অভিরূপ দাস: ভালবাসার আংটি। তাতেই লুকিয়ে ডায়েরিয়ার জীবাণু।
ডানহাতে খাবারের সঙ্গে সঙ্গে পাকস্থলীতে ব্যাকটিরিয়া ঢুকিয়ে দিচ্ছে এই আংটিই। বাড়িতে একজনের ডায়েরিয়া হয়েছে। মুহূর্তে তা ছড়িয়ে পড়েছে অন্যের শরীরেরও।
“জল তো ফুটিয়ে খেলাম। তবুও কেন?” চেম্বারে রোগীর অবাক প্রশ্ন। তবে সে প্রশ্নের উত্তর মিলেছে। আঙুলের আংটি, নখের কোনায় লুকিয়ে রয়েছে ডায়েরিয়ার বংশ থুড়ি এন্টেরো টক্সিজেনিক ই-কোলাই। খালি চোখে দেখা যায় না এই ইটিইসি ব্যাকটিরিয়া। শহরের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অরিন্দম বিশ্বাস জানিয়েছেন, বাড়িতে একজনের ডায়েরিয়া হলে ক্রমশ অন্যরাও এর শিকার হচ্ছেন। কীভাবে? “আক্রান্তের আঙুলের নখে, বা আংটির ফাঁকে লুকিয়ে থাকে এই ব্যাকটিরিয়া। এবার হাতে করে কাউকে খাইয়ে দিচ্ছেন কিংবা প্লেটে খাবার সার্ভ করছেন। সে সময় ওই ব্যাকটিরিয়া মিশে যাচ্ছে খাবারে। তা থেকে অনায়াসেই আক্রান্ত হচ্ছেন বাড়ির অন্যান্য সদস্যরা।” দ্রুত তাই নখ কাটতে বলছেন চিকিৎসকরা। পরিচ্ছন্নতা মানতে খুলে রাখতে বলা হচ্ছে আংটিও।
[অবরোধকারীদের উপর দিয়ে ট্রেন চালানোর অভিযোগ, তুমুল উত্তেজনা যাদবপুরে]
এদিকে স্কুল অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিনের দ্বিতীয় পরীক্ষাতেও মিলেছে ডায়েরিয়ার জীবাণু। বেলেঘাটা আইডির পাঠানো মলের নমুনা পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে কিলবিল করছে এন্টেরো টক্সিজেনিক ইকোলাই। বেলেঘাটা আইডির প্রিন্সিপাল উচ্ছল ভদ্র জানিয়েছেন, একটা কোনও কমন ফ্যাক্টর থেকেই সকলের ডায়েরিয়া হচ্ছিল। প্রথম থেকেই আমাদের সন্দেহ ছিল জলেই লুকনো রয়েছে জীবাণু। পরীক্ষায় সে প্রমাণই মিলল। আপাতত জীবাণু ঠেকাতে কুড়ি মিনিট জল ফুটিয়ে খেতে বলা হয়েছে। ডাঃ ভদ্রর কথায়, কমপক্ষে কুড়ি মিনিট জল ফুটলে ইটিইসি ব্যাকটিরিয়া নির্মূল হবে। জল ফোটানোর পাশাপাশি হ্যালোজেন ট্যাবলেটও ব্যবহার করারও পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। বাজার চলতি বেশ কিছু জল পরিশোধন ওষুধ রয়েছে। কিন্তু কতটা ব্যবহার করা উচিত এগুলো? বেলেঘাটা আইডির চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তিন লিটার জলে একটি হ্যালোজেন ট্যাবলেট দিতে হবে। বেশ কিছুক্ষণ পর তবে সেই জল খাওয়া যাবে। এছাড়াও যাঁরা ঘরে মাটির জালা থেকে জল খান, সেখানে ফিটকিরি দিয়েও জল শোধন করা যায়। শুক্রবারও নতুন করে ১২ জন ভরতি হয়েছেন বাঘাযতীন হাসপাতালে।
এদিকে মলের নমুনা পাঠানো নিয়ে রাজ্য সরকারের উপর ক্ষুব্ধ ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ কলেরা অ্যান্ড এন্টেরিক ডিজিজ। সংস্থার ডিরেক্টর শান্তা দত্ত জানিয়েছেন, রাজ্য সরকারের তরফ থেকে পাঠানো মলের নমুনায় কিছুই পাওয়া যায়নি। এর জন্য নমুনা সংগ্রহের গাফিলতিকেই দায়ী করেছে কেন্দ্রীয় সংস্থা। তাদের দাবি, নমুনাগুলো এমন অবস্থায় ছিল তা থেকে কোনও কিছু পাওয়া সম্ভব নয়। শান্তা দেবীর কথায়, দেশজুড়ে আমাদের সংস্থা কাজ করছে। স্বাস্থ্য দফতর যদি আমাদের অনুরোধ করত তাহলে আমরা নিজেরাই নমুনা সংগ্রহ করে নিতাম।”
[জনস্বাস্থ্য নিয়ে ছিনিমিনি, ‘বিষ’ চানাচুর বন্ধে নির্দেশ হাই কোর্টের]
The post আংটিতেই লুকিয়ে ডায়েরিয়ার জীবাণু, সতর্ক করছেন চিকিৎসকরা appeared first on Sangbad Pratidin.