সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেসের সঙ্গে হাত মেলানোর ব্যাপারে ফের তৃণমূলের অবস্থান স্পষ্ট করে দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুক্রবার তিনি জানিয়ে দিলেন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে বা শীর্ষ নেতৃত্বের কেউ তাঁকে ফোন করেননি। ইন্ডিয়া জোট নিয়ে কোনও কথাও হয়নি।
এদিন সাধারণতন্ত্র দিবস উপলক্ষে রাজভবনে আয়োজিত চা চক্রে যোগ দেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানেই সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে এই কথা জানান তিনি। বাংলার বুকে শাসকদল যে একাই বিজেপির সঙ্গে ভোটের লড়াইয়ে অবতীর্ণ হচ্ছে সে কথাই ফের জোর গলায় জানিয়ে দেন তৃণমূল সুপ্রিমো। বলে রাখা ভালো, উত্তরবঙ্গে একই সময়ে মমতা এবং রাহুল গান্ধী থাকছেন। তখন কি দেখা বা বৈঠক হবে? এই প্রশ্নের জবাবে নেত্রী বলেন, ‘‘এলে আসবে। আমার কর্মসূচি তো আগে থেকেই ঠিক আছে। যদি আসে এক কাপ চা খেয়ে যাবে।’’
প্রসঙ্গত, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর ‘বিজেপি ঘেঁষা অবস্থান’ সত্যিকারের জোট গড়ার পথে অন্তরায় হয়ে উঠছে এমন অভিযোগ তুলে বৃহস্পতিবারই তৃণমূল নেত্রী জানিয়ে দেন এরাজ্যে ৪২টি লোকসভা আসনেই একাই লড়বে দল। মমতার এই কঠোর সিদ্ধান্ত জানার পরও কংগ্রেস নেতৃত্ব জোটের দরজা খোলা রাখার বার্তা দেয়। প্রবীণ কংগ্রেস নেতা তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জয়রাম রমেশ গুয়াহাটিতে বসেই সাংবাদিকদের জানান, মমতাকে ছাড়া জোটের কথা ভাবাই যায় না।
[আরও পড়ুন: ‘রেশন দুর্নীতির কথা সব জেনেও চুপ ছিলেন জ্যোতিপ্রিয়’, বিস্ফোরক দাবি ইডির]
গতকাল রাতেই নানা সূত্রে দিল্লি থেকে খবর ছড়ায় যে, খোদ কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে বরফ গলাতে আসরে নেমেছেন। ফোনে মমতার সঙ্গে কথা বলে তাঁর মন গলানোর চেষ্টা করেছেন। যদিও মমতা বা তৃণমূল সূত্রে এই খবরের সত্যাসত্য নিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি। কিন্তু আজ ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই খোদ নেত্রী স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, খাড়গে তাঁকে ফোন করেননি। এ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি আরও বলেন, বর্ধমান থেকে ফেরার পথে গাড়ি দুর্ঘটনায় তাঁর মাথায় আঘাত লাগার খবর পেয়ে সোনিয়া গান্ধী তাঁকে মেসেজ করেছিলেন। দ্রুত আরোগ্য কামনা করেন কংগ্রেস নেত্রী। কিন্তু এর বাইরে ইন্ডিয়া জোট নিয়ে কংগ্রেসের তরফে কেউ তাঁর সঙ্গে কথা বলেনি।
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, গতকাল অসম থেকে বাংলায় প্রবেশ করে কংগ্রেসের ন্যায় যাত্রা। কোচবিহারে রাহুল গান্ধীক কথায়া স্পষ্ট হয়ে যায় যে তিনি জোট নিয়ে আত্মবিশ্বাসী। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে ইন্ডিয়া জোটের জন্য অত্যন্ত জরুরি সে কথাও রাহুল বুঝিয়ে দেন। বুধবার অসমে তৃণমূলের সঙ্গে জোট জট নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে রাহুল বলেছিলেন, “দুদিক থেকেই অনেকে অনেক কিছু বলছেন। এটা খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। তবে তা সত্ত্বেও জোটের আলোচনা চলবে।” সেই প্রসঙ্গে এদিন মমতা তির্যক মন্তব্য করেন, “রাহুল এলে আসবে, এক কাপ চা খেয়ে চলে যাবে।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, মমতার অবস্থান, অরবিন্দ কেজরিওয়ালের দাবি এবং নীতীশ কুমারের ঘোলাটে অবস্থানে ইন্ডিয়া জোটের ভবিষ্যৎ নিয়েই প্রশ্ন উঠছে। সকলেরই কাঠগড়ায় কংগ্রেস। ফলে লোকসভায় আসনরফা ইস্যুতে এই রামধনু শিবির কতটা এক সুরে কথা বলবে তা অনিশ্চিত।