নব্যেন্দু হাজরা: বুদ্ধমূর্তির ধাঁচে একেবারে অবিকল দেখতে মা দুর্গা (Durga idol)। উচ্চতা প্রায় ১২ ফুট। তাঁর পায়ের কাছে বসে লক্ষ্মী, গণেশ, কার্তিক, সরস্বতী। দূর থেকে দেখে বোঝা দায় এটা দুর্গামূর্তি। ফাইবারের তৈরি অভিনব এই মূর্তি কুমোরটুলি থেকে পাড়ি দিয়েছে দুবাইতে। শুধু দুবাই নয়, কলকাতা থেকে মা দুর্গা অন্তত পঁচিশ দেশে রওনা হয়েছেন এবার। কেউ জাহাজে, কেউ আবার বিমানে।
প্রতিমার পাশাপাশি পুজোর উপকরণও গিয়েছে লক্ষ মাইল দূরে। গঙ্গাজল থেকে নৈবেদ্য সবকিছুই। এককথায় মা দুর্গা এখন আর এই রাজ্য বা দেশের গণ্ডির মধ্যে আটকে নেই। হয়ে উঠেছে বিশ্বজনীন। কুমোরটুলির শিল্পীদের কথায়, প্রবাসে থাকা বাঙালিদের মধ্যে দুর্গাপুজো করার প্রবণতা দ্রুত বাড়ছে। তাই প্রতি বছর অর্ডারও আসছে ভালোই। কুমারটুলির একজন শিল্পীই বিভিন্ন দেশে এবার (Durga Puja 2023) ৩৭টা দুর্গা প্রতিমা পাঠিয়েছেন।
[আরও পড়ুন: ‘স্বাধীন ভারতের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত প্রধানমন্ত্রী মোদি’, তোপ কেজরিওয়ালের]
জার্মানি, ইতালি, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, জাপান, সিঙ্গাপুর, দুবাই, সুইডেন, লন্ডন, সুইজারল্যান্ড, আয়্যারল্যান্ড, ফিনল্যান্ড, আমেরিকা, ব্রাজিল, নাইজেরিয়ার মতো প্রায় পঁচিশটি দেশে এবার ঠাকুর পাঠিয়েছে কুমোরটুলি। বেশিরভাগই পৌঁছে গিয়েছে। কিছু এখনও জাহাজে যাচ্ছে। শিল্পীরা জানাচ্ছেন, প্রবাসে বাঙালিরা প্রতিবছর প্রতিমা নেন না। তিন-চার বছর অন্তর নেন। দিনে দিনে বিভিন্ন দেশেই দুর্গাপুজোর সংখ্যা বাড়ছে। কর্মসূত্রে প্রবাসে থাকা বাঙালিরা তা করেন। যে সমস্ত দেশে আগে কখনও পুজো হত না, এখন সেখান থেকেও অর্ডার আসছে। শুধু টরন্টোতেই হয় ২২টা দুর্গাপুজো।
বাঙালি রীতি মেনে কোথাও চারদিন আবার কোথাও উইকএন্ডে দু’দিনের পুজো হয়। ঠাকুরের ভোগ খাওয়া থেকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সবই হয়। কলকাতা থেকে দূরে থাকার দুঃখ পুজোর ক’দিন অনুভব করতে চান না কর্মসূত্রে নিজের শহর থেকে দূরে থাকা মানুষগুলো। তবে একেক দেশে একেক জিনিসের ঘাটতি আছে। যেমন কোথাও পুরোহিতের আবার কোথাও ঢাকির। তবে এসবের ঘাটতিও মিটিয়ে দেয় কলকাতা। লন্ডনে তো কলকাতার রেড রোডের ধাঁচে দশমীর দিন টেমসে কার্নিভালও শুরু হয়েছে গতবছর থেকে।
[আরও পড়ুন: হঠাৎ কেন ‘গেরুয়া’ হল বন্দে ভারত! ‘রাজনীতি নয়, বিজ্ঞান’, বলছেন রেলমন্ত্রী]
এমনকী এই দুর্গাপুজোকে কেন্দ্র করে প্রবাসের বাঙালিরা খুলেছে ‘দ্য গ্লোবাল কানেক্ট’ নামে একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ। সেখানে প্রায় ৪০টি দেশের প্রতিনিধিরা রয়েছেন। বিভিন্ন দেশের পুজোর ছবি, সেখানকার রীতিনীতি ইত্যাদি নিয়ে সেখানে আলোচনা হয়। সিডনি থেকে ব্রাজিল সব জায়গার বাঙালিই এখন পুজোর প্রস্তুতিতে ব্যস্ত। অনেকেই জানাচ্ছেন, বিদেশে বসেও পুজোর ক’টা দিন তাঁরা একেবারে কলকাতার পুজোর আনন্দই উপভোগ করেন। পুজোর আড্ডা, ভোগ খাওয়া, বিভিন্ন অনুষ্ঠান। সবই চলতে থাকে। কুমোরটুলির প্রতিমাশিল্পী কৌশিক ঘোষ বলেন, ‘‘এবছর সর্বোচ্চ ৩৭টি প্রতিমা বিদেশে পাঠানো হয়েছে। বেশিরভাগই গিয়েছে ফাইবারের। একচালা। সর্বোচ্চ ১২ ফুটের প্রতিমা (Durga Idol) গিয়েছে দুবাইতে। আবার আগামীবছরের জন্যও অর্ডার চলে এসেছে।’’