গ্রামভিত্তিক অর্থনৈতিক পুনর্জাগরণে কৃষিই একমাত্র ভিত্তি। বলাই বাহুল্য কৃষির এই বিপুল ব্যাপ্তির মাঝে জল, কৃষি, মৎস্য ও মাৎসিকির এক বিপুল ভূমিকা রয়েছে। যা বিগত তিন দশকের কৃষি অর্থনীতির পরিসরে বিপুল সাড়া জাগিয়েছে। লিখছেন অর্চনকান্তি দাশ, আইসিএআর-কেন্দ্রীয় অন্তর্স্থলীয় মৎস্য অনুসন্ধান সংস্থা, বারাকপুর।
এই সব খাঁচার আকার/আকৃতি ৫মি X ৫মি X ৪মি (হাপার দৈর্ঘ্য), সুতারং, উৎপাদনশীল ঘনত্ব ৮৭.৫ ঘন মি.। গোলাকৃতি খাঁচার ক্ষেত্রে হাপার দৈর্ঘ্য ৪ মি. ও ব্যাস ২০ মি. হলে উৎপাদন ঘনত্ব হবে ১০০০ ঘন মি. এবং এই গোলাকৃতি খাঁচায় রুই/কাতলার বাজারীকরণ সাইজের ১-২ কি. গ্রাম এর ৬/৭ মাসে উৎপাদন করা যাবে।খাঁচায় মাছ চাষের খাবার হিসেবে কার্প জাতীয় মাছের জন্যে ২৫-২৮% প্রোটিন যুক্ত খাবার যথেষ্ট, রাইস ব্রন (তৈল নির্গত), সর্ষের খোল, বাদাম খোল ই যথেষ্ট। এছাড়া পাঙ্গাস জাতীয় মাছের (Fish) ক্ষেত্রে ভাসমান খাবার প্রথম দিকে ২৮-৩২% প্রোটিন যুক্ত ও বৃদ্ধির সাথে সাথে ২৪-২৫% প্রোটিন যুক্ত খাবার দিলেই যথেষ্ট।
প্রথম দিকে ভাসমান খাবারের দানার মাপ ১-২ মিলি মিটার ও পরের দিকে ৪-৫ মিলি মিটার দিতে হবে। খাবারের দানা যাতে নেটের হাপার (১ ইঞ্চি) ফাঁক দিয়ে গলে বাইরে চলে যেতে না পারে তার জন্যে জলের উপরের অংশে আধা মিটার একেবারেই ছোট ফাঁসের (০-১ মিলি মিটার) নেট দিয়ে চারিদিকে ঘিরে দিলেই হবে। সাধারণত, হাপা জলে স্থাপিত করার এক সপ্তাহ পরে মাছ ছাড়া হয়, না হলে মাছেরা হাপার ধরে গিয়ে তাদের গা ঘষে ঘষে শরীরের রোগ প্রতিরোধক পিচ্ছিল পদার্থের আবরণকে উন্মোচিত করে বহিঃপরজীবীর আক্রমণের শিখার হয় ও মারা যায়।সেইজন্য এক সপ্তাহ জলে ডুবে থাকলে নেটে শৈবাল জুড়ে গিয়ে নেটের গাত্র মসৃণ রাখে ও মাছের প্রাথমিক আবহে খাপ খাওয়াতে ও বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
[আরও পড়ুন: আমফান থেকে শিক্ষা! যশের ক্ষতিপূরণের ক্ষেত্রে স্যাটেলাইটের ছবি ব্যবহার করবে রাজ্য]
নেটলন হাপা জলে ডুবে থাকার ফলে নেটের গায়ে অতিরিক্ত শৈবাল/স্পঞ্জ জমে নেটের ফাঁস/ফাঁক গুলোকে বন্ধ করে জলে দ্রবীভূত অক্সিজেনের ঘাটতি ঘটে । সেইজন্যে, জলের ফ্লাশিং বৃদ্ধির তাগিদে সাধারণত নরম ব্রাশ ব্যবহার করে নেটের গায়ের জমে যাওয়া অতিরিক্ত শৈবাল/স্পঞ্জ কে তুলে দিয়ে নেটের ফাঁস কে পরিষ্কার রাখা হয়।এছাড়া জৈব পদ্ধতিতে ও প্রতি হাপায় ৫-১0 টি করে ৫-১0 গ্রাম সাইজের জাপানি পুঁটি/কালবোস/মনোসেক্স তিলাপিয়া ছেড়ে দিলে তারা নেটের ফাঁসকে পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে।
পশ্চিমবাংলার উদ্যোগী যুবা সংগোষ্ঠী, স্বনির্ভর দল, মৎস্য চাষি সমবায় সমিতি এবং উদ্যোগী মাছ চাষিরা এই বাংলার প্রচুর খোলা জলরাশিতে খাঁচায় মাছ চাষ করে অর্থনৈতিক স্বনির্ভর হাওয়াই শুধু নয়, গ্রাম বাংলার অপুষ্টি দূরীকরণে এক মুখ্য ভূমিকা নিতে পারেন । আগ্রহী সংগঠন/গোষ্ঠী/মৎস্য সমবায় সমিতি/উদ্যোগী ব্যক্তি বা যুবা গণ কেন্দ্রীয় বা রাজ্য স্তরে খাঁচায় মাছ চাষের সরকারি অনুদান গ্রহণ করার জন্যে আবেদন করতে পারেন। এমনকি, সাম্প্রতিক কালের প্রধানমন্ত্রী মৎস্য সম্পদা যোজনায় ও খাঁচায় মাছ চাষে চাষীদের প্রোৎসাহিত করার জন্যে প্রচুর ফান্ডের ব্যবস্থা করা হয়েছে যা রাষ্ট্রীয় মৎস্য বিকাশ বোর্ড (NFDB) বা রাজ্যের মৎস্য দপ্তরের মাধ্যমে বন্টনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
এছাড়া, খাঁচায় মাছ চাষের দক্ষতা অর্জনের জন্যে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য স্তরে বিভিন্ন প্রশিক্ষণেরও বন্দোবস্ত করা হয়েছে। আগ্রহী প্রার্থী ও সংগঠিত গোষ্ঠী এই প্রশিক্ষণের সুফলকে কাজে লাগিয়ে খাঁচায় মাছ চাষের সাথে সাথে খাঁচা নির্মাণ ও সরবরাহ করে অর্থনৈতিক শ্রীবৃদ্ধি ঘটাতে পারেন। আগামী বাংলা তথা গ্রামীণ ভারতে এই খাঁচায় মাছ চাষের উত্তরোত্তর উন্নতির জন্য বেকারদের এগিয়ে আসতে হবে। এর সুফল লাভে সচেষ্ট হলে নিজেদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের নতুন দিশা খুঁজে পাবেন তাঁর। তার ফলে নিজে সমৃদ্ধ হবেন ও গ্রামীণ বাংলা তথা ভারতকে সমৃদ্ধতর করবেন তাঁরা।