আবহাওয়াবিদ হতে চাইলে কোন কোন বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করতে হবে? জানাচ্ছেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া বিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. সুব্রত কুমার মিদ্দা। অনিন্দ্য সিংহ চৌধুরি।
কখনও আয়লা, কখনও যশ। বছর বছর ঘুরে ফিরে ঘূর্ণিঝড়ের সাক্ষী থেকেছে বাংলা। সেই ঘূর্ণিঝড় রাজ্যের কান ঘেঁষে যাবে, না কি বাংলাদেশের দিকে পাড়ি দেবে? না কি আছড়ে পড়বে ওড়িশা উপকূলে? বিপর্যয় হানার আশঙ্কা শুনলেই এমন হাজারও প্রশ্ন ঘুরপাক খায়। কিংবা ধরা যাক, কখনও প্রচণ্ড গরম। তো কখনও প্রবল বৃষ্টি। কখনও শৈত্যপ্রবাহ-আবহাওয়ার নানা খামখেয়ালিপনা সম্পর্কে সতর্ক করতে পারেন আবহাওয়াবিদ। কোভিড পরিস্থিতির পর থেকেই বদলাচ্ছে জীবনযাত্রা। সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের বিপদ। সেই বিপর্যয় সম্পর্কে আগাম সতর্ক করতে পারেন আবহাওয়া-বিশারদ। বর্তমানে ‘সাবজেক্ট অন ডিমান্ড’ বলতে যা বোঝায় তা হল আবহাওয়া বিজ্ঞান। এই সাবজেক্টের চাহিদা বিশ্বজুড়ে। গবেষণার সুযোগ তো বটেই, শিক্ষকতার স্কোপও প্রচুর। মৌসম ভবনে চাকরি। যেহেতু এটি গবেষণাভিত্তিক সাবজেক্ট তাই পড়ুয়ারা বেশিরভাগই রিসার্চের দিকে ঝোঁকে।
সায়েন্স থাকতেই হবে
বিএসসি অনার্স পাস ছাত্রছাত্রীরা এই কোর্সের জন্য আবেদন করতে পারবে। স্নাতকে ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি, অঙ্ক এবং রাশিবিজ্ঞান থাকতে হবে। কোর্সের মেয়াদ দুই বছর। চারটি সেমেস্টারে ভাগ করে পড়ানো হয়। স্বল্প খরচের কোর্স। বেশিরভাগ ছাত্রছাত্রী ফ্রি স্টুডেন্টশিপ পেয়ে থাকে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ফিজিক্সের পড়ুয়া এই কোর্স করতে আগ্রহী হয়। কারণ এটি ফিজিক্সের একটি শাখা।
ভর্তি হওয়ার নিয়মকানুন
বালিগঞ্জ সায়েন্স কলেজ ক্যাম্পাসে প্রবেশিকা পরীক্ষার মাধ্যমেই প্রতি বছর ভর্তি নেওয়া হয়। সিট ১৬। গত দু’বছর কোভিডের জন্য প্রবেশিকা পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হয়নি। বিএসসি (অনার্স)-এর তৃতীয় বর্ষের নম্বরের উপরে ভিত্তি করে ভর্তি নেওয়া হয়। সাধারণত জুন-জুলাই মাসে ভর্তির প্রক্রিয়া চলে। আগস্ট বা সেপ্টেম্বরের মধ্যে নতুন সেশন শুরু হয়।
[আরও পড়ুন: কলকাতায় UEM-এর আয়োজনে অভিনব হেকাথলন প্রতিযোগিতা, অংশ নিল সারা দেশের ১২০৬ প্রতিযোগী]
সিলেবাসের রকমফের
