ক্ষীরোদ ভট্টাচার্য: জরায়ুর ক্যানসারে যুদ্ধ জয়ে লড়াইয়ে নামল রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তর। প্রথমে রোগনির্ণয়। দ্বিতীয় দফায় বিয়ের আগেই মেয়েদের টিকাকরণ। সারভাইকাল বা জরায়ুর ক্যানসার চিহ্নিতকরণে বছরে অন্তত একবার পরীক্ষার উপর জোর দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য ভবন সূত্রে খবর, সরকারি হাসপাতাল অথবা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে বিবাহিত মহিলা পরীক্ষার জন্য এলে ৪% লঘু অ্যাসিটিক অ্যাসিড জরায়ুর মুখে কয়েক ফোঁটা দেওয়া হবে। মিনিট দশেক পর যদি জরায়ুর মুখ সাদা হয়ে যায় তবে সেই মহিলার সারভাইকাল ক্যানসার হওয়ার সমূহ আশঙ্কা রয়েছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। মূলত বিবাহিত মহিলারা বেশি আক্রান্ত হন। তাই বিয়ের আগে মেয়েদের দুটি ভ্যাকসিন দেওয়ার জন্য উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
আইসিএমআর-এর বিশিষ্ট অধ্যাপক ডা. সমীরণ পন্ডা বলেন, পশ্চিমবঙ্গ-সহ সব রাজ্যকে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে, অন্তত বিয়ের আগে এইচপিভি ভ্যাকসিন যাতে নিখরচায় দেওয়া হয় তার জন্য পদক্ষেপ নিতে। ভ্যাকসিন পাঠানোর কাজ শুরু হয়েছে। রাজ্য স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা ডা. কৌস্তভ নায়েকের কথায়, ‘‘বেশ কয়েক মাস আগেই রোগ চিহ্নিত করার কাজ শুরু হয়েছে। নিয়োগ করা হচ্ছে আশা এবং অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের। বাড়ি গিয়ে মূলত বিবাহিত মহিলাদের সঙ্গে তাঁরা কথা বলছেন।’’স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তার কথায়, ভ্যাকসিন এলেই জুলাই থেকে দুটি করে টিকা দেওয়ার কাজ শুরু হবে। এস এস কে এম হাসপাতালে অধ্যাপক ডা. দীপ্তেন্দ্র সরকারের কথায়, ‘‘কথায় আছে, শত্রু চিহ্নিত হলেই যুদ্ধ অর্ধেক জয়। তাই রোগনির্ণয়ের উপর আগে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।’’
[আরও পড়ুন: কম বয়সে তামাকের প্রতি আসক্তি বেশি! এর ফল হতে পারে মারাত্মক]
দীপ্তেন্দ্রবাবুর কথায়, মনে রাখতে হবে, ভারত তথা এই বাংলায় মোট ক্যানসার আক্রান্তের ১২ শতাংশ জরায়ুর ক্যানসারে আক্রান্ত হয়। এই তথ্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার। তাই গ্রাম বা মফস্বলের মহিলাদের বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন আশা কর্মীরা। বিবাহিত মহিলাদের অনিয়মিত ঋতুস্রাব, পা ফোলা, কিছু সময়ের জন্য কোমরে ব্যথা অথবা সহবাসের পর পর রক্তস্রাব হলেই স্থানীয় প্রাথমিক হাসপাতালে অবিলম্বে অ্যাসিটিক অ্যাসিড টেস্ট করতেই হবে। পরীক্ষার রিপোর্ট পজিটিভ হলেই তাদের সম্ভাব্য ক্যানসার আক্রান্ত হিসাবে তালিকা করে জেলা হাসপাতাল অথবা মেডিক্যাল কলেজগুলোতে পাঠানো হবে। ইতিমধ্যেই এই পরীক্ষা শুরু হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, ‘‘১৫-৩০ এই বয়সের মধ্যে দুটি ভ্যাকসিন অবশ্যই নিতে হবে। তবে রোগনির্ণয় উত্তম পন্থা। তাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা ও পরিচ্ছন্ন জীবনযাপন সারভাইকাল ক্যানসারে মৃত্যু অনেকটাই কমিয়ে দেয়।’’
জানা গিয়েছে, সারভাইকাল ক্যানসারের জন্য দায়ী হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস। এই ভাইরাস সংক্রমিত হয় পুরুষের মাধ্যমে। অর্থাৎ বিয়ের পর যৌন সংসর্গের ফলে পুরুষের থেকে মহিলাদের আক্রান্ত হওয়ার সমূহ সম্ভবনা বলেই মনে করেন বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের রেডিওলজির অধ্যাপক ডা. রজত বন্দ্যোপাধ্যায়। রজতবাবুর কথায়, ‘‘ফি-বছর গড়ে ১ লাখ মহিলার মধ্যে ১২.৪ জন জরায়ুর ক্যানসারে মারা যায়। তাই প্রাথমিক উপসর্গ হলেই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে। মূলত অনিয়মিত ঋতুস্রাব। ২) পা-কোমর ফুলে যাওয়া। ৩) সহবাসের পর আচমকা রক্তপাত। ৪) খাবারে অরুচি। ৫) দ্রুত ওজন হ্রাস পাওয়া।’’