সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: টি-২০-র পর মরুশহরে টি-১০ (T-10)। আবু ধাবিতে বেজে গিয়েছে ক্রিকেট দামামা। আজ থেকে টি-১০ (Abu Dhabi T10) প্রতিযোগিতার বল গড়াচ্ছে সেখানে। শোয়েব মালিক, শাহিদ আফ্রিদি, সুনীল নারিন, ডোয়েন ব্রাভো, ক্রিস গেইলের মতো তারকারা ব্যাটে-বলে ঝড় তুলবেন মাঠে। বিশ্ববন্দিত তারকাদের সঙ্গে ক্রিকেটের এই যজ্ঞে রয়েছেন এক বঙ্গসন্তানও। তিনি গিরবান চক্রবর্তী (Girban Chakraborty)। মারাঠা অ্যারাবিয়ান্স (Maratha Arabians) দলের ম্যানেজার তিনি।
২০১৭ সালে শুরু হয়েছিল টি-১০ টুর্নামেন্ট। প্রথম সংস্করণে বিশেষ ছাপ ফেলতে পারেনি এই প্রতিযোগিতা। পরের বছর থেকে বিদেশি তারকাদের অন্তর্ভুক্তি টুর্নামেন্টকে অন্য এক উচ্চতায় নিয়ে যায়। গতবছর করোনা-আবহে হতে পারেনি টি-১০। এ বার তা হচ্ছে আবু ধাবিতে। টিম আবু ধাবি, মারাঠা অ্যারাবিয়ান্স, বাংলা টাইগার্স, ডেকান গ্ল্যাডিয়েটর্স, কালান্দার্স, দিল্লি বুলস, নর্দার্ন ওয়ারিয়র্স, পুণে ডেভিলস -এই আটটি দলে রয়েছেন এক ঝাঁক তারকা ক্রিকেটার। কোচ হিসেবে রয়েছেন ক্রিকেটবিশ্বের নামী ও পরিচিত মুখ। মারাঠা অ্যারাবিয়ান্স দলের কোচ লালচাঁদ রাজপুত। দিল্লি বুলসের রিমোট কন্ট্রোল আবার জিম্বাবোয়ের প্রাক্তন ক্রিকেটার অ্যান্ডি ফ্লাওয়ারের হাতে।পুণে ডেভিলসকে কোচিং করাচ্ছেন জন্টি রোডস, নর্দার্ন ওয়ারিয়র্স দলের কোচ রবিন সিং। আটটি দলকে দু’টি গ্রুপে রাখা হয়েছে। বাংলা টাইগার্স, দিল্লি বুলস, মারাঠা অ্যারাবিয়ান্স এবং নর্দার্ন ওয়্যারিয়র্সকে নিয়ে গ্রুপ এ। ডেকান গ্ল্যাডিয়েটর্স, পুণে ডেভিলস, কালান্দার্স এবং টিম আবু ধাবি রয়েছে গ্রুপ বি-তে। লিগ পর্বে প্রতিটি দলকে তিনটি করে ম্যাচ খেলতে হবে। ১ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয়ে যাবে সুপার লিগ। ৫ ফেব্রুয়ারি প্লে অফের পর ৬ তারিখ হবে ফাইনাল। মোট ২৯টি খেলা হবে টুর্নামেন্টে।
[আরও পড়ুন: এবার প্রতিমাসেই মিলবে সেরার স্বীকৃতি, ক্রিকেটে আকর্ষণ বাড়াতে নতুন পুরস্কার চালু করছে আইসিসি]
১০ ওভারের ফরম্যাটে প্রতিটি বোলার সর্বোচ্চ ২ ওভার হাত ঘোরাতে পারবেন। পাওয়ারপ্লে-র ৩ ওভারে ৩০ গজি বৃত্তের বাইরে থাকতে পারবেন দু’ জন ক্রিকেটার। তিন ওভার হয়ে গেলে পাঁচ জন ক্রিকেটার দাঁড়াতে পারবেন বৃত্তের বাইরে।
আজ টুর্নামেন্টের বোধনের দিনে রয়েছে তিনটি ম্যাচ। বাংলা টাইগার্স বনাম দিল্লি বুলস ছাড়াও রয়েছে ডেকান গ্ল্যাডিয়েটর্স ও পুণে ডেভিলসের খেলা। মারাঠা অ্যারাবিয়ান্সের সামনে আবার নর্দার্ন ওয়ারিয়রস। দিল্লি বুলসের ক্যাপ্টেন ডোয়েন ব্রাভো। বাংলা টাইগার্স দলের ক্যাপ্টেনের আর্মব্যান্ড উঠেছে আন্দ্রে ফ্লেচারের হাতে। ডেকান গ্ল্যাডিয়েটর্সের অধিনায়ক বহু যুদ্ধের সৈনিক কাইরন পোলার্ড। মারাঠা অ্যারাবিয়ান্স দলের নেতৃত্বে মোসাদ্দেক হোসেন। দলে রয়েছেন শোয়েব মালিক, মহম্মদ হাফিজের মতো পাক তারকা। টি-১০-এর