নব্যেন্দু হাজরা: মাথার উপরে গঙ্গা। আর নিচ দিয়ে মেট্রোয় চড়ে গঙ্গা পেরোচ্ছেন আপনি। এই অপেক্ষা আর বেশি দিনের নয়। কিছুদিনের। তবে গঙ্গার নিচ দিয়ে মেট্রো চড়ার অনুভূতি হতে চলেছে একেবারেই ভিন্ন। ভাবছেন মেট্রোয় চড়ার সময় বাইরে জল দেখা যাবে কি না! দেখা না গেলেও অনুভূতিটা অনেকটা সেরকমই হবে। গঙ্গার নিচ দিয়ে মেট্রো চড়ে যাওয়ার সময় আপনার পাশে খেলে বেড়াবে মাছ। মেট্রোর ভিতর বসে মনে হবে বাইরে বইছে স্রোত। ভিতরে হবে নদীর জলরাশির শব্দ। যেতে যেতে মনে হবে, গঙ্গা চিরে মেট্রোয় চড়ে একপার থেকে অন্যপারে যাচ্ছেন আপনি।
হাওড়া স্টেশন থেকে মহাকরণ স্টেশনে ঢোকার মাঝে গঙ্গার নিচের ৫২০ মিটার অংশ যাতায়াতের সময় এই ভিন্ন অনুভূতি মিলবে। যা পেরোতে সময় লাগবে ৪৫ সেকেন্ড। যাত্রীরা হুঁশ করে পেরিয়ে যাবেন গঙ্গা। ঘন নীল আলোয় সজ্জিত হবে সুড়ঙ্গ। ট্রেন যাওয়ার সময় মনে হবে জলের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি। অদ্ভুত বাদ্যযন্ত্রের শব্দ হবে। একেবারে রাজকীয় অনুভূতি। সুড়ঙ্গের অন্যান্য অংশে সাদা আলো থাকলেও পশ্চিম দিকের হাওড়ার ডিআরএম ভবন সংলগ্ন অংশ থেকে পূর্ব দিকের স্ট্র্যান্ড রোড পর্যন্ত অংশের জোড়া সুড়ঙ্গে ওই নীল রঙের আলো বসেছে। থাকছে সাদা আলোও। পৃথিবীর বহু দেশে সমুদ্রের জলের গভীরের দুনিয়া দেখাতে স্বচ্ছ কাচের সুড়ঙ্গ রয়েছে। সেখানে এক বার ঢুকে পড়লে চার পাশ বিরাট অ্যাকোয়ারিয়ামের মতো মনে হয়। টিকিট কেটে অনেকেই সে সব দেখতে যান। এখানেও তেমনটাই হতে চলেছে।
[আরও পড়ুন: মাঝ আকাশে উড়ে গেল বিমানের দরজা! আলাস্কা এয়ারলায়েন্সের ভিডিও দেখলে শিউড়ে উঠবেন]
ইতিমধ্যেই জলস্তরের থেকে ৩৩ মিটার নিচে তৈরি হয়েছে দুই সুড়ঙ্গ। আর সেখান দিয়েই ছুটবে মেট্রো। কিন্তু এতদিন বোঝার উপায় ছিল না, মানুষ গঙ্গার নিচ দিয়ে মেট্রোয় চড়ে যাওয়ার সময় কোনও আলাদা অনুভূতি পাবেন কিনা! মেট্রো জানাচ্ছে, হ্যাঁ পাবেন। মনে হবে একেবারে অ্যাকোয়ারিয়ামের মধ্যে দিয়ে মেট্রোসফর করছেন আপনি। মেট্রো সফরে যাত্রীদের ওই রোমাঞ্চ আরও ঘনীভূত করতেই এই আলোর সাহায্য নেওয়া হচ্ছে। সুড়ঙ্গের যে অংশ নদীর নিচ দিয়ে যাবে, ওই অংশের জন্য ব্যবহার করা হয়েছে নীল আলো। সেই সঙ্গে স্রোতের শব্দ হবে । পাশে খেলে বেড়াবে আলোর মাছ। মোট ৪০টি আলোর মাছ থাকছে ওই ৪৫ সেকেন্ডের যাত্রাপথে।
সুড়ঙ্গে জল নেই, বরং গঙ্গার পলিমাটি রয়েছে সেই জায়গায়। নদীখাতের গভীরে ১৩ মিটার গভীর পলিমাটির মধ্যে দিয়ে সুড়ঙ্গ গিয়েছে। কিন্তু গঙ্গার নিচের সেই অংশেই অত্যাধুনিক রূপ দিতে চলেছে মেট্রো কর্তৃপক্ষ। ফিলিপস এই আলোর কাজ করেছে। ইতিমধ্যেই একবার কমিশনার অফ রেলওয়ে সেফটি এই লাইন পরিদর্শনে এলেও কাজ দেখে কিছুটা ক্ষুব্ধ হয়ে ফিরে যান তাঁরা। তবে এখনও কিছু কাজ বাকি রয়েছে। সেই কাজ শেষের পর আবারও আসবে সিআরএস। তারা ছাড়পত্র দিলেই হাওড়া ময়দান থেকে এসপ্ল্যানেড চালু হয়ে যাবে গঙ্গার নিচ দিয়ে মেট্রো পরিষেবা। মেট্রো রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক কৌশিক মিত্র বলেন, ‘‘গঙ্গার নিচ দিয়ে মেট্রোয় চড়ে যাওয়ার সময় যাত্রীদের অন্যরকম একটা অনুভূতি দেওয়ার জন্যই মেট্রোর এই পরিকল্পনা।’’
দেখুন ভিডিও: