চারুবাক: যাই হোক, অবশেষে হরনাথ চক্রবর্তী তার নিজস্ব ঘরানা থেকে বেরিয়ে চলতি বাংলা সিনেমার পথে হাঁটলেন। আগের দুটি ছবি ‘ডাল বাটি চুরমা’ এবং ‘ওহ! লাভলি’ ফর্মুলা থেকে বেরিয়ে এবার হাত দিলেন গোয়েন্দা গল্পে। না কোন সাহিত্যিকের লেখা গল্প নয়, সম্ভবত বিদেশি কোন ছায়াছবি প্রেরণা থেকে এই নতুন ছবি ‘তারকার মৃত্যু’র (Tarokar Mrityu) বীজ সংগ্রহ করেছেন পরিচালক।
গোয়েন্দা এবং রহস্য মেশানো গোয়েন্দা গল্প। সুতরাং গল্পের শুধুমাত্র আইডিয়া টুকু জানিয়ে রাখি। এখানে ছবির প্রধান দুটি চরিত্র একজন লেখক যিনি শুধুই গোয়েন্দা কাহিনি লেখেন। আর আর গল্পের বীজ গড়ে ওঠে বাস্তব ঘটনা ও অভিজ্ঞতা থেকে। সেই লেখকের লেখা থেকে তৈরি হওয়া ছবি রজত জয়ন্তী উদযাপন করে। লেখক (ঋত্বিক,) তার নতুন গোয়েন্দা কাহিনি লেখার জন্য স্ত্রীকে (পার্ণো) নিয়ে আসে কালিম্পংয়ের এক নির্জন বাংলোয়। সেখানেই এই কাহিনির বাকি ঘটনা। লেখকের হারিয়ে যায়। বিহ্বল লেখক স্থানীয় থানায় রিপোর্ট করলে উপস্থিত হন ঝানু গোয়েন্দা রাজেন (রঞ্জিত মল্লিক)। লেখকের স্ত্রী কি খুন হয়েছেন, নাকি তার সেই মৃত্যুর রহস্যের মধ্যে লুকিয়ে রয়েছে আরো খুনের সূত্র? এই প্রশ্ন ঘিরেই পদ্মনাভ দাশগুপ্তের চিত্রনাট্য বেশ মজা করেই রহস্যের শেষ প্রান্তে পৌঁছে দিয়েছে দর্শকদের।
[আরও পড়ুন: গোটা দেশে ৬০০ কোটি পার করল ‘জওয়ান’, শুধু বাংলা থেকে কত টাকা আয় করলেন শাহরুখ?]
দর্শককে বিভ্রান্ত করার জন্যই কখনও মনে হয় লেখকই খুনি আবার কখনও আঙ্গুল যায় বাড়ির চাকর কিংবা পুলিশের দিকে। এমনকী খোদ গোয়েন্দা মশাইও দর্শকের কাছে সন্দেহের উর্দ্ধে থাকেন না। হরনাথের কৃতিত্ব, পদ্মনাভর সুগ্রথীত চিত্রনাট্যকে সহজ সরল ভাবেই ক্যামেরায় তুলে আনা। সেই কাজটি অভিজ্ঞ হাতেই করেছেন। বিশেষ করে গোয়েন্দা রাজনের চরিত্রটিতে কমেডির ছোঁয়া লাগিয়ে সাধারণ দর্শকের কাছে জটিলতার সৃষ্টি না করে রহস্য বজায় রেখেছেন। কীভাবে লেখকের কম্পিউটারের পাসওয়ার্ড জানলেন রাজেন, কিংবা ভুতুড়ে ছায়া মুখের মহিলাটি কে – লেখকের স্ত্রী, নাকি তার নতুন বান্ধবী? এসব নিয়ে কূট প্রশ্ন না তুলে স্রেফ হলঘরের আরামে বসে রঞ্জিত মল্লিক, ঋত্বিক চক্রবর্তীর মজারু ঘরানার অভিনয় চাক্ষুষ করলেই টিকিটের পয়সা উসুল!
নবীন সুরকার শান্তনু বসুর সুরে দুটি গানের ব্যবহার রহস্যের পরিবেশ গড়ে দেয়। দুটি রবীন্দ্রসঙ্গীত ছবির সিচুয়েশনকে অনুমাত্রায় নিয়ে যায়। হ্যাঁ, স্বাভাবিক গোয়েন্দা ছবির মতো ক্ষিপ্র গতি, ক্যামেরার কেরামতি বা আবহর জগঝম্প এই ছবিতে নেই। আবার সিনেমার আধুনিক ব্যকরণের ব্যবহারও অনুপস্থিত। হরনাথ তাঁর নিজস্ব ঘরানাতেই খেলেছেন। কিন্তু আজকের দর্শক যে পুরনো ঘরানাকে তেমন পছন্দ করবে তার গ্যারান্টি কোথায়! দর্শকের দৃষ্টিভঙ্গিও বদলেছে অনেক – সেটা মনে রেখে ছবি করতে না পারলে আজকের দর্শকও মুখ ঘুরিয়ে নেবে – এই সত্যিটুকু মানতেই হবে।
সিনেমা – তারকার মৃত্যু
অভিনয়ে – রঞ্জিত মল্লিক, পার্ণো মিত্র, ঋত্বিক চক্রবর্তী, অনিন্দ্য পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রিয়াঙ্কা মণ্ডল, শাশ্বতী গুহঠাকুরতা, সোহম মজুমদার প্রমুখ
পরিচালনায় – হরনাথ চক্রবর্তী