সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: সাম্প্রতিককালে দিল্লির জাহাঙ্গিরপুরী-সহ একাধিক রাজ্যে সাম্প্রদায়িক অশান্তি ছড়িয়েছে। যার পর চলছে ধরপাকড়, পুলিশি তদন্ত। বিরোধীরা এই ঘটনায় গেরুয়া শিবিরের দিকে আঙুল তুলছে। এমন আবহাওয়ার সম্পূর্ণ উলটো চিত্র ধরা পড়ল উত্তরপ্রদেশের (Uttar Pradesh) একটি কারাগারে। সেখানে পবিত্র রমজান মাসে মুসলিম (Muslim) বন্দিদের ইফতারে যোগ দিলেন হিন্দুরা (Hindu)। এমনকী বারাবাঙ্কি জেলের (Barabanki Jail) বেশ কিছু হিন্দু বন্দি রমজানের (Ramjan) রীতি মেনে উপবাস করছেন।
দেশে যে আবহাওয়াই থাক বারাবাঙ্কি জেলের এই সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতি কিন্তু বহু পুরনো। গত ৫০ বছরের রীতি। জানিয়েছে কারা কর্তৃপক্ষ। সাজাপ্রাপ্ত বহু হিন্দু বন্দি এক সেলে থাকা মুসলিম বন্দির সঙ্গে এক মাস ধরে রোজা পালন করেন। কারা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, জেলে এখন ১৪০০ বন্দি রয়েছেন। এদের মধ্যে মুসলিম বন্দির সংখ্যা ২৫০। এবার তাঁদের সঙ্গে পবিত্র রমজান মাসের যাবতীয় নিয়ম মেনে ১৫ জন হিন্দু রোজা পালন করছেন।
[আরও পড়ুন: বিচারব্যবস্থাকে জ্ঞান দিতে আসবেন না’, আবু সালেম মামলায় কেন্দ্রকে ভর্ৎসনা সুপ্রিম কোর্টের]
জেল সুপারিন্টেডেন্ট জানিয়েছেন, যে মুসলিম বন্দিরা শেরি ও ইফতারের সময় উপবাস করছেন, তাঁদের জন্য দুধ ও চায়ের ব্যবস্থা থাকছে। এছাড়াও যাঁরা উপবাস করছেন তাঁদের খাদ্য তালিকায় থাকছে ক্ষীর ও শিমুইয়ের পায়েস। সুপারিন্টেডেন্ট জানান, হিন্দু বন্দিরাও মুসলিমদের মতোই সারাদিন উপবাস করছেন, শেরিতে যোগ দিতে ভোর ৩টের সময় উঠছেন। সুপারিন্টেডেন্ট আরও বলেন, জেলে আমরা এই রীতি পালন করছি, কারণ এর ফলে বন্দিদের মধ্যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিকশিত হবে, অন্যদের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ গড়ে উঠবে। কিন্তু যাঁদের নিয়ে এত কথা, তাঁরা কী বলছেন?
[আরও পড়ুন: ‘পাকা রাস্তা, পানীয় জল চাই’, আরজি জানাতেই যুবককে চড় কংগ্রেস বিধায়কের]
চুরির দায়ে বন্দি রাকেশ কুমার। তিনি থাকেন আরেক বন্দি জাভেদ খানের সঙ্গে। রাকেশ এবার রোজা পালন করছেন। তিনি এবার জাভেদের সঙ্গে, গতবার সেলিমের সঙ্গে রোজা পালন করেছিলেন। কেন? বলেন, “আমরা একসঙ্গে থাকি। পরিবেশটা যাতে আপন হয়ে ওঠে, তাই রোজা মানি।” আরেক বন্দি হরেরাম বলেন, “জেলের এই রীতি ধর্মের ঊর্ধ্বে। এটা আমাদের সংস্কৃতি, ধর্মীয় একতার উদাহরণ। মুসলিমরা আলাদা তো কিছু নয়। ওরাও আমাদের অংশ।” ডাকাতির দায়ে জেলবন্দি দীনেশ কুমারের বক্তব্য, “রোজা পালন করলে শারীরিক সংযম তৈরি হয়। এটা ভাল অভ্যেস।” বারাবাঙ্কি জেলের কথা যাঁরাই জানছেন, তাঁরাই বলছেন, এই বন্দিদের কথা দেশের সব মানুষকে জানানো হোক। তাহলে হয়তো কিছুটা কমবে অকারণ অশান্তি!