প্রথম সংস্করণে মারাঠা অ্যারাবিয়ান্স দলের ম্যানেজার ছিলেন গিরবান। এবারও একই ভূমিকায়। সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল-কে তিনি বলছিলেন, “প্রথম বারের টি-১০ প্রতিযোগিতা সেরকম জনপ্রিয় হয়নি। তার পরের বছর থেকে তারকা ক্রিকেটারদের উপস্থিতি এই টুর্নামেন্টকে অন্য একটা মাত্রা দেয়। ২০১৯ সালে যুবরাজ সিং খেলেছিলেন মারাঠা অ্যারাবিয়ান্সে। বীরেন্দ্র শেহবাগ আমাদের ব্যাটিং মেন্টর হিসেবে কাজ করেছেন। বোলিং মেন্টর ছিলেন ওয়াসিম আক্রম। ক্রিস গেইল, শাহিদ আফ্রিদির মতো তারকারা খেলায় এই টুর্নামেন্টের ব্র্যান্ড ভ্যালু এখন অনেকটাই বেড়েছে।”
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সম্প্রচার করা হবে তারকাখচিত এই টুর্নামেন্ট। এ দেশের ক্রিকেট-পাগলদের ঘরে ঘরে টি-১০ পৌঁছে দেবে সোনি নেটওয়ার্ক। কলকাতার ডানলপের শতদল অ্যাপার্টমেন্টের চক্রবর্তী পরিবারও কি টেলিভিশনের পর্দায় চোখ রাখবে না? এই শতদল অ্যাপার্টমেন্টেই থাকেন গিরবানের মা-বাবা। আগ্রহ ভরে ছেলের দলের খেলা দেখবেন তাঁরাও। এই ডানলপেই যে গিরবানের শিকড়।
একসময়ে নিজেও চুটিয়ে ক্রিকেট খেলেছেন কলকাতা ময়দানে। বাংলার প্রাক্তন রঞ্জি ট্রফি ক্রিকেটার সমীর ভট্টাচার্যের কাছ থেকে ক্রিকেটের প্রথম পাঠ নেন তিনি। পাইকপাড়া স্পোর্টিং ক্লাবের হয়ে কলকাতা ময়দানে প্রথম ডিভিশন খেলেন গিরবান। পরে সুনীল গাভাসকর ফাউন্ডেশন ফর ক্রিকেট ইন বেঙ্গলের হয়ে ইংল্যান্ডে সফর করেন। সেখানে বেস্ট ইকোনমিক্যাল বোলার হওয়ায় বিলেতের ক্লাবে খেলার সুযোগ পান তিনি। ন্যাপ ক্রিকেট ক্লাবে ২ বছর এবং টনটন ক্রিকেট ক্লাবে এক বছর খেলে কলকাতা ময়দানের ক্লাব ক্রিকেটে ফিরে আসেন তিনি। পরে নিউজিল্যান্ড গিয়ে স্পোর্টস ম্যানেজমেন্টে স্নাতক হন। ২০১১ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে সিরিজে কিউয়িদের ম্যানেজার হিসেবে কাজ করেন কলকাতার ছেলেটি। ইংল্যান্ড ও কিউয়ি ক্রিকেট বোর্ড থেকে কোচিং ডিগ্রির পাশাপাশি সিএবি-র লেভেল ওয়ান ফিজিও ডিগ্রিও তাঁর দখলে। ভবিষ্যতের ক্রিকেটার গড়ে তোলাই তাঁর স্বপ্ন।
সেই স্বপ্ন চোখে নিয়েই চার বছর আগে আইসিসি অ্যাকাডেমির ক্রিকেট ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজারের চাকরি নিয়ে দুবাইয়ে আসেন গিরবান। সেখানকার এমএস ধোনি ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে কোচিং করিয়েছেন। রোহিত শর্মার অ্যাকাডেমির সঙ্গে বর্তমানে যুক্ত তিনি।
আবু ধাবির ১০ ওভারের এই ক্ষুদ্র ফরম্যাটে গেইল-আফ্রিদিরাই প্রচারের সব আলো কেড়ে নেবেন। ম্যানেজারের কাজ সামনে আসে না। প্রচারের সার্চলাইটও এসে পড়ে না তাঁর উপরে। মরুশহরের টুর্নামেন্টে কলকাতার একমাত্র প্রতিনিধি সবার আড়ালে থেকে নিজের কাজ করে যেতে চান। এতেই যে তাঁর প্রাণের আরাম, মনের আনন্দ।
[আরও পড়ুন: ভারত-ইংল্যান্ড দ্বিতীয় টেস্টের পরই আইপিএলের নিলাম, দিন ঘোষণা করল BCCI]