সুমিত বিশ্বাস, কেদারনাথ: স্বয়ং মহাদেব যে মন্দিরের রক্ষাকর্তা, তার দর্শনে কালোবাজারি! কেদারধাম দর্শনে সাত মিনিটের হেলিকপ্টার যাত্রায় আসা-যাওয়া একজনের ভাড়া ১৮ হাজার! অতি সাধারণ গেস্ট হাউসে ছজনের থাকার ঘরভাড়া ১২ হাজার টাকা। ১ লিটার জল ১০০ টাকা, এক কাপ কফি ৬০, চা ৩০ টাকা! শেষ নয় এখানেই। স্পেশাল দর্শনের তকমা দিয়ে পাঁচ জনের অভিষেকের খরচ ৫,৫০০ টাকা। বর্ষার মরশুম আসার আগে দেবভূমি কেদারনাথে চলছে এমনই কালোবাজারি।
মহাদেবের আবাসস্থলেও দালালদের দাপট। তবুও উদাসীন উত্তরাখণ্ড পুলিশ থেকে সরকার। তাই হেলিট্যাক্সির টিকিট থেকে গেস্ট হাউস সঙ্গে বিশেষ দর্শনেও দালাল চক্র। এছাড়া সাধু-সন্তরা তো রয়েইছেন। সাদা চন্দন, গেরুয়া টিকা দেওয়ার নাম করে কিছু প্রবচন, কথায় আর ভোজনের আবদারে কখন যে মানিব্যাগ থেকে ৫০০ টাকা খসে যাবে বোঝা মুশকিল। হিমালয় ছুঁয়ে থাকা কেদারভূমে বদলে যাওয়া আবহাওয়ার মতোই এই দেবভূমির চালচিত্র বদলাতে শুরু করেছে।
সরকার নির্ধারিত হেলিট্যাক্সিতে অনলাইন আসা-যাওয়া ভাড়া ৬ হাজার ১২৮ টাকা। অফলাইনে ৯ হাজার ১৫। কিন্তু আইআরসিটিসি ওয়েব খুললে তবে তো। সেই অক্ষয় তৃতীয়ায় কেদারনাথের দরজা খোলার পর এপ্রিলে ১০ মিনিটের জন্য ওই ওয়েবসাইট খুলেছিল। তার পর ১৪ জুন মাত্র ৫ মিনিটের জন্য দেখা মিলেছিল ওয়েবসাইটের। এর সঙ্গে আছে ভিআইপি কোটা। তাই কেদার দর্শনে দালাল দাপট ক্রমশ বাড়ছে বলে অভিযোগ।
[আরও পড়ুন: ‘RSS শাখায় যোগদানের পরীক্ষা নাকি!’, NET-এর প্রশ্নপত্রেও সংঘের ছায়া দেখছে সিপিএম]
আর সেই কারণেই হেলিকপ্টারের যাত্রায় ১৮,৫০০ টাকা দিলে তবে উড়িয়ে আনা হবে। তবে ওই টাকা খরচ করলেও যে হেলিট্যাক্সি যাত্রা নিশ্চিত তা নয়। সবটাই নির্ভর করছে ওই দালালদের মন-মর্জির ওপরই। না হলে গৌরীকুণ্ড থেকে ২৪ কিমি নতুন পাহাড়ি পথে হাঁটা। যদিও ২০১৩-র ১৬ জুন ‘মহাপ্রলয়’-এর আগে কেদারনাথে আসার চড়াই-উতরাই পথ ছিল ১৮ কিমি। হাঁটা পথ ছাড়াও ঘোড়ার পিঠে কিংবা পালকি, পিট্টু রয়েছে।
তবে পালকির খরচাও কম নয়। আসা-যাওয়া ২২ হাজার। আর ঘোড়ার পিঠে ৭ হাজার। পিট্টুও ১০ হাজারের কম নয়। দীপাবলি পর্যন্ত মন্দির খোলা থাকলেও বর্ষা দোরগোড়ায় থাকায় শুক্রবারই হেলিট্যাক্সি যাত্রায় ইতি হচ্ছে। এর পর আবার সেপ্টেম্বরে শুরু হবে পরিষেবা। ৯টি কোম্পানির ৯টি হেলিট্যাক্সি সকাল ৬টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত ১১ ঘণ্টায় ২৮ বার যাওয়া-আসা করছে। দেবভূমিতে চক্কর কাটছে ২৫২ বার, নিরাপত্তার তোয়াক্কা না করেই। ধীরে ধীরে বদলে যাচ্ছে এই দেবভূমিও। দালাল চক্র থেকে রক্ষা নেই স্বয়ম্ভূর!