সোমনাথ রায়, নয়াদিল্লি: পারিবারিক একটি ঘটনা, যাকে মিরাকল বললেও অত্যুক্তি হয় না, সেটাই বুনে দিয়েছিল অটুট বিশ্বাসের বীজ। আর সেই বিশ্বাসই অধিকাংশ দিন প্রয়াত প্রাক্তন মন্ত্রী অরুণ জেটলিকে লাইফ সাপোর্ট সিস্টেমে রাখতে বাধ্য করেছিল। শনিবার দুপুরে দিল্লির এইমস থেকে যখন তাঁর মরদেহ বের করা হচ্ছে, তখন ভিড়ের অন্দরে কান পেতে এই কাহিনিই শোনা গিয়েছে।
[আরও পড়ুন: যুবক অরুণের ভিন্ন রূপ, কলেজ জীবনে মেয়েদের চোখে ছিলেন ‘হিরো’]
৯ আগস্ট, গুরুতর অসুস্থ হয়ে দিল্লির এইমসে ভরতি হন অরুণ জেটলি। এর আগেও কিডনির সংক্রমণ তাঁকে ভুগিয়েছে বিস্তর। পরে বাসা বেঁধেছিল ক্যানসারও। বিদেশে চিকিৎসা চলেছে অনেকদিন। এরপর এইমসের চিকিৎসা পর্ব শুরু হয়। তৈরি হয় মেডিক্যাল বোর্ড। ১০ তারিখ থেকে ভেন্টিলেশনে ছিলেন। তারপর ১৬ আগস্ট থেকে জেটলিকে লাইফ সাপোর্ট সিস্টেমে রাখা হয়। মেডিক্যাল বোর্ড নিয়মিত তাঁকে পর্যবেক্ষণে রাখত। সূত্রের খবর, দিন দুয়েক আগেই চিকিৎসকরা তাঁর পরিবারের সদস্যদের ডেকে বলেন, লাইফ সাপোর্ট সিস্টেমে যে পরিস্থিতিতে জেটলি রয়েছেন, তাতে উন্নতির তো সম্ভাবনা নেইই। উলটে তাঁর বাঁচার আশা প্রতিদিন একটু একটু করে ক্ষীণ হচ্ছে। কাজেই, লাইফ সাপোর্ট সিস্টেমে জেটলিকে রাখা পুরোপুরি অপ্রয়োজনীয়। এমন অপ্রিয় সত্য জানিয়ে চিকিৎসকরা তাঁদের কাছে জানতে চান, তাহলে কি লাইফ সাপোর্ট সিস্টেম খুলে দেওয়া হবে।
কিন্তু চিকিৎসকদের কাছে এসব কথা শুনেও তা গুরুত্ব দিতে চাননি জেটলির স্ত্রী, ছেলে। তাঁদের স্মৃতিতে তখনই ধরা দিয়েছিল মৃত্যুর মুখ থেকে এক আত্মীয়ের ফিরে আসার ঘটনা। তাঁরা সেই কাহিনির কথা উল্লেখ করে জানান, জেটলির পরিবারের এক আত্মীয় নাকি দীর্ঘদিন এমন লাইফ সাপোর্ট সিস্টেমে ছিলেন। তারপর আচমকাই একদিন প্রাণের অস্তিত্ব পাওয়া যায় তাঁর শরীরে। বিস্মিত হয়ে যান সকলেই। সেই ঘটনাই জেটলি পরিবারের সদস্যদের মনে আশা জাগিয়ে তুলেছিল। তাই এইমসের চিকিৎসকদের তাঁর স্ত্রী ও ছেলে জানান, যতদিন তিনি লাইফ সাপোর্ট সিস্টেমে থাকবেন, ততদিনই যেন তাঁকে রাখা হয়। হয়ত তাঁরাও আশা করেছিলেন যে আত্মীয়ের মতো মিরাকল ঘটে যাবে তাঁদের প্রিয়জনের ক্ষেত্রেও। কিন্তু সেই আশা দুরমুশ করে শনিবার দুপুরে লাইফ সাপোর্ট সিস্টেমের কাজ শেষ করে দিয়ে গিয়েছেন অরুণ জেটলি।
[আরও পড়ুন: প্রয়াত অরুণ জেটলি, জানুন অর্থমন্ত্রী হিসাবে তাঁর ৫ সাফল্য]
এইমসের চারপাশে এই কাহিনি শুনতে শুনতে অনেকেরই মনে পড়ে যাচ্ছিল আরেকজনের কথা। প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি। বছরের পর বছর তিনি কোমায় ছিলেন। মাঝেমধ্যেই সাড়া দিতেন। আশা জাগত ঘনিষ্ঠজনদের মনে। আর সেই আশা থেকেই তাঁরা এই বিশ্বাস ধরে রেখেছিলেন যে শেষপর্যন্ত মৃত্যুকে হারিয়ে তিনি জীবনের পথে ফিরবেন। কিন্তু অন্তিমত যা হওয়ার, সেটাই হয়েছে। পৃথিবী ছেড়ে চলে গিয়েছেন প্রিয়রঞ্জন। লাইফ সাপোর্ট সিস্টেম মৃত্যু বিলম্বিত করে, কিন্তু রুখে দেওয়ার মতো ক্ষমতা যে নেই, তা ফের বুঝিয়ে দিল জেটলির জীবনাবসান।
The post লাইফ সাপোর্ট সিস্টেম থেকে ফিরেছিলেন আত্মীয়, ‘মিরাকল’-এ অটুট ভরসা ছিল জেটলির স্ত্রীর appeared first on Sangbad Pratidin.