মা হওয়ার সিদ্ধান্ত যদি ৩৫ বছর বয়সের পর নেন, তবে বেশ কিছু ব্যাপারে সতর্ক হতে হবে। কারণ সুস্থভাবে সন্তানধারণে বয়স একটি জরুরি ফ্যাক্টর। দেরি করলে কী কী বিষয় মাথায় রাখা দরকার, সেই সব নিয়েই বললেন বোলপুর রামকৃষ্ণ মেডিকেল সেন্টারের স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. শ্যামল রক্ষিত। তাঁর বক্তব্য লিপিবদ্ধ করলেন পারমিতা পাল।
পড়াশোনা, কেরিয়ার, পারিপার্শ্বিক চাপ, সব সামলে মা হতে পিছিয়ে যাচ্ছে মাতৃত্বের বয়স। দুদশক আগে যেখানে মেয়েরা ২৫ বছরের মধ্যে প্রথম সন্তান ধারণ করতেন, এখন সেখানে সন্তান ধারণের গড় বয়স দাঁড়িয়েছে ৩৩-৩৫। কারও ক্ষেত্রে এই বয়স আরও বেশি। অনেকে এখন ৩৫ বছর বয়সের পরও মা হচ্ছেন। ফলে বাড়ছে ঝুঁকিও।
বেশি বয়সে মা, অসুবিধা কোথায়?
প্রকৃতির নিজস্ব নিয়ম রয়েছে। ইউরোপ, আমেরিকার তুলনায় বাঙালি মেয়েদের পিরিয়ড শুরু হয় অনেক আগে। অর্থাৎ তারা ঋতুমতী হয় ১০-১১ বছর বয়সেই। স্বাভাবিকভাবেই ফার্টাইল সময়টাও এগিয়ে আসে। ৩৫-এর পর গর্ভধারণকে সাধারণত ‘হাইরিস্ক প্রেগন্যান্সি’ হিসাবে গণ্য করা হয়। এই সময় গর্ভধারণের চান্স কমতে থাকে। আইভিএফের মতো চিকিৎসা পদ্ধতির সাহায্য নিতে হয়। বয়স বাড়লে অ্যাবরশনের চান্সও বেড়ে যায়। হাইপার টেনশনের মতো একাধিক শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। নরমাল ডেলিভারি কার্যত অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। ভরসা সেই সিজার। পরবর্তীতে যা নানা জটিলতা তৈরি করতে পারে।
ছবি: সংগৃহীত
৩৫-এর পর মা, কোন কোন বিষয়ে সতর্ক হবেন?
সন্তানধারণের পরিকল্পনা শুরু করলেই প্রথমেই স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞর পরামর্শ নিন। প্রি-প্রেগন্যান্সি চেক-আপ করাতে হবে। হবু মায়ের কোনও শারীরিক সমস্যা আছে কি না জেনে নিন। স্বামী-স্ত্রীর থ্যালাসেমিয়ার মতো কোনও রোগ রয়েছে কি না, তা জানতে রক্তপরীক্ষা করানোও অত্যন্ত জরুরি। এছাড়াও হার্ট, ফুসফুস, লিভারের চেক-আপ করানো দরকার। ফলিক অ্যাসিড, রক্তাল্পতা থাকলে নিয়মিত ওষুধ খেতে হবে।
শুধু তাই নয়, সন্তান আসার জন্য মাসের কোন সময় বা কতদিন অন্তর যৌন মিলন করা উচিত, সেটাও চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করা দরকার। কারণ, চাইলেই কয়েক মাসের মধ্যে অন্তঃসত্ত্বা হওয়া সম্ভব নয়। সুতরাং তাড়াহুড়ো করা চলবে না। কোনও শারীরিক সমস্যা না থাকলে একমাসে গর্ভধারণের চান্স ৮%। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে ধীরে সুস্থে এগনোই ভালো।
[আরও পড়ুন: মৌসুমী বায়ুর উপর কী প্রভাব ফেলেছে রেমাল? জানাল হাওয়া অফিস ]
লাইফস্টাইল বদল
খাওয়াদাওয়া নিয়ন্ত্রণ
মদ্যপান, ধূমপান বন্ধ
পিসিওডি, পিসিওএস থাকলে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে
ওজন বেশি থাকলে কমাতে হবে
নিয়মিত শরীরচর্চা জরুরি
মনে মনে মা হয়ে উঠতে হবে
আর্লি টু বেড অ্যান্ড আর্লি টু রাইজ অভ্যাস আবশ্যক
মানসিক স্বাস্থ্যও গুরুত্বপূর্ণ
স্ট্রেস গর্ভধারণের অন্যতম বাধা। ৪০-৪২ বছরে মা হতে চাইলে নিজেকে মানসিকভাবে তৈরি করতে হবে। সন্তানের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে। প্রয়োজনে প্রি প্রেগন্যান্সি কাউন্সেলিং করতে হবে। ডাক্তাররা বলেন, গর্ভধারণের আগে মানসিকভাবে মা হয়ে ওঠা দরকার। প্রি প্রেগন্যান্সি ডিপ্রেশন থাকলে পোস্ট পার্টাম ডিপ্রেশন আসা স্বাভাবিক। তবে তা চিকিৎসার মাধ্যমে কাটিয়ে ওঠা সম্ভব।
ছবি: সংগৃহীত
চিকিৎসকের পরামর্শের প্রয়োজনীয়তা
বেশি বয়সে প্রেগন্যান্সির জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। শারীরিক সমস্যা আছে কি না জানা, কাউন্সেলিং, ফার্টাইল টাইম জানা, প্রয়োজনে ওষুধ, শারীরিক পরীক্ষা-নীরিক্ষা সবটাই হয় চিকিৎসকের পরামর্শে। বেশি বয়সে গর্ভধারণ করলে তার দেখভালটা হয় অন্যরকম। ডবল মার্কার, এনটি স্ক্যানের মতো পরীক্ষা প্রয়োজন। সন্তানের কোনও জিনগত, জন্মগত ত্রুটি আছে কি না জানা দরকার। ডাউন সিন্ড্রোমে আক্রান্ত কি না পরীক্ষা করে জেনে নেওয়া দরকার। মা সম্পূর্ণ সুস্থ কি না দেখে নিতে হবে। হবু মায়ের হার্টের অবস্থা জেনে নেওয়া অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। পরামর্শ নিয়ে এগোলে গোটা জার্নিটা মসৃণ ও সমস্যাহীন হয়।
বেশি বয়সে দ্বিতীয় সন্তান, সমস্যা?
সমস্যা নয়। বরং স্বাভাবিক। একই ধরনের বিষয়ে নজর রাখতে হবে। মা ও সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার আগে তাদের শারীরিক পরীক্ষা করে নেওয়া বাধ্যতামূলক।
গর্ভধারনের আগে ও পরে কী কী সতর্কতা
বারবার ডাক্তার পরিবর্তন নয়
বাড়ির কাছাকাছি চিকিৎসক বা হাসপাতালে দেখানো উচিত
ফোন - ৯৯৩২৬ ৯৫০৫০