বিশেষ সংবাদদাতা, নয়াদিল্লি: রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের আঁচ এবার সংসদীয় কমিটির বৈঠককেও উত্তপ্ত করে তুলল। সূত্রের খবর, বুধবার স্বরাষ্ট্র বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের লোকসভার সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদারের (Kakoli Ghosh Dastidar) সঙ্গে কেন্দ্রের শাসকদল বিজেপির সাংসদদের বাক বিতন্ডায় পরিস্থিতি এতটাই তপ্ত হয়ে ওঠে যে, কমিটির সভাপতি কংগ্রেসের রাজ্যসভার ডেপুটি লিডার আনন্দ শর্মাকে (Anand Sharma) হস্তক্ষেপ করতে হয়।
বাংলার প্রসঙ্গে আলোচনা শুরু হতেই অনিল জৈন, নীরজ চন্দ্রশেখরের মতো বিজেপির রাজ্যসভার সাংসদরা বাংলায় মহিলাদের উপর অত্যাচার বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে সরব হন। তাতে তীব্র প্রতিবাদ করেন কাকলি। সূত্রের খবর, কিছু রাজনৈতিক দলের জন্যই বাংলায় ‘ক্রাইম রেট’ বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে কাকলি মন্তব্য করেন। এ প্রসঙ্গে সম্প্রতি এক মহিলা অভিনেত্রীকে গণধর্ষণ করে মাথা কেটে নেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছে এবং একটি রাজনৈতিক দলের পদাধিকারীই এমন হুমকি দিয়েছেন বলে উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরেন তিনি। তাতে বিজেপি সাংসদরা পালটা বাংলায় রাজনৈতিক হিংসা নিয়ে সরব হন।
[আরও পড়ুন: ক্ষমতা দখলে বাধা হতে পারে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব! বাংলা নিয়ে বিশেষ বৈঠকে নেতাদের বার্তা নাড্ডার]
সংসদীয় কমিটির বৈঠকে যেখানে সরকারের সঙ্গে সরকারের আলোচনা হচ্ছে তাতে বিষয়ের বাইরের প্রশ্ন কেন তোলা হচ্ছে বলে পাল্টা সরব হন কাকলিও। বৈঠকে তৃণমূলের (TMC) রাজ্যসভার সাংসদ দীনেশ ত্রিবেদী (Dinesh Trivedi) হাজির থাকলেও কাকলিকেই বেশি আক্রমণাত্মক ভূমিকায় দেখা গিয়েছিল বলে সূত্রের খবর। দু’পক্ষের বাক বিতন্ডা থামাতে শর্মা আলোচ্য বিষয়ের সূচির বাইরের আলোচনা চলবে না বলে পরিস্থিতি শান্ত করেন। বৈঠকে হাজির বাম সদস্যরাও রাজ্য সরকারের দিকে আঙুল তুলেছেন বলেই জানা গিয়েছে। তবে সূত্রের খবর, তাঁরা যে বরাবরই বাংলার সংস্কৃতির কথা শুনে আসছেন এবং কলকাতা যে মহিলাদের জন্য এখনও পর্যন্ত নিরাপদ জায়গা হিসেবেই পরিচিত, বৈঠকের শুরুতেই এই মন্তব্য করেছেন আনন্দ শর্মা।
[আরও পড়ুন: ফের ভাঙন তৃণমূলে, এবার বিজেপিতে যোগ দিলেন শান্তিপুরের বিধায়ক অরিন্দম ভট্টাচার্য]
এদিনের বৈঠকের আলোচ্য বিষয়ের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ ও হরিয়ানা এই দুই রাজ্যে ‘মহিলা এবং শিশুদের উপর অত্যাচার’ও ছিল। রাজ্যের মুখ্যসচিব, ডিজি, স্বরাষ্ট্র সচিবদের কমিটির পক্ষ থেকে আগেই তলব করা হয়েছিল। মুখ্যসচিব আলাপণ বন্দ্যোপাধ্যায় কমিটির সামনে প্রেজেন্টেশন দেন এবং সেখানে রাজ্যে যে মহিলাদের উপর অত্যাচারের ঘটনা ক্রমশ নীচের দিকে যাচ্ছে সেই খতিয়ান তুলে ধরেন। ডিজি বীরেন্দ্রও এই সংক্রান্ত হিসেবের খতিয়ান পেশ করেন বলেই জানা গিয়েছে। বৈঠকে হাজির রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব এইচ কে দ্বিবেদী, নারী ও শিশু কল্যাণ দপ্তরের সচিব সঙ্ঘমিত্রা ঘোষেরা রাজ্য সরকারের ‘কন্যাশ্রী’ প্রকল্পের মাধ্যমে কীভাবে মেয়েদের পড়াশোনার ব্যবস্থা করা হয়েছে এবং ১৮ বছরের আগে তাদের বিয়ে না দেওয়ার বিষয়টিকে নিশ্চিত করতে সক্ষম হয়েছে তা বিশদে তুলে ধরেছেন বলেই জানা গিয়েছে। বিজেপির সাংসদরা রাজ্যের ডিজির কাছে বাংলায় মানব পাচার বিশেষত নারী পাচার বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে অভিযোগ তুলে কেন এমন হচ্ছে সে কথাও জানতে চেয়েছেন। এ বিষয়ে পরে জানাবেন বলে ডিজি বীরেন্দ্র উত্তর দিয়েছেন বলেই সূত্রের খবর।