shono
Advertisement

বাজারে যাওয়ার বদলে বাড়িতেই করুন ক্যাপসিকাম চাষ, জেনে নিন পদ্ধতি

সহজ পদ্ধতিতে চাষ করে হতে পারে প্রচুর অর্থলাভ৷ The post বাজারে যাওয়ার বদলে বাড়িতেই করুন ক্যাপসিকাম চাষ, জেনে নিন পদ্ধতি appeared first on Sangbad Pratidin.
Posted: 07:23 PM May 12, 2019Updated: 07:23 PM May 12, 2019

ধীমান রায়, কাটোয়া: ক্যাপসিকাম বারো মাসের সবজি। লঙ্কা প্রজাতির এই সবজিটির বাজারে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বিশেষ করে হোটেল-রেস্তরাঁয় ক্যাপসিকাম ছাড়া রান্না প্রায় হয় না বললেই চলে। খুবই উপকারী সবজি। বাজারে সারাবছরই মেলে। দামও বেশ ভালই পাওয়া যায়। তাই বর্তমানে কৃষকরা ক্যাপসিকাম চাষের দিকে অনেকেই ঝুঁকছেন। বিপুল অঙ্কের আর্থিক লাভও করছেন। পূর্ব বর্ধমান জেলার বিভিন্ন ব্লকের কৃষি দপ্তর থেকেও ক্যাপসিকাম চাষে কৃষকদের উৎসাহিতও করা হচ্ছে। পাশাপাশি করা হচ্ছে সরকারি সাহায্যও।

Advertisement

মাটি: জলনিকাশিযুক্ত দোআঁশ মাটি লঙ্কা প্রজাতির এই সবজিটি চাষের পক্ষে অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
জাত: বাজারে বিভিন্ন জাতের ক্যাপসিকামের বীজ পাওয়া যায়। এর মধ্যে উন্নত কয়েকটি জাত হল ক্যালিফোর্নিয়া ওয়াণ্ডার, ইয়োলো ওয়াণ্ডার, চায়নিজ জায়েন্ট, হাম্বার্স, কিং অফ নর্থ ইত্যাদি। আর হাইব্রিড প্রজাতির মধ্যে  ভারত, বিটলিবেল, কানাপে, ওসির, ইন্দিরা, মহাভারত, ম্যানহাটন, রতন, অনুপম, তানভি, মানহেম-৩০১৯, মানহেম-৩০২০, আ্যটলাস, লেডিবেল, ভ্যালডর, নাথহীরা, সিডওয়ে, সুইট ব্যানানা, আর্লি বনতি, ইত্যাদি কয়েকটি প্রজাতি রয়েছে।

[ আরও পড়ুন: গ্রীষ্মের প্রখর তাপে লক্ষ্মীলাভের উৎস এই সবজিগুলি]

বীজ বোনার সময়: এখন সারা বছরই ক্যাপসিকাম উৎপন্ন হয়। তবে খুব ভাল ফসল পেতে ভাদ্র ও মাঘ মাসে বীজ বপন করা হয়। বীজ থেকে চারা বের হওয়ার পর চারার বয়স একমাস হলে সেগুলি তুলে ফাঁকা ফাঁকা করে বসাতে হবে। উন্নত প্রজাতির বীজগুলি একর প্রতি আড়াইশো গ্রাম ও হাইব্রিড প্রজাতির বীজ একর প্রতি ১৫০ গ্রাম দেড় থেকে দু’ফুট দূরে দূরে বসাতে হবে।

সার প্রয়োগ: জমি তৈরির সময় একর প্রতি চার টন জৈব সার ও ছ’কিলোগ্রাম আ্যজোটোব্যাকটর এবং পিএসবি প্রয়োগ করা হয়। চারা লাগানোর পর রাসায়নিক সার হিসাবে একর প্রতি মূল সার ২০ কিলোগ্রাম নাইট্রোজেন, ৩২ কিলোগ্রাম ফসফেটও ১৬ কিলোগ্রাম পটাশ এবং চাপান সার হিসাবে প্রতিবারে ১০ কিলোগ্রাম নাইট্রোজেন ও আট কিলোগ্রাম পটাশ চারা জন্মানোর ২১ ও ৪০ দিন পর প্রয়োগ করা হয়। গাটতিযুক্ত মাটিতে জমি তৈরির সময় একর প্রতি চার থেকে ছ’ কিলোগ্রাম সালফার, ১০ কিলোগ্রাম জিংক সালফেট, চার কিলোগ্রাম বোরাক্স ও ২০০ গ্রাম আ্যমোনিয়াম মলিবডেট জৈব সারের সঙ্গে মিশিয়ে প্রয়োগ করা হয়। মাটিতে অনুখাদ্য তিল থেকে চারটি ফসলের জন্য একবার প্রয়োগ করলেই যথেষ্ট। প্রয়োজনে পাতায় স্প্রে করার অনুখাদ্য এক লিটার জলে দুই গ্রাম দিয়ে মিশ্রণ তৈরির পর চারা বসানোর পর একও দেড় মাসের মাথায় প্রয়োগ করা হয়।

