বুদ্ধদেব সেনগুপ্ত, আহমেদাবাদ: জিএসটি (GST)নাকি লোকাল? রসিদ চাইলেই এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া আবশ্যিক। তাও অন্য কোনও রাজ্যে নয়। এমনই চিত্র মোদির রাজ্য গুজরাটে (Gujarat)। জিএসটি রসিদ চাইলেই মুখ আমশি বিক্রেতার। প্রয়োজন নেই বললেই হাসি হাসি মুখে রসিদ চলে আসবে ক্রেতার হাতে। কারণ জিজ্ঞাসা করলে যে উত্তর মিলবে, তা অপ্রত্যাশিত। ব্যবসা করতে বসে হিসেব রাখা সম্ভব নয়। জিএসটি হিসেব করে রসিদ বানানো সময় সাপেক্ষ। আবার দান নিয়ে দরাদরির সঙ্গে খুচরো ক্রেতাকে জিএসটি বোঝানোর ঝামেলা। তাই লোকাল বিল দিলে অনেক সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এমনই জানাচ্ছেন আহমেদাবাদের সবচেয়ে বড় খুচরো ও পাইকারি বাজার জামালপুর মার্কেট ও কামালপুর মার্কেট, মানিকচক ও মনিনগর মার্কেটের ব্যবসায়ীরা।তাঁদের যুক্তি, অনেক খুচরো বা নতুন ব্যবসায়ীর কারেন্ট অ্যাকাউন্ট থাকে না। ফলে নগদে লেনদেন করতে হয়। কিন্তু তারও একটা সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তাই জিএসটি লাগু হওয়ার পর থেকে ব্যবসায় ক্ষতি হচ্ছে বলে মত মোদি রাজ্যেরই ব্যবসায়ীদের।
দেশজুড়ে লেনদেনের ক্ষেত্রে জিএসটি চালু করাকে বিপ্লব বলেই মনে করে কেন্দ্রীয় সরকার। গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন তৎকালীন কেন্দ্রের কংগ্রেস সরকার জিএসটি চালু করতে গেলে প্রবল আপত্তি করেন নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদি (PM Narendra Modi)। জিএসটি চালু হলে নগদ লেনদেন কমে যাবে। ফলে ছোট খুচরো ও পাইকারি ব্যবসায়ী ক্ষতি হবে বলে সওয়াল করেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরই তাঁরই সরকার জিএসটি চালু করে। প্রথমত নগদ লেনদেনের ক্ষেত্রে রাশ টানা যাবে ও শুল্ক জমা ও ফেরত পাওয়ার পদ্ধতি সরল হবে। যদিও জিএসটি নিয়ে দেশজুড়ে বিতর্ক অব্যাহত। জিএসটির পুরো অর্থ কেন্দ্রের ঘরে জমা পড়লেও রাজ্যকে ফেরতের ক্ষেত্রে টালবাহানার অভিযোগ উঠেছে বারবার।
[আরও পড়ুন: ‘হিন্দি আগ্রাসন’ বরদাস্ত নয়, বিক্ষোভের জেরে তামিলনাড়ুর স্টেশনের সাইনবোর্ডে সরল হিন্দি শব্দ]
কিন্তু মোদি রাজ্যেই জিএসটি নিয়ে আপত্তি রয়েছে ব্যবসায়ী মহলে। আহমেদাবাদের মণিনগর খুচরো ব্যবসার সবচেয়ে বড় বাজার। সেখানকার ব্যবসায়ীদের অধিকাংশই জিএসটির বিরোধী। দীর্ঘদিনের ইমিটেশনের পাইকারি ও খুচরো ব্যবসায়ী সুধীর রাভারি। তিনি ও তাঁর ভাইয়েরা মিলে ব্যবসার দেখাশোনা করেন। জিএসটি চালু হওয়ায় যথেষ্ট বিরক্ত বলে জানালেন। ব্যবসা করতে গিয়ে প্রতিদিন সমস্যায় পড়তে হচ্ছে বলে জানান। তাঁর মতে, অনেক খুচরো ব্যবসায়ী আছেন যাঁদের কারেন্ট অ্যাকাউন্ট নেই। তাই জিএসটি নম্বরও নেই। তাঁরা সাধারণত নগদে লেনদেন করতেই উৎসাহী।
কিন্তু নগদে লেনদেন করার ক্ষেত্রে আইনি সমস্যা রয়েছে। তাই ক্রেতাকে অনেক সময়েই ফিরিয়ে দিতে হয়। আবার জামালপুর মার্কেটের হোসিয়ারি ব্যবসায়ী বিক্রম সোলাঙ্কি জানান, অনেকেই জরুরি ভিত্তি মাল কিনতে হয়। কিন্তু হাতে অর্থ না আসা পর্যন্ত মাল দিতে পারব না। চেক পেমেন্ট হলে অর্থ জমা হতে কম করে হলেও ২৪ ঘণ্টা সময় লাগে। তাই জরুরি ভিত্তিতে ক্রয় করতে আসা খুচরো ব্যবসায়ীদের ফিরিয়ে দিতে হয়। এখানেই শেষ নয়। সমস্যায় পড়েছেন হোটেল ব্যবসায়ীরাও। আহমেদাবাদ স্টেশন সংলগ্ন প্রিন্স রেসিডেন্সির ম্যানেজার কৈলাশ প্যাটেল জানান, অনেকেই একদিনের জন্য ঘর চেয়ে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে বেরিয়ে যান। তাঁরা জিএসটি রসিদ নিতে অস্বীকার করেন। কয়েকঘণ্টার জন্য জিএসটি বাবদ ১২ শতাংশ শুল্ক দিতে চান না। ফলে অশান্তি লেগেই থাকে।
[আরও পড়ুন: ‘দেশকে পথ দেখাবে বাংলা’, নিজের প্রথম ভাষণেই রাজ্যের ভূয়সী প্রশংসা রাজ্যপালের]
সামগ্রিকভাবে প্রধানমন্ত্রীর চালু করা জিএসটি নিয়ে প্রবল সমস্যায় তাঁরই রাজ্য গুজরাটের ব্যবসায়ীরা। জিএসটি রসিদ দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রবল অনীহা তৈরি হচ্ছে বলে জানান মানিকপুর ব্যবসায়ী কমিটির এক সদস্য। তাঁর মতে, জিএসটি চালুর পর থেকেই সমস্যায় পাইকারি ও খুচরো ব্যবসায়ীরা। অনেক জিনিসের দামও বেড়ে গিয়েছে। ফলে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়কেই।