সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ওরাল ক্যানসারে আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বিশেষত খৈনি, জরদার মতো তামাকজাত নেশার কারণেই এই অসুখে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। নিয়মিত মদ্যপান কিংবা এইচপিভি ভাইরাসের কারণেও এই রোগ হতে পারে। এমনকী পরিবারে কারও পূর্বে ওরাল ক্যানসার হয়ে থাকলে এই অসুখের ঝুঁকি বেশি দেখা যায়। তবে আধুনিক চিকিৎসা বলছে, শুধু তামাকজাত নেশা নয়, আপনার মুখের কোনও দাঁত যদি অত্যন্ত ধারালো হয়, সেক্ষেত্রে ওরাল ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই বেড়ে যায়। সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটালকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে জানালেন বিশিষ্ট দন্তরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ রিজাবুল হোসেন মল্লিক।
আমাদের মুখের ভিতরের অংশ খুবই সংবেদনশীল। যদি কোনও দাঁত খুব ধারালো হয় বা কোনও কারণে ভেঙে গিয়ে এবড়োখেবড়ো হয়ে যায়, তবে তা বার বার জিভ, গাল বা মুখের ভেতরের অন্য নরম অংশে ঘষা খেতে পারে। প্রথম দিকে এটি ছোটখাটো ক্ষত তৈরি করে, যা হয়তো নিজে থেকেই সেরে যায়। কিন্তু একই জায়গায় বার বার আঘাত লাগতে থাকলে ক্ষতটি দীর্ঘস্থায়ী হয়ে ওঠে। এই দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতটিই একসময় ক্যানসারের কারণ হতে পারে। এই ধরনের ক্যানসারকে সাধারণত ওরাল স্কোয়ামাস সেল কার্সিনোমা বলা হয়।
কী কী উপসর্গ দেখা যায়?
(১) মুখে বা জিভে ক্ষত।
(২) মুখের ভিতরের অংশ ফুলে থাকা।
(৩) মুখের অন্দরে ব্যথা।
(৪) রক্তপাত হতে পারে।
(৫) মুখ থেকে দুর্গন্ধ বের হওয়া।
(৬) হঠাৎই ওজন কমে যাওয়া।
(৭) দাঁতে প্রচণ্ড ব্যথা।
কেন এটি বিপজ্জনক?
তামাক বা মদের কারণে যে ওরাল ক্যান্সার হয়, তার তুলনায় এই ধরনের ক্যান্সার তুলনামূলকভাবে কম দেখা যায়। তবে এর একটি বড় সমস্যা হল, এটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে। এর কারণ হল, মুখের ভেতরের টিস্যুগুলি খুব পাতলা এবং রক্তনালী প্রচুর পরিমাণে থাকে, যা ক্যানসারের কোষগুলোকে সহজে অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়তে সাহায্য করে। এই কারণে এই ধরনের ক্যান্সার ধরা পড়লে অনেক সময়ই তা গুরুতর আকার ধারণ করে এবং চিকিৎসা করা কঠিন হয়ে পড়ে।
এর থেকে বাঁচার উপায় কী?
আপনার যদি কোনও দাঁত অস্বাভাবিক ধারালো হয় বা ভেঙে গিয়ে ধারালো হয়ে থাকে, তবে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। একজন দাঁতের ডাক্তার বা ডেন্টিস্ট কয়েকটি সহজ উপায়ে এর সমাধান করতে পারেন।
(১) গ্রাইন্ডিং: এক্ষেত্রে ধারালো দাঁতের প্রান্তগুলো মসৃণ করে দেওয়া হয়। এটি একটি সহজ ও ব্যথাহীন পদ্ধতি।
(২) ফিলিং বা ক্যাপ: যদি দাঁত ভেঙে গিয়ে থাকে, তবে তা ফিলিং বা ক্যাপ দিয়ে ঠিক করে দেওয়া যায়।
(৩) দাঁত তুলে ফেলা: যদি দাঁতটি অতিরিক্ত খারাপ অবস্থায় থাকে এবং অন্য কোনও উপায়ে ঠিক করা সম্ভব না হয়, তবে সেই দাঁতটি তুলে ফেলাই ভালো।
যেকোনও ধরনের অস্বাভাবিকতা বা মুখের ভেতরে দীর্ঘস্থায়ী কোনও ক্ষত দেখলে দেরি না করে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করা জরুরি। নিয়মিত দাঁতের চেকআপ করানোও ওরাল ক্যানসার প্রতিরোধের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায়।
