কলকাতার নামী রন্ধনশিল্পীরা একে একে শেয়ার করছেন তাঁদের অভিজ্ঞতা ও স্পেশ্যাল রেসিপি। ফিশফিশ, মিষ্টি কথা ও ওনলি আলিবাবা-র শেফ দেবাশিস কুণ্ডুর সঙ্গে আড্ডা দিলেন তিতাস৷
জন্মসূত্রে আমি জামশেদপুরের মানুষ, সেখানেই আমার ছোটবেলা কেটেছে। ছেলেবেলা থেকেই যে কোনও শৌখিন কাজের প্রতি আগ্রহ ছিল, তবে রান্নার সঙ্গে কোনও যোগই ছিল না। ভেবেছিলাম, ফ্যাশন ডিজাইনার হব। ভাগ্যের ইচ্ছা অন্য কিছুই ছিল। বাংলা মাধ্যমে পড়াশোনা করার ফলে ইংরেজিতে একেবারেই সড়গড় ছিলাম না। বন্ধুদের দেখাদেখি আমিও হোটেল ম্যানেজমেন্ট পরীক্ষা দিতে বসি। চান্স পাই হায়দরাবাদে। ইংরেজি বুঝতে পারলেও ফ্লুয়েন্টলি বলতেই পারতাম না। ভীষণ আপসেট লাগত। ইংরেজি বলতে না পারার কারণে কলেজে কোনও বন্ধু ছিল না। সেখানকার স্থানীয় ভাষা বলতে পারতাম না, তার ওপর ইংরেজিতে কাঁচা।
[ আরও পড়ুন: এই গরমে চিরাচরিত চিকেনের স্বাদে আনুন বদল, রইল রেসিপি]
ফার্স্ট ইয়ারে কোনওরকমে পাশ করেছিলাম। তারপর নিজেকে বদলানোর তাগিদেই ইংরেজি খবরের কাগজ পড়া শুরু করি। ইংরেজি গান শুনতে লাগলাম, আস্তে আস্তে ভাষাটা রপ্ত করলাম। প্রথম বছরে একরকম কারওর সঙ্গে কথা বলতে পারিনি, আর কোথায় গেলে কম কথা বলতে হবে ভেবেই আমার কিচেন বেছে নেওয়া। রান্নাঘরে থাকতে থাকতে ক্রমে রান্নার প্রতি ভালবাসা জন্মায়। ট্রেনিং শেষে নামজাদা একটি হোটেলে চাকরি পাই বেঙ্গালুরুতে। কয়েকদিন চাকরি করার পর হঠাৎ একদিন মনে হল ব্যবসা করি। প্রসেসড ফুডের একটা ব্যবসা শুরু করি কলকাতায় এসে। ব্যবসা চলেনি। তখন হাতে কোনও টাকাও নেই। এরপর বাড়িতে ফিশ ফ্রাই, পিৎজা, ফিংগার বানিয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ডেলিভারির ব্যবসা শুরু করি। পুজো প্যান্ডেলেও বিক্রি করেছি। এরপর কলকাতার একটি পাঁচতারা হোটেলে জয়েন করি ট্রেনি পদে, যেটা ছিল ইউটিলিটি ওয়ার্কারদের ওপরের পোস্ট, যার মানে তাঁরা না এলে হোটেলের বাসন মাজতে হত আমায়। ১৬ বছর চাকরি করি সেখানে। প্রথম ১২ বছরে ১৬ টা প্রোমোশন হয়েছিল। শুরুতে আমার মাসমাইনে ছিল ৫০০ টাকা, তারপর বেড়ে হয় ৭০০ টাকা। ৭০০ টাকার মধ্যে ৫০০ টাকা ঘর ভাড়া দিতাম, ২০০ টাকা ছিল হাতখরচ। কলিগের স্কুটারে যেতাম। ফিরতাম হোটেলের গাড়িতে। অফ ডেও নিতাম না। খরচের ভয়ে। এরপর ফুড স্টাইলিং—এরও কাজ শুরু করি। তখন একটি বাঙালি ফুড ম্যাগাজিন থেকে অফার আসে যৌথভাবে কাজ করার। এরপরই রেস্তোরাঁর ব্যবসা। কোনওদিনই ভাবিনি রান্না করব, কোনও আগ্রহও ছিল না। কিন্তু এই রান্নাই এখন আমার পরিচয়ের মূলে। খাবার অন্যের প্লেটে সাজিয়েই আমার তৃপ্তি। ফুড স্কাল্পচার, ফুড প্লেটিং ও ফুড স্টাইলিং আমাকে সবচেয়ে আনন্দ দেয়।
