সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: নির্ভীক হবে সাংবাদিকতা। ভয়ডরহীন হবে লেখনী। নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ হবে দৃষ্টি। সাংবাদিকরা নিয়ত তারই অনুশীলন করেন। সে কারণে চড়া মূল্যও তাঁদের দিতে হয়। কখনও জীবনের বিনিময়েই। সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে মুখ খুলে খুন হতে হল সাংবাদিক গৌরী লঙ্কেশকে। সাংবাদিক হত্যার প্রতিবাদে আজ কলকতা প্রেস ক্লাব থেকে মিছিল করেন শহরের সাংবাদিকরা। সে মিছিলে পা মেলালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও।
[ সাহসিকতার মূল্য দিয়ে খুন হয়েছিলেন আর কোন কোন সাংবাদিক? ]
বাড়ির সামনেই সাত সাতটা বুলেটে ঝাঁজরা হয়ে যান গৌরী লঙ্কেশ। বামপন্থী আদর্শে দীক্ষীত এই সাংবাদিক আরএসএস-এর নীতির তীব্র বিরোধিতা করতেন। সমালোচনা কড়তেন কড়া ভাষায়। নিজস্ব পত্রিকায় তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরতে ছিলেন অকুতোভয়। সেটাই সম্ভবত কাল হল। ঠিক যেভাবে অধ্যাপক কালবুর্গিকে হত্যা করা হয়েছিল, একই কায়দায় খুন করা হল তাঁকেও। বেঙ্গালুরুতে নিজের বাড়ির সামনেই দুষ্কৃতীরা তাঁকে গুলি করে। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তাঁর। প্রতিবাদে সবার আগে সরব হন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। টুইট করে তিনি এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেন। দাবি করেন সুবিচারেরও। এদিকে এই ঘটনায় আজ গোটা দেশ তোলপাড়। বিরুদ্ধ স্বরকে কেন এভাবে স্তব্ধ করে দেওয়া হচ্ছে, কেন সংবাদমাধ্যম ও সাংবাদিকদের উপর আক্রমণ নেমে আসছে, সে প্রশ্ন তোলেন বিরোধীরা। এমনকী দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিরাও নীরব থাকেননি। যেরকম তালিবানি কায়দায় একজন মুক্তচিন্তার মানুষকে হত্যা করা হয়েছে তা দেশের জন্য অশনিসংকেত বলেই মনে করছেন অধিকাংশ মানুষ। প্রতিবেশী বাংলাদেশে ঠিক এভাবেই একের পর মুক্তমনা ব্লগারের বিরুদ্ধে আক্রমণ নেমে এসেছিল। সেই কালো দিনের ছায়া ভারতেও পড়ছে বলে আশঙ্কা বহু মানুষের।
[ গৌরী হত্যায় কাঠগড়ায় আরএসএস, রাহুল-নীতিন তরজা তুঙ্গে ]
এই ঘটনারই প্রতিবাদে কলকাতা প্রেস ক্লাবের পক্ষ থেকে শান্তি মিছিলের আয়োজন করা হয়। উপস্থিতি ছিলেন শহরের বিভিন্ন মাধ্যমের সাংবাদিকরা। তবে তাৎপর্যপূর্ণভাবে এই মিছিলে উপস্থিত ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপায়াও। প্রয়াত গৌরী লঙ্কেশের ছবির সামনে মোমবাতি জ্বালিয়ে শুরু হয় মিছিল। মিছিল এগোয় ধর্মতলার দিকে। আর সাংবাদিকদের সঙ্গে পা মিলিয়ে হাঁটতে দেখা যায় মুখ্যমন্ত্রীকেই। সংবাদমাধ্যম তথা মুক্তচিন্তার উপর যেভাবে আক্রমণ নেমে এসেছে তার প্রতিবাদে এভাবেই শামিল হলেন তিনিও। দেশে শাসকদলের বিরুদ্ধ স্বরকে চাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে বারবার অভিযোগ করেছেন তিনি। এবং এ কারণে আক্রমণ নেমে আসার কথাও বলেছেন। শুধু রাজনৈতিক ক্ষেত্র নয়, তাঁর এই কথা যে কতটা সত্যি তা গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভের উপর আক্রমণই যেন প্রমাণ করে দিয়েছে।
এদিকে এই মৃত্যু নিয়ে ইতিমধ্যেই চলছে রাজনৈতিক চাপানউতোর। হত্যার জন্য আরএসএস-কেই কাঠগড়ায় তুলে তোপ দেগেছেন রাহুল গান্ধী। প্রধানমন্ত্রীর হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির দিকেও আঙুল তুলেছেন তিনি। পিঠ বাঁচাতে পালটা সিদ্দারামাইয়া সরকারকে দুষেছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নীতিন গড়কড়ি। চাপানউতোর চলছেই। সেই সঙ্গে গোটা দেশেই চলছে প্রতিবাদ মিছিল। জ্বলে ওঠা মোমবাতির আলোতেই কলকাতাও জানাল তার প্রতিবাদ।
The post গৌরী খুনের প্রতিবাদ কলকাতায়, সাংবাদিকদের সঙ্গে পা মেলালেন মুখ্যমন্ত্রীও appeared first on Sangbad Pratidin.