আপার অ্যাটমস্ফিয়ার, লোয়ার অ্যাটমস্ফিয়ার, মিডল অ্যাটমস্ফিয়ার, সোলার ফিজিক্স পড়ানো হয়। প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় সেমেস্টারে ৪০-৫০ নম্বরের প্র্যাকটিক্যালের পেপার থাকলেও শেষ সেমেস্টারে তাতে বিশেষ জোর দেওয়া হয়। ১২০ নম্বরের প্রজেক্ট ওয়ার্ক থাকে। অ্যাটমস্ফিয়ার রিসার্চের উপর থিসিস বানাতে হয় সেখানে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতায় আলিপুরের আইএমডিতে গিয়েও প্র্যাকটিক্যাল ক্লাস হয়। সেখানে আবহাওয়া সম্পর্কে নানা তথ্য জানতে পারে পড়ুয়ারা। আধুনিক যন্ত্রের সাহায্যে তাপমাত্রা, আর্দ্রতা, প্রেসার মাপার কাজ করে। আবহাওয়ার গতিবিধি নিয়ে কাজ করে।
পড়ার সুযোগ অনেক
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া রাজ্যের বাইরে কোচি ইউনিভার্সিটি অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি, রাজস্থান সেন্ট্রাল ইউনিভর্সিটি। বেনারস হিন্দু ইউনিভার্সিটিতে আবহাওয়া বিজ্ঞানের শাখা আছে। এখন বেসরকারি ইউনিভার্সিটিও মাস্টার্স ডিগ্রি চালু করছে এ বিষয়ের উপর। জেআইএস ইউনিভার্সিটিও এ বিষয়ে একটি শাখা চালু করেছে।
গবেষণায় দাও জোর
গবেষণার ক্ষেত্রে ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি (আইআইটি) দিল্লি, ভুবনেশ্বর, খড়গপুর, ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স (বেঙ্গালুরু)তে প্রচুর সুযোগ রয়েছে। কোনও পড়ুয়া চাইলে বিদেশের কোনও রিসার্চ ইনস্টিটিউটেও যেতে পারে। গবেষণার ক্ষেত্রে রিসার্চ ফেলোশিপ পাওয়া সম্ভব। তা দুই ধরনের হয়। প্রোজেক্ট ফেলোশিপ আর জুনিয়র রিসার্চ ফেলোশিপ পরীক্ষা পাশ করলে নেট (ন্যাশনাল এলিজিবিলিটি টেস্ট) ফেলোশিপ
পাওয়া যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের রিসার্চ এলিজিবিলিটি টেস্ট পাস করলে রেট ফেলোশিপ দেওয়া হয়।
শিক্ষকতার সুযোগ
শুধু গবেষণাই নয়, শিক্ষকতা করার সুযোগ রয়েছে। বিএসসি অনার্স পাস করা ছাত্রছাত্রীরাই যেহেতু এই কোর্স করার অগ্রাধিকার পায়, তাই তারা অনায়াসেই এ বিষয়ে এমএসসি ডিগ্রি নিয়ে স্কুলে ফিজিক্স পড়ানোর সুযোগ পেতে পারে। কলেজে স্নাতকের সিলেবাসে থাকা পরিবেশ বিজ্ঞানের অধীনে আবহাওয়া বিজ্ঞান সম্পর্কিত নানা বিষয়গুলিও পড়াতে পারে। তাই ইচ্ছে থাকলে শিক্ষকতা পেশাতেও এই কোর্স করা পড়ুয়ারা যেতে পারে।
ভাল আবহাওয়াবিদ হতে চাইলে দেশ-বিদেশের আবহাওয়া সংক্রান্ত নানা বই, জার্নাল, ওয়েবসাইটে পাওয়া নতুন নতুন তথ্য সম্পর্কে জানার আগ্রহ থাকতে হবে। বিশ্ব উষ্ণায়নের যুগে আবহাওয়াবিদের মর্যাদা ক্রমেই ঊর্ধ্বমুখী।
হাতের মুঠোয় কাজ
আবহাওয়া বিজ্ঞান নিয়ে পড়লে চাকরি নিশ্চিত। এখান থেকে পাস করে অনেকেই আবহাওয়া দপ্তর থেকে শুরু করে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীতে কাজে যোগ দিয়েছে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জানিয়েছেন, এ রাজ্যে তো বটেই, আবহাওয়া বিজ্ঞান নিয়ে গবেষণার যেমন সুযোগ আছে, তেমনই দেশেই প্রচুর কাজের সুযোগ রয়েছে।