ত্বকের সাধারণ সমস্যাগুলির মধ্যে কড়া পড়া অন্যতম, যা অনেকেই অবহেলা করেন। বরং মনে করেন এটি নিজে থেকেই সেরে যাবে। কিন্তু এই ধারণা ভুল। হালকাভাবে নেওয়া বিপজ্জনক হতে পারে। সাবধান করলেন ডার্মাটোলজিস্ট ডা. অশোক ঘোষাল।
কড়া --- শব্দটা শুনতেই বেশ খটখটে। যার জীবনে একটা বা একাধিক আছে তার জীবনও তেমনই জ্বালাময়। পায়ের তলা হোক কিংবা হাতের তালুতে, পায়ের গাঁটে সবেতেই কষ্ট অনেক। শক্ত মেঝেতে পা রাখলেই মাথা থেকে পা পর্যন্ত ঝনঝনিয়ে ওঠে। চলতি কথায় অনেকে বলেন পায়ের তলায় ‘কুল আঁটি’ হয়েছে।
ছবি: সংগৃহীত
কেন হয়?
আসলে চামড়ার কোনও এক জায়গায় ক্রমাগত অতিরিক্ত চাপ বা ঘষা লাগার কারণে সেই স্থানের ত্বক ক্রমশই শক্ত ও মোটা হতে থাকে। সেটা চটি বা জুতোর ঘষা থেকে হতে পারে। আবার পায়ের হাড়ে যদি কোনও সমস্যা থাকে, যেমন আর্থ্রাইটিস (বাতের অসুখ), তখন উঁচু হয়ে থাকা হাড় বা গ্রন্থি (জয়েন্ট) -র উপর যে চামড়ার অংশ, সেই জায়গায় সর্বদাই অতিরিক্ত চাপ বা ঘর্ষণ চলতে থাকে। এইভাবে মাসের পর মাস বা বছরের পর বছর কেটে যায় এবং ওই জায়গায় একটি কড়া (corn) তৈরি হয়। এই শক্ত, উঁচু জিনিসটি একটি পাথরকুচির
মতো কাজ করে এবং দাঁড়ানোর বা হাঁটার সময় ত্বকের গভীরে নার্ভ ও অন্যান্য টিস্যুর উপর চাপ পড়ার ফলে অত্যন্ত ব্যথা অনুভব হয়। পায়ের বুড়ো আঙুল বা কড়ে আঙুলের বাইরের দিকে বা গোড়ালির কাছেই এগুলো বেশি দেখা যায়।
পুজো বা যোগব্যয়াম করার সময় শক্ত মেঝেতে বসার জন্য পায়ের পাতার বাইরের দিকে অথবা পায়ের গোছের (ankle) গাঁটের ওপর এরকম কড়া তৈরি হতে পারে।
শুধু পায়ে নয়, হাতেও কড়া পড়তে পারে। কলকারখানার শ্রমিক, কৃষিকর্মে নিযুক্ত ব্যক্তি, যাঁদের যন্ত্রপাতি নিয়ে কাজ করতে হয়, হাতের তালুতে বা আঙুলের ভিতরের দিকে ক্রমাগত চাপ এবং ঘর্ষণের ফলে কড়ার সৃষ্টি হয়।
জিমনাশিয়ামে ব্যায়াম করার সময় অনেকেই বারবেল, ডাম্বেল, প্যারালাল বার ইত্যাদির সাহায্য নেন। এজন্যও হাতে কড়া পরতে পারে। ঘরগেরস্থালির কাজ করার সময়ও বারবার ঘষা লাগার জন্য হাতের তালুতে বা আঙুলে কড়া পরা নেহাত দুষ্প্রাপ্য নয়।
ছবি: সংগৃহীত
অসুবিধা আছে
হাতে বা পায়ে কড়া পড়লে প্রধান অসুবিধা হল ব্যথা। পায়ের তলার কড়া হাঁটাচলা দুর্বষহ করে তুলতে পারে। ব্যথা বাঁচিয়ে চলতে গিয়ে দেহের ভারসাম্য অস্বাভাবিক হয়ে পরে। ফলে হাঁটু, কোমর, এমনকী, শিরদাঁড়ায় অনেক বেশি চাপ পড়ে এবং ব্যথা হয়। হাড়ে ক্ষয় হওয়ার ফলে স্থায়ী ক্ষতি এবং বিকৃতির সম্ভাবনা বেড়ে যায়। চলার ভঙ্গি (gait) অস্বাভাবিক হয়ে যেতে পারে।
কীভাবে আটকাবেন?
কড়ার চিকিৎসার প্রথম কথা হল প্রিভেনশন। সঠিক জুতো বা চটি নির্বাচন, যাতে পায়ের কোথাও অস্বাভাবিক বা অতিরিক্ত চাপ বা ঘর্ষণ না হয়। কড়া হয়ে গেলে তখন এমনভাবে জুতো পছন্দ করতে হবে যাতে ওই শক্ত, উঁচু জায়গার উপর চাপ না পড়ে। দরকার হলে তার জন্য বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিতে হবে, যাতে জুতোর নির্মাণে প্রয়োজনমতো পরিবর্তন আনা যায়। যতটা সম্ভব নরম বস্তু ব্যবহার করতে হবে। জুতোর বা চটির মধ্যে নরম, মোটা ইনসোল লাগানোর ব্যবস্থা করতে হবে। প্রয়োজন হলে ঠিক কড়ার জায়গার সংস্পর্শে আসা ইনসোল কেটে ছোট ছোট গর্তের মতো (ডিম বহন করার পাত্রের মতো) করে দিতে হবে, যাতে কড়াগুলো ঐ গর্তের মধ্যেই বসে যায়।
কড়া কেটে দিলে ভালো?
বেশি মোটা বা উঁচু কড়া মাঝেমধ্যে কেটে দেওয়া যায়, সাবধানে, উপরের অংশ থেকে পেন্সিল কাটার মতো, আলগোছে, যাতে কাঁচা চামড়া পর্যন্ত গভীর না হয়। ওষুধ লাগাতে হলে স্যালিসিলিক অ্যাসিজ (১৭%) এর রেডিমেড প্রিপারেশন পাওয়া যায়। রাতে শোবার আগে খুব সাবধানে শুধুমাত্র কড়ার উপর লাগাতে হবে। আশেপাশের চামড়ায় লাগলে ছাল উঠে ঘা হয়ে যেতেপারে। শক্ত অংশটা পাতলা বা নরম হয়ে গেলেই ওষুধ লাগানো বন্ধ করে দিতে হবে। প্রয়োজন হলে কিছুদিন অন্তর পুনরায় ব্যবহার করা যেতে পারে। খুব বেশি বড় কড়া হলে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়াই ভালো।