম ক্লাবের লড়াইতে বেশ কিছুদিন হল ক্লাব জিতে গেছে। দেশ এখন আপোষ করেছে। তবে কাতার না হোক, গরম দেশে কি আর বিশ্বকাপ হবে না? সেক্ষেত্রে উপায় হয় সম্পূর্ণ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত স্টেডিয়াম অথবা শীতকালীন বিশ্বকাপ। সে সব তো বোঝা গেল, কিন্তু ক্লাবের মরশুমের কী হবে? কিছুই না, যে সময় বিশ্বকাপ করা যেত, পরেরবার সেই সময় অবধি ক্লাব মরশুম চলবে। মাঝে দেড়খানা মাস বিশ্বকাপ।
মরসুমের মাঝে হলে চোট আঘাত হবে না? এই যে পোগবা, কান্তে, রিস জেমস, কাইল ওয়াকার খেলতে পারছেন না। চোটের জন্য সাদিও মানের খেলা হবে না বিশ্বকাপে। এগুলো? আগে কি হয়নি এসব? চোটের কারণে একটা গোটা বিশ্বকাপে খেলা হয়নি জিনেদিন জিদানের। রোমারিওর জায়গা হয়নি ৯৮’র বিশ্বকাপে। পরিসংখ্যান বলছে মরসুমের মাঝখানে হচ্ছে বলে পেশীগত ক্লান্তি অনেকটাই কম হবে। আর চোট আঘাত? ফুটবল একটা শারীরিক খেলা, তাতে চোট আঘাত লাগতেই পারে। যাঁরা চোটের কারণে বিশ্বকাপ থেকে বেরিয়ে যাচ্ছেন তাঁদের কিন্তু পেশিগত ক্লান্তি বা স্ট্রেসজনিত চোট নয়। সরাসরি শারীরিক সংঘর্ষের ফলাফল অধিকাংশ ক্ষেত্রেই।
[আরও পড়ুন: গর্বের প্রাপ্তি! মাদ্রিদের বিখ্যাত ফুটবল মিউজিয়ামে মারাদোনার পাশে জায়গা পেয়েছে এক বাঙালির জার্সিও]
শীতকালে রাত্রে খেলা হলেও আর্দ্রতা তো বেশিই থাকবে, টানা খেলায় ক্লান্তি আসতে পারে। এখনই দোহার তাপমাত্রা ৩২ থেকে ২২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ঘোরাফেরা করছে। তার সঙ্গে রয়েছে প্রায় ৯০ শতাংশ আর্দ্রতা। স্টেডিয়াম শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত হলেও বদ্ধ স্টেডিয়ামে আর্দ্রতা আরও বেশি করে অনুভূত হবে। তার উপর এক সপ্তাহ আগে পর্যন্ত ইউরোপের ক্লাবগুলো নিংড়ে নিয়েছে খেলোয়াড়দের। এবং গত আড়াই মাস ধরে সপ্তাহের মাঝে এক, সপ্তাহান্তে এক মিলিয়ে মাসে গড়ে ৮টা করে ম্যাচ খেলতে হয়েছে তারকা ফুটবলারদের। তাই আশঙ্কা করা যায় যে প্রথম রাউন্ডের প্রথম পর্যায়ের খেলাগুলোয় খুব বেশি ভালো ফুটবলের দেখা পাওয়া যাবে না। তবে নভেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকেই খেলোয়াড়রা নিজেদের ক্ষমতা অনুযায়ী পারফর্ম করতে শুরু করবে।
এই বিশ্বকাপে খুব গুরুত্বপূর্ণ হতে যাচ্ছে তিনের জায়গায় পাঁচটি পরিবর্তন। এই আর্দ্রতা, ক্লান্তি এসবের কারণেই। ম্যাচ চলাকালীন কোচদের ম্যাচরিডিং অনুযায়ী প্রায় অর্ধেক দল পরিবর্তন করার সুযোগ থাকবে। অতএব বলা যায় যে খেলার মান বা গতিতে খুব বেশি হেরফের হবে না। ভিএআর বা ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারি এবারে আরও উন্নত। স্টেডিয়ামের বিভিন্ন জায়গায় বসানো বারোটা ক্যামেরার সাহায্যে তারা দুরূহ কোণগুলিকে সহজেই ধরে ফেলতে পারবে। তার উপর এবারের অ্যাডিডাসের আল রিহলা বলে রয়েছে চিপ। মানব শরীরের ২৯টি বিন্দুর ম্যাপিং এই প্রযুক্তি করে ফেলছে সেকেন্ডে পঞ্চাশবার। আশা করা যায় এবারের বিশ্বকাপে ন্যূনতম বিতর্কের মধ্যে পড়বে ভিএআর।
আসলে কোনও একটা ব্যবস্থা যদি বছরের পর বছর ধরে চলে আসে, সেটাকেই নিয়ম বলে ধরে নিই আমরা। আর সেখানে সামান্য পরিবর্তন কখনই হজম করতে পারি না। খেলাটা ছড়াচ্ছে শুধুমাত্র ইউরোপের সুবিধা মতোই তো সবকিছু হবে না। সত্যিকারের সর্বজনীন করতে গেলে বিশ্বকাপের মতো বিশ্বজনীন টুর্নামেন্টকে আরও বেশি করে ইউরোপ আর দক্ষিণ আমেরিকার বাইরে নিয়ে গিয়ে ফেলতে হবে। কাতার বিশ্বকাপ হয় তো সেই সফরের একটা গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।