সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: যে কোনও গুরুতর সমস্যায় জনসেবার আরও নিত্যনতুন উপায় বের করাই তাঁদের বিশেষত্ব। কখনও বিনামূল্যে খাবার বণ্টন, কখনও উপাসনালয় চত্বরে আশ্রয়হীনদের নিরাপদ আশ্রয় করে দেওয়া। বছরভর এসব কাজ করে থাকলেও, বিশেষ বিশেষ সময়ে সমাজের প্রতি তাঁদের অবদান যেন বড় বেশি চোখে পড়ে। শিখ সম্প্রদায়ের উপাসনাস্থল গুরুদ্বারের (Gurudwara) কথা বলা হচ্ছে। গত বছর করোনা সংকটে (Coronavirus) দেশের বিভিন্ন গুরুদ্বার যেভাবে সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিল, তা মনে রেখেছেন অনেকেই। এবারও তাই। দেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে এই মুহূ্র্তে সবচেয়ে বড় সংকট অক্সিজেনের ঘাটতি। তা মেটাতে এবার নিজেদের লঙ্গরখানাতেই অক্সিজেন তৈরির পরিকাঠামো তৈরি করে ফেলেছে। দিনভর হালুয়া, পুরির বদলে সেখানে তৈরি হয়ে চলেছে করোনা চিকিৎসার মূল উপকরণ অক্সিজেন। দিল্লি-হরিয়ানার বিভিন্ন হাসপাতালগুলিতে এই অক্সিজেন সরবরাহ করা হবে, তাতে সংকট কিছুটা কমতে পারে বলে আশা।
করোনা ভাইরাসের মিউট্যান্ট স্ট্রেনের দাপটে এবার আক্রান্তদের শ্বাসকষ্টের সমস্যা বেশি। তাই চিকিৎসার জন্য প্রয়োজন হচ্ছে বাড়তি অক্সিজেন (Oxygen)। এই বাড়তি চাহিদার জেরেই দেশে অক্সিজেনের ভাঁড়ারে টান পড়ছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নিজে উদ্ভুত পরিস্থিতিতে একাধিক জরুরি বৈঠক করে আরও বেশি করে অক্সিজেন উৎপাদনে জোর দেওয়ার কথা বলেছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় রাজধানী দিল্লি। কারণ, সেখানে একটিও অক্সিজেন প্লান্ট নেই। তাই বাইরে থেকেই পুরোটা আমদানি করতে হচ্ছে। জোগানে টান থাকায় দিল্লির বেশ কয়েকটি হাসপাতাল রোগীদের ফিরিয়ে দিচ্ছে।
[আরও পড়ুন: করোনা ভ্যাকসিন ও অক্সিজেন উৎপাদন সামগ্রীতে মকুব আমদানি শুল্ক, বড় ঘোষণা কেন্দ্রের]
এই অবস্থায় অক্সিজেন ঘাটতি মেটাতে এগিয়ে এসেছে গাজিয়াবাদের গুরুদ্বার। ইন্দিরাপুরমের শ্রী গুরু সিং সভা গুরুদ্বারে এখন চলছে ‘অক্সিজেন লঙ্গর’। দুয়ারে দাঁড়ালেই এখানে সংকটাপন্ন রোগী পাচ্ছেন অক্সিজেন, প্রাণভরে শ্বাস নেওয়ার সুযোগ। তেমনই ভিড়ও হচ্ছে বেশি। সকাল থেকে সন্ধে, ইন্দিরাপুরমের এই গুরুদ্বারে গেলেই অক্সিজেন পাওয়ার আশায় রোগীর আত্মীয়রা ভিড় বাড়াচ্ছেন। খালি হাতে অবশ্য কাউকেই ফিরতে হচ্ছে না। গোটা অক্সিজেন সিলিন্ডারই পাওয়া যাচ্ছে।
[আরও পড়ুন: ফের ভারতের আকাশে হানা পাক ড্রোনের! বিএসএফের গুলিবৃষ্টির ধাক্কায় চম্পট]
গুরুদ্বারের ম্যানেজারের কথায়, ”এখনও পর্যন্ত অক্সিজেন দিয়ে ২০০ জনের জীবন বাঁচাতে পেরেছি আমরা। ডিএম, এসপি-দের কাছে অনুরোধ করেছি, যদিও আরও সিলিন্ডার আমাদের দেন, তাহলে সেখান থেকে আরও অনেক মানুষকে জীবনদান করতে পারব।” শিখগুরু গুরু নানকের শিষ্যরা এভাবে কাজ করেই বুঝিয়ে দিচ্ছেন হিন্দুধর্মের চিরন্তন বাণী – ‘জীবে প্রেম করে যেইজন, সেইজন সেবিছে ঈশ্বর।’ অন্য়দিকে, দিল্লির আরেকটি গুরুদ্বারও নিয়েছে অভিনব উদ্যোগ। এই পরিস্থতিতে ভিড় এড়াতে লঙ্গর থেকে মানুষের ঘরে ঘরে খাবার পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে।