নাক বন্ধ হলে আমরা মুখ দিয়ে শ্বাসপ্রশ্বাস নিই। কিন্তু এটা কতটা স্বাস্থ্যসম্মত? মুখ দিয়ে শ্বাস নিয়ে বিপদ ডাকছেন না তো? সাবধান করলেন রুবি হাসপাতালের ইএনটি বিশেষজ্ঞ ডা. শুভ্রজিৎ দাস। শুনলেন পারমিতা পাল।
প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি এবং শিশুদের মধ্যে প্রায়ই নাক বন্ধ হয়ে যাওয়ার সমস্যা দেখা যায়। নাকের অভ্যন্তরের ঝিল্লিগুলির প্রদাহ সৃষ্টি হয় বা নাকের হাড়ের গঠনগত সমস্যা থাকলে নাক বন্ধ হয়ে যেতে পারে। তখন স্বাভাবিকভাবেই মুখ দিয়ে শ্বাসবায়ু নিতে থাকে। যা কিন্তু স্বাস্থ্যের পক্ষে মোটেও উপযুক্ত নয়।
নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া বলতে কী বোঝায়?
নাসাপথের ঝিল্লিগুলিতে অস্বস্তির ফলে নাকে যে গুমোট ভাব তৈরি হয়, তাকে নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া বলা হয়। অনেক কারণে নাক বন্ধ হতে পারে। কারণগুলিকে দু’ভাগে ভাগ করা যেতে পারে। এক, গঠনগত সমস্যা এবং দুই, কার্যকরগত সমস্যা। সেই সব সমস্যাগুলি হল এই রকমের ---
নাকের হাড় বাঁকা থাকলে শ্বাসগ্রহণে সমস্যা হয়।
সাধারণ ঠান্ডা লাগা।
ফ্লু অথবা সাইনাসের সংক্রমণ।
অ্যালার্জেনের সংস্পর্শে আসা।
গরম এবং শুষ্ক বাতাসে শ্বাস নেওয়া।
অ্যালার্জির সঙ্গে সম্পর্কিত হাঁচি।
মশলাদার খাবার খাওয়া।
মদ্যপান করা।
উদ্বেগ।
সিগারেট খাওয়া অথবা শিল্পজাত ধোঁয়া প্রশ্বাসের মাধ্যমে ভেতরে নেওয়া।
নাকের অঙ্গসংস্থানগত সমস্যা, যেমন বিচ্যুত নাসামধ্য পর্দা।
ডিকঞ্জেস্ট্যান্টের অতিরিক্ত ব্যবহার।
ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থের সংস্পর্শে আসা।
নাসাপথে সৃষ্ট পলিপ।
হরমোনের পরিবর্তন।
শ্বাসকষ্ট।
রক্তচাপ, সিজার এবং ডিপ্রেশনের জন্য ব্যবহৃত কিছু নির্দিষ্ট ওষুধ।
সাইনোসাইটিস
বন্ধ নাসাপথ খুলবে কী করে?
আর্দ্রকারী পদার্থ: শুষ্ক হাওয়া নাক বন্ধ হয়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ। এখন কিন্তু আবহাওয়ায় শুষ্কতা বা দূষণ বেশি। তাই আর্দ্রতা কম। ক্রমাগত আর্দ্রকারী পদার্থ (নুন যুক্ত জল) ব্যবহার করলে নাকের আর্দ্রতা বজায় থাকবে।
প্রশ্বাসের মাধ্যমে বাষ্প গ্রহণ করা: যাঁদের নাক দিয়ে জল পড়া বা সর্দি হচ্ছে তাঁদের ক্ষেত্রে ভেপার নেওয়া উপকারী। কী করে নেবেন? বেসিন বা বড় বাটিতে ফুটন্ত জল রাখুন এবং এটিকে একটি টেবিলে রেখে দিন। তারপর টেবিলের কাছে একটি চেয়ারে বসুন এবং আপনার মুখটিকে বেসিন বা বাটির উপর নিয়ে আসুন। ৫-১০ মিনিটের জন্য সাধারণভাবে শ্বাসপ্রশ্বাস নিন। এছাড়া আপনি যে কোনও ওষুধের দোকান থেকে একটি স্টিম কাপ কিনতে পারেন।
আর্দ্রতা: জল পানের মাত্রা বাড়িয়ে দিন। আর্দ্র থাকলে আপনার দেহ ক্ষতিকারক পদার্থগুলিকে দেহ থেকে সহজে বার করে দিতে পারে এবং আপনার সাইনাস থেকে শ্লেষ্মাগুলিকে পরিষ্কার করে দেয়। স্যুপ, ব্রথের মত গরম পানীয় পান করলে তা নাকের বন্ধ পথ খুলে দেয়।
গরম সেঁক দেওয়া: একটি তোয়ালে গরম জলে ভিজিয়ে নিন এবং জল থেকে বার করে নিংড়ে নিন। এর নাকের উপর দিয়ে এই উষ্ণতা তোয়ালেটিকে ৩০ সেকেন্ডের জন্য রাখুন। বেশ কয়েকবার পুনরাবৃত্তি করুন।
অ্যালার্জির চিকিৎসা করুন: নাক বন্ধ হয়ে যাওয়ার জন্য মূল দোষী হল অ্যালার্জেন। যে অ্যালার্জেনের কারণে আপনার নাক বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, সেটি খুঁজে বার করুন এবং সেটি থেকে দূরে থাকুন। অ্যালার্জির ওষুধের জন্য একজন ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করুন।
উত্তোলন পন্থা ব্যবহার: যখন ঘুমাবেন, তখন মাথাটিকে কিছুটা উঠিয়ে রাখুন। ফলে শ্বাস নিতে সুবিধা হবে। আপনার মুখের ওপর একটি গরম তোয়ালে রাখতে পারেন, যাতে আপনি সহজে শ্বাস নিতে পারেন।
নাকের ড্রপ ব্যবহার করুন: ডিকঞ্জেস্ট্যান্ট স্প্রে এবং ড্রপ বন্ধ হয়ে যাওয়া নাকের জন্য খুবই কার্যকরী। এটি নাক খুব তাড়াতাড়ি খুলে দিতে সাহায্য করে কিন্তু এগুলি সর্বাধিক পাঁচ থেকে সাত দিনের জন্যই কেবলমাত্র ব্যবহার করা উচিত। যদি তার থেকে বেশি সময় ধরে এটি ব্যবহার করা হয় তবে এটি পুনরায় বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এছাড়া নিয়মিত শরীরচর্চা এবং ডায়েট ফলো করা দরকার। তার পরেও সমস্যা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
মুখ দিয়ে শ্বাস নিলে সমস্যা হয়
নাক দিয়ে শ্বাস নিলে বাইরের বাতাসে শরীরের তাপমাত্রা চলে আসে। মুখ দিয়ে শ্বাস নিলে যা সম্ভব নয়।
নাক দিয়ে শ্বাস নিলে বাতাসে থাকা বড় বড় পার্টিকেল ফিল্টার হয়ে যায়। মুখে সেই ব্যবস্থা নেই। ফলে নাক বন্ধ হয়ে গেলে সাময়িকভাবে মুখ দিয়ে শ্বাস বায়ু নিলেও তা স্বাস্থ্যের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকর।