অর্ণব আইচ: পুর নিয়োগ দুর্নীতিতে জড়িত সরকারি কর্মী ও রাজনৈতিক নেতারা। এমনই দাবি সিবিআই ও এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের। পুর নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে মামলা দায়ের করে তদন্ত শুরু করল সিবিআই। একইসঙ্গে এই পুর নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে মামলা শুরু করছে ইডিও। দুর্নীতির বিপুল টাকা কোন পথে গিয়েছে, ইডি সেই তদন্ত করবে।
ইডির দাবি, রাজ্যের অন্তত ৯০টি পুরসভায় বিভিন্ন পদে চাকরির বরাত পেয়েছিল নিয়োগ দুর্নীতির অভিযুক্ত অয়ন শীলের সংস্থা এবিএস ইনফোজেন। এখনও পর্যন্ত গোয়েন্দাদের কাছে খবর, এর মধ্যে কাঁচরাপাড়া, নিউ বারাকপুর, কামারহাটি, টিটাগড়, বরানগর, হালিশহর, উত্তর দমদম, দমদম, টাকি-সহ ৩৫টি পুরসভায় নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়। বাকিগুলিতে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়নি। ওই ৩৫টি পুরসভায় মজদুর, সাফাইকর্মী, করণিক, পিওন, অ্যাম্বুল্যান্স সহযোগী, মিস্ত্রিদের সহকারী, পাম্প অপারেটর, হেল্পার, নিকাশি অ্যাসিস্ট্যান্ট, চালক-সহ বিভিন্ন পদে নিয়োগ হয়।
[আরও পড়ুন: কালিয়াগঞ্জ কাণ্ডে উদ্বিগ্ন রাজ্যপাল, রিপোর্ট তলব মুখ্যসচিব ও ডিজির কাছে]
ওএমআর শিট তৈরি করে পরীক্ষা নেওয়া থেকে শুরু করে ফল বের করার বরাত পায় অয়ন শীলের সংস্থা। ওএমআর শিট বিকৃতি করে প্রায় ৬ হাজার পুরকর্মী নিয়োগ করা হয় বলে অভিযোগ সিবিআই ও ইডির। গোয়েন্দাদের মতে, এভাবে প্রাথমিকভাবে দু’শো কোটি টাকার দুর্নীতি বলা হলেও এই দুর্নীতির পরিমাণ ক্রমে ২৫০ কোটি থেকে ৩০০ কোটি টাকাও ছাড়াতে পারে। অয়ন শীলের সংস্থা এবিএস ইনফোজেনকেই দায়িত্ব দেওয়া হয় প্রশ্নপত্র তৈরি, ওএমআর শিট ছাপানোর, পরীক্ষার্থীদের নম্বরের মূল্যায়ন, পাশ করা প্রার্থীদের তালিকা তৈরির। অয়ন শীল একাধিক প্রভাবশালী, যাঁদের মধ্যে রাজনৈতিক নেতা ও সরকারি কর্মীরাও রয়েছেন, তাঁদের সাহায্যে ওএমআর শিট বিকৃতি করে বেআইনিভাবে টাকার বিনিময়ে অসংখ্য অযোগ্য প্রার্থীদের পুরসভায় চাকরির ব্যবস্থা করেন। এতে বহু এজেন্টের সাহায্য নেওয়া হয়। অনেক রাজনৈতিক নেতাও এজেন্ট হিসাবে কাজ করেন বলে অভিযোগ।
সিবিআই ও ইডির দাবি, এটি ‘‘পুরসভা নিয়োগ কেলেঙ্কারি।’’ যেহেতু শিক্ষক ও অশিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগে ইতিমধ্যেই ইডির হাতে অয়ন শীল গ্রেপ্তার হয়েছেন, তাই এবার প্রাথমিক অভিযুক্ত হিসাবে অয়ন শীলকে নিজেদের হেফাজতে পেতে চায় সিবিআইও। তাই আদালতের অনুমতি নিয়ে অয়ন শীলকে গ্রেপ্তার করে জেরার প্রস্তুতি নিচ্ছে সিবিআই। গোয়েন্দাদের মতে, অয়ন শীলকে জেরা করা হলে পুর দপ্তরের কর্তা, বিভিন্ন পুরসভার কর্তা ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের নাম উঠে আসবে। সেই সূত্র ধরে তাঁদের একে একে তলব করা হবে ও প্রয়োজনে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে সিবিআই ও ইডি।