[ আরও পড়ুন: ক্ষীর-পুলি-পুডিংয়ে আনুন ফলের স্বাদ, রইল লোভনীয় কয়েকটি রেসিপি]
আম ইলিশ
উপকরণ: ইলিশমাছ ১ কেজি, সাদা সরষে বাটা ৪ চা চামচ, কালো সরষে বাটা ১ চা চামচ, কাঁচা আম বাটা ১/২ চামচ, নুন-চিনি স্বাদমতো, সরষের তেল ১ চামচ, কাঁচালঙ্কা বাটা ৫,৬ টা৷
পদ্ধতি: প্রথমে সমস্ত উপকরণ একসঙ্গে মিশিয়ে মাছের টুকরোর গায়ে মাখিয়ে ৩-৪ মিনিট ভাপিয়ে নিন। পরিবর্তে ম্যারিনেট করা মাছ চাটুতে এপিঠ-ওপিঠ করে হালকা সেঁকে নিন। এরপর ম্যারিনেশনের মশলা প্যানে খানিকক্ষণ নাড়াচাড়া করে গা-মাখা হয়ে এলে নামিয়ে সেঁকা মাছের ওপর ছড়িয়ে দিন।
চিংড়ি পোস্ত টিকিয়া
উপকরণ: খোসা ছাড়ানো চিংড়িমাছ ২৫০ গ্রাম, পোস্ত ৪ চা চামচ, পেঁয়াজ কুচনো অর্ধেক, ধনেপাতা কুচি ২ চা চামচ, কাঁচালঙ্কা কুচি ৩-৪ টে, সেঁকার জন্য সরষের তেল, নুন ও চিনি স্বাদমতো, ময়দা ১ চা চামচ।
পদ্ধতি: প্রথমে পোস্ত ও চিংড়ি একসঙ্গে মিহি করে বেটে নিন। এবার একটা পাত্রে পোস্ত-চিংড়ি বাটা, পেঁয়াজ, ধনেপাতা, কাঁচালঙ্কা, নুন, চিনি ও ময়দা মিশিয়ে নিন। এবার মিশ্রণ থেকে টিকিয়ার আকারে গড়ে চাটুতে সেঁকে নিন। ওটিজিতে বেকও করা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে মোল্ডে টিকিয়া রেখে ১৮০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় আভেন প্রি হিট করুন। এরপর ১০০ ডিগ্রিতে ৭-৮ মিনিট বেক করে নিন।
কাঁকড়া কষা
উপকরণ: কাঁকড়া ৫০০ গ্রাম, টমেটো ২টো, শুকনো লঙ্কা বাটা ২ চা চামচ, ধনেপাতা কুচি সাজানোর জন্য, নুন-চিনি স্বাদমতো, জিরে গুঁড়ো ১/২ চামচ, ভাজা পেঁয়াজ বাটা ২ চা চামচ, আদা বাটা ১/২ চামচ, সরষের জেল ৪ চা চামচ৷
পদ্ধতি: কাঁকড়া কেটে ধুয়ে পরিষ্কার করে হালকা গরম জলে ফুটিয়ে নিয়ে জল ঝরিয়ে নিন। এবার কড়াইতে তেল গরম করে পেঁয়াজ বাটা, টমেটো পেস্ট কষে নিন। স্বাদমতো নুন ও চিনি দিয়ে দিন। এবার মশলা কষা হয়ে এলে বাকি সমস্ত উপকরণ দিয়ে দিন। এরপর কাঁকড়াগুলো দিয়ে ৫-৭ মিনিট কষে নিয়ে, অল্প জল দিয়ে ফুটিয়ে নামিয়ে নিন।
The post বৈশাখী দুপুরে ইলিশ, চিংড়ি, কাঁকড়ার নতুন রেসিপিতে পাত সাজান appeared first on Sangbad Pratidin.