বয়স বাড়লে সুগার, প্রেশারের মতোই নজর দিন প্রস্রাবের গতি বেগতিক হলে। কারণ, পুরুষদের মধ্যে প্রস্টেট ক্যানসারে আক্রান্তের হার বাড়ছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সচেতনতার অভাব দায়ি। গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরলেন অঙ্কোলজিস্ট কাকলি চৌধুরী।
বয়স পঞ্চাশ পেরিয়ে যাওয়া মানেই নানা রকম শারীরিক অসঙ্গতি প্রকাশ পাওয়া। একাধিক
সমস্যার মধ্যেই মাথাচারা দেয় প্রস্টেটজনিত অসুখও। ভয় একটাতেই সবার, ক্যানসার হলে! আরও চিন্তার কথা হল, পুরুষদের মধ্যে যে ধরনের ক্যানসারের ঝুঁকি বেশি, তার মধ্যে অন্যতম হল প্রস্টেট ক্যানসার (Prostate Cancer)। তাই প্রস্টেট জনিত কিছু হলেই অধিকাংশ পুরুষেরই এই নিয়ে দুশ্চিন্তা হতে থাকে। প্রস্রাবের স্বাভাবিক গতি যদি কোনও কারণে বাধাপ্রাপ্ত হয়, প্রস্রাব বেরতে সমস্যা, ব্যথা হয় তাহলে প্রথমেই সতর্কতা অবলম্বন করুন। এটা মোটেই ফেলে রাখার বিষয় নয়। প্রস্টেট এনলার্জমেন্ট থেকে ক্যানসার সব কিছু লুকিয়ে থাকতে পারে এই লক্ষণের আড়ালে।
সবসময় প্রস্টেট বাড়লেই যে আড়ালে ক্যানসারের সম্ভাবনা রয়েছে সেটা বলা যায় না। আসলে প্রস্টেট বৃদ্ধির কারণ দুটো হতে পারে। প্রথমত, বিনাইন প্রস্টেট এনলার্জমেন্ট। বয়স হলে যেমন প্রত্যেকের দাঁতের ক্ষয় হয়, চোখে ছানি পড়ে, চামড়া কুঁচকে যায়, ঠিক তেমন এটি। একদম স্বাভাবিক ব্যাপার। দ্বিতীয়ত, প্রস্টেট ক্যানসার। অর্থাৎ কার্সিনোজেনিক টিউমার। তবে যাই হোক না কেন, প্রস্রাবের বেগতিক দেখলেই বিষয়টা গুরুত্ব দেওয়া উচিত। যদি প্রস্টেট বাড়তে থাকে, সেটা বিনাইন কারণে হলেও অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ দরকার।
সজাগ কখন হবেন?
ইউরিনের সঙ্গে ব্লিডিং, প্রবল হাড়ে ব্যথা, প্রস্রাব করার সময় বাধা পেলে, সিমেন ডিসচার্জের সময় রক্তক্ষরণ, বারে বারে প্রস্রাব পাওয়া, প্রস্রাব পেলেও ঠিকভাবে না হওয়া, ব্যথা-এগুলো হলেই সাবধান হোন! বয়স, জেনেটিক কারণ (যদি পরিবারের তিনজনের বেশি কারও ক্যানসার ধরা পড়ে), ওজন বৃদ্ধি, ধূমপান, অ্যালকোহল, অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনে অভ্যস্ত হলে এই প্রস্টেট ক্যানসার হওয়ার সম্ভাবনা আরও বেশি। পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেখা গিয়েছে, পুরুষদের ৫০ বছর বয়সের পর থেকেই শুরু হয় এই সমস্যা। যেসব পুরুষ পেরিয়েছন ৭০-এর গণ্ডি তাঁদের মধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশেরই এই সংক্রান্ত কিছু না কিছু অসঙ্গতি রয়েছে।
ফেলে রাখলে বিপদ
সাধারণত ৫০ বছর বয়সের পর থেকে নিত্য হেলথ চেকআপ করা খুব জরুরি।
'পিএসএ'- এই ব্লাড টেস্ট করে বোঝা সম্ভব ভবিষ্যতে একজনের প্রস্টেট ক্যানসারের সম্ভাবনা। আছে কি না। ক্যানসার কিংবা প্রস্টেট বৃদ্ধি সবই কিন্তু ধীরে ধীরে হয়। প্রথমে তেমন কোনও লক্ষণ থাকে না। তাই কোনও রকম সমস্যা থাকলে ফেলে রাখবেন না। ক্যানসার নির্ণয়ে বায়োপসি, এমআরআই স্ক্যান ও হোল বডি বোন স্ক্যান করার প্রয়োজন পড়ে।
চিকিৎসা
খুব বয়স্কদের প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ ধরা পড়লে সেক্ষেত্রে ফলোআপে থাকতে হবে, তাছাড়া অপারেশন (রোবটিক সার্জারি), রেডিও থেরাপি ও হরমোন থেরাপির দ্বারা চিকিৎসা করা হয়। শেষ পর্যায়ে চিকিৎসা শুরু হলে সেক্ষেত্রে কেমোথেরাপি দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে। বর্তমানে ইমিউনোথেরাপি ক্যানসার চিকিৎসায় নতুন সংযোজন। এই পদ্ধতিতে চিকিৎসা করলে তার কার্যকারিতা অনেক ভালো, এমনকী শেষ পর্যায়ে চিকিৎসা শুরু করলেও এই পদ্ধতিতে ক্যানসার অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। জীবনের মানও ভালো ও রোগী ক্যানসার নিয়েও অনেক দিন ভালোভাবে বাঁচতে পারেন।
পরামর্শ-9883083052