[ আরও পড়ুন: তৈলবীজে আরও বেশি ফলন চান? অত্যাধুনিক পদ্ধতিতে করুন চাষ]

পোকামাকড়: ফল ও কাণ্ড ছিদ্রকারী পোকাগুলিকে বলা হয় কীড়া পোকা। এগুলি গাছের ডগা ও ফলের মধ্যে প্রবেশ করে ভিতর থেকে খেতে শুরু করে। আক্রান্ত ডগা শুকিয়ে যায় এবং ফল পচে যায়। সারা বছর এই পোকার আক্রমণ লক্ষ্য করা যায়। আক্রান্ত ডগার নিচ থেকে কেটে পুড়িয়ে নষ্ট করে দিতে হয়। চারা অবস্থায় প্রতি গাছে পাঁচ গ্রাম পিউরাডন-৩জি বা কারটাপ-৪জি দেওয়া দরকার। নিমজাত কীটনাশক বা ব্যাবিলাস থুরিনজিয়েনসিস দেড় গ্রাম বা স্পাইনোস্যাড ৪৫ শতাংশ ০.১৫ মিলিলিটার বা কারটাপ ৫০ শতাংশ এক গ্রাম স্প্রে করতে হবে। আর ক্যাপসিকামে বাঘাপোকার আক্রমণ দেখা যায়।

এই পোকা পাতার সবুজ অংশ খেয়ে ঝাঁজরা করে দেয়। এক্ষেত্রে কার্বাডিল আড়াই গ্রাম বা থায়োডিকার্ব এক গ্রাম বা কুইনালফস স্প্রে করা যায়। এছাড়া, হলদে ও লাল মাকড়ের ক্যাপসিকাম বা লঙ্কায় আক্রমণ সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। খালি চোখে দেখা যায় না এমন ক্ষুদ্র হলদে পোকা দলবদ্ধভাবে ডগার পাতার রস নিচ থেকে চুষে খায়। শুষ্ক ও গরম আবহাওয়াতেই এদের আক্রমণ সবচেয়ে বেশি ঘটে। প্রতি কিলোগ্রাম বীজের পাঁচ গ্রাম ইমিডাক্লোপ্রিড মিশিয়ে বীজ শোধন বা চার মিলিলিটার কার্বোসালফান প্রতি লিটার জলেগুলে ছ’ঘন্টা চারার শিকড় শোধন করা উচিত।

রোগ:
জলদি ও নাবি ধসা রোগ এই জাতীয় গাছে বেশি দেখা যায়। এই রোগ বীজতলায় চারায় মাটির ঠিক উপরে দেখা যায়। বীজ বা চারা রোপনের পর গাছে প্রথমে নিচের পাতায় কালচে ও বাদামী বর্ণের নানা আকৃতির দাগ হয়। এই রোগের জন্য ম্যানকোজেব ৭৫ শতাংশ আড়াই গ্রাম কপার অক্সি ক্লোরাইড ৫০ শতাংশ চার গ্রাম স্প্রে করা হয়। এছাড়া, ছত্রাকজনিত গোড়া পচা রোগে গাছ ধীরে ধীরে হলদে হয়ে শুকিয়ে যায়। এই রোগ প্রতিরোধে গাছের গোড়ায় থায়াফ্যানেট মিথাইল দু’ গ্রাম প্রতি লিটার জলে গুলে স্প্রে করতে হবে। এছাড়া, ছত্রাক, ব্যাকটেরিয়া ভাইরাসঘটিত রোগের প্রতি খেয়াল রেখে কৃষি বিশেষজ্ঞদের কাছে পরামর্শ নিয়ে তার প্রতিকার করতে হবে।

[আরও পড়ুন: জায়গা না থাকলে বস্তাতেই করুন সবজি চাষ, জেনে নিন পদ্ধতি]

ফলন: চারা বসানোর দু’মাসের পর থেকে পরবর্তী এক থেকে দেড় মাস ফলন দেয়। একর প্রতি ৫০ থেকে ৭৫ কুইন্টাল পর্যন্ত ফলন হয়। বাজারে কম করে খুচরো হিসাবে ৭০ থেকে ১৫০ টাকা কিলোগ্রাম দরে বিক্রি করা যেতে পারে।

The post বাজারে যাওয়ার বদলে বাড়িতেই করুন ক্যাপসিকাম চাষ, জেনে নিন পদ্ধতি appeared first on Sangbad Pratidin.